Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

এতিমদের অভিভাবক হজরত আলী (রা.)

Icon

সৈয়দ এ. এফ. এম. মঞ্জুর-এ-খোদা

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ইসলামের ৪র্থ খলিফা আমিরুল মুমিনিন হজরত আলী (রা.)কে আমরা ‘আসাদুল্লাহ্’ তথা ‘আল্লাহর সিংহ’ হিসাবেই জানি। তার পবিত্র নামটি শুনলেই যেন মনের পর্দায় ভেসে ওঠে খায়বরের বিখ্যাত কামুস দুর্গের ৮০০ মণ ওজনের লোহার ফটক উপড়ে ফেলে ঢাল বানিয়ে যুদ্ধ করার মহাকাব্যিক দৃশ্য কিংবা খন্দকের যুদ্ধে তৎকালীন আরবের শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা আমরকে ধরাশায়ী করার ঐতিহাসিক ঘটনা। কিন্তু আমরা কজনইবা জানি, কিংবদন্তিতুল্য শৌর্য বীর্যের অধিকারী এ মহামানব দয়া, ভালোবাসা, ক্ষমা ও মানবিকতায় কুসুমের মতো কোমল ছিলেন! বিশেষ করে এতিম শিশুদের প্রতি শেরে খোদা হজরত আলী (রা.)-এর অগাধ মমতা ছিল। পিতার স্নেহছায়া থেকে বঞ্চিত এতিম শিশুরা সমাজে অত্যন্ত নিগৃহীত ও নিপীড়িত অবস্থায় বেড়ে ওঠে। এ কারণে শেরে খোদা হজরত আলী (রা.) এতিম শিশুদের সর্বদা পরম ভালোবাসায় আগলে রাখতেন। তিনি তাদের নিজ হাতে খাবার খাওয়াতেন, অনেক সময় এতিম শিশুদের আনন্দ দেওয়ার জন্য তিনি নিজ পিঠে চড়িয়ে তাদের সঙ্গে খেলা করতেন। খলিফা হজরত আলী (রা.) তার শাসনামলে একটি বিশেষ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ‘আবা আল আয়তাম’ অর্থাৎ ‘এতিমদের পিতা’ উপাধিতে ভূষিত হন এবং এ ঘটনার পর থেকেই তিনি কুফার সব এতিম শিশুর ভরণপোষণের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ঘটনাটি ছিল এরূপ-

একদা খলিফা হজরত আলী (রা.) কুফার রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি দেখতে পেলেন, একটি শিশু রাস্তার কোণে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে, আর অদূরেই কিছু বাচ্চা খেলাধুলা করছে। এ দৃশ্য দেখে হজরত আলী (রা.)-এর মনে কৌতূহলের সৃষ্টি হলো। তিনি শিশুটির কাছে গিয়ে তার চোখ থেকে অশ্রু মুছে দিলেন এবং তার গালে স্নেহচুম্বন দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে বালক! তুমি কাঁদছ কেন?’ শিশুটি কান্নাভেজা কণ্ঠে বলল, ‘আমি অন্যান্য বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার বাবা নেই বলে তারা আমাকে খেলায় নেয়নি, বরং আমাকে খুব অপমান করেছে!’ এ কথা শুনে খলিফার কোমল হৃদয় শিশুটির প্রতি মায়া ও দরদে ভরে উঠল। তিনি পরম মমতায় শিশুটিকে বুকে টেনে নিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘কেঁদ না বাবা! কে বলেছে তোমার বাবা নেই? আজ থেকে আমিই তোমার বাবা! যাও, ওদেরকে গিয়ে বলে এসো-আমার বাবা আলী ইবনে আবু তালেব!’ আমিরুল মুমিনিন হজরত আলী (রা.)-এর কথা শুনে এতিম শিশুটির মনের সব দুঃখ-কষ্ট নিমেষেই দূর হয়ে গেল এবং তার মুখে হাসি ফুটে উঠল। সে তৎক্ষণাৎ বাচ্চাদের কাছে ছুটে গিয়ে আমিরুল মুমিনিনকে দেখিয়ে বলল, ‘তোমরা না বলেছিলে আমার বাবা নেই। ওই যে দেখ, আমার বাবা আলী ইবনে আবু তালেব!’ এ কথা শুনে বাচ্চারা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল। অতঃপর হজরত আলী (রা.) এতিম শিশুটির হাত ধরে তাকে কুফার বাজারে নিয়ে গেলেন। তিনি একটি উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন-

‘হে কুফাবাসী! শোন! আজ থেকে এ এতিম শিশুটির পিতা আমি। তার ভরণপোষণের সব দায়িত্ব আমার। শুধু এ শিশুটিই নয়, যত এতিম শিশু আছে, এখন থেকে তাদের সবার পিতা আমি আলী ইবনে আবু তালেব!’

খলিফা হজরত আলী (রা.)-এর এরূপ উদারতায় কুফাবাসীরা অভিভূত হয়ে গেল। তারা সবাই হজরত আলী (রা.)-এর ভূয়সী প্রশংসা করতে লাগল। মূলত, এ ঘটনার পর থেকেই সবাই আমিরুল মুমিনিন খলিফা হজরত আলী (রা.)কে ‘আবা আল আয়তাম’ অর্থাৎ ‘এতিমদের পিতা’ উপাধিতে সম্বোধন করত।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম