শিশুশ্রম প্রতিরোধে ইসলাম
মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য ইসলামে শিশুশ্রম পরিত্যাজ্য। শিশুশ্রমের ফলে তাদের মননশীলতা ও দৈহিক ক্ষতি হয়। আজ যারা শিশু, ভবিষ্যতে তারাই যুবক। তারাই সুশোভিত ও গৌরবময় ভবিষ্যতের পথনির্দেশক। আজকের শিশুর মাঝেই লুকিয়ে আছে ভবিষ্যতের সুন্দর পৃথিবী। মহান আল্লাহ বলেন, ‘ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা।’ (সুরা কাহফ, আয়াত ৪৬।) নবীজি (সা.) অবহেলিত শিশুদের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান, চিকিৎসা ও বিনোদনের যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ধর্মে-কর্মে যথার্থ মানুষ হিসাবে গড়ে তুলেছিলেন। তিনি শিশুদের প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। শিশুদের প্রতি কোমল ব্যবহার নিজে করেছেন এবং অন্যদের সে ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন।
অথচ আধুনিক যুগে শিশুশ্রমিকরা কতই না অবহেলিত! রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শিশুদের স্নেহ করে না, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ-৪৯৪৩।) সমাজ জীবনে বাস্তবতার নিরিখে শিশুশ্রম পুরোপুরি বন্ধ করা না গেলেও কম ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় তাদের নিয়োগ করা যেতে পারে। পাশাপাশি পাড়াশোনার সুযোগও রাখতে হবে। দারিদ্র্যের কারণে শ্রম বিক্রি করতে যাওয়া শিশুদের জানাতে ও বোঝাতে হবে যে তাদের দারিদ্র্য দূর করার মোক্ষম হাতিয়ার হলো শিক্ষা।
ইসলামের বিধান হলো, পিতা অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের উপার্জনের জন্য বাধ্য করতে পারবেন না। তিনি উপার্জন করতে পারলে করবেন, নতুবা ঋণ করে তাদের খরচের ব্যবস্থা করবেন, যেন তারা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক হলেও শিক্ষা চলাকালে পিতা তাদের খরচ চালিয়ে যাবেন। (ফাতাওয়া আলমগীরী : ১/৫৬১, রদ্দুল মুহতার : ৫/৩৪১।)
হতদরিদ্র পরিবার সংসারের ব্যয় নির্বাহে অসমর্থ হয়ে বা অভিভাবকদের কর্মহীনতার কারণে মা-বাবার জায়গায় শিশুরা অর্থ উপার্জনে অগ্রসর হয়। তাই শিশুশ্রম বন্ধ করতে না পারলে যতটা সম্ভব শিশুর কর্মস্থল ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ করা প্রয়োজন। ইসলামের শ্রম নীতিমালা অনুসারে কাউকে তার সামর্থ্যরে বাইরে দায়িত্ব প্রদান করা সমীচীন নয়। সামর্থ্যরে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান কোনো সময় বড় ধরনের জুলুমের পর্যায়ে চলে যায়। তাই পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ কারও ওপর এমন কোনো কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না, যা তার সাধ্যাতীত।’ (সূরা আল-বাকারা-২৮৬।)
