জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ ও তামাক চাষ
হুমকির মুখে ৬৪ প্রজাতির মাছ
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ আর তামাক চাষ-এই তিনের প্রভাবে দেশীয় মাছ উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে কমছে। দেশে গত কয়েক দশকে দেশীয় প্রজাতির মাছ বাজার থেকে ‘প্রায় নাই’ হয়ে গেছে। বিলুপ্ত হওয়ার পথে দেশীয় প্রায় ২৫৩ প্রজাতির মাছ। ইতোমধ্যে প্রায় ৫৫ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) সর্বশেষ হিসাব, দেশে মোট মাছের প্রায় ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ বা ৬৪ প্রজাতি হুমকির মুখে রয়েছে। এসব মূলত মিঠা পানির মাছ।
বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট সূত্রে জানা যায়, তামাক চাষের ফলে ব্যাপক দূষণ হচ্ছে। নদী-নালায় মাছের বংশবৃদ্ধি এবং মাছের ডিম উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে কমছে। বিশেষ করে হালদার পাড়ে তামাকচাষ নিষিদ্ধের উদ্যোগ নেওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতার কারণে নিষিদ্ধ করা যাচ্ছে না।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদা অববাহিকার মনিকছড়ি এলাকায় শত শত একর জমিতে তামাক চাষের কারণে নদীতে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন চক্র হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। তামাক চাষে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি রাসায়নিক সার ব্যবহৃত হওয়ার পাশাপাশি তামাক গাছের উচ্চিষ্টাংশ বৃষ্টির পানির ঢলের মাধ্যমে নদী-নালায় পড়ছে। এ বিষের মাধ্যমে সার্বিক মৎস্য সম্পদকে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
প্রায় বিলুপ্ত হওয়া মাছের মধ্যে কিছু মাছ কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে উৎপাদন করা হচ্ছে।
কৃত্রিম উপায়ে উৎপাদিত মাছ স্বাদে-গন্ধে মানুষের মন জয় করতে পারছে না। আইইউসিএনের তথ্য, সর্বশেষ কোনো একটি প্রজাতির মাছের দেখা পাওয়ার পর পরবর্তী ২৫ বছরে যদি সেই প্রজাতির অস্তিত্বের কোনো প্রমাণ না পাওয়া যায়, তাহলে সেটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। সূত্র বলছে, ময়মনসিংহ অঞ্চলে নান্দিল নামের এক সময় একটি মাছ দেখা গেলেও, সেই মাছ বিগত প্রায় ২০ বছর ধরে চোখে পড়ছে না। সিলেট অঞ্চলের পিপলার দেখা মেলে না প্রায় দুই যুগ।
মঙ্গলবার রাতে কাওরান বাজারে মাছ কিনতে আসেন মেহেরুন নাহার পান্না, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পড়াশোনা করেছেন। তিনি বলেন, বাজার ঘুরে দেশীয় মাছ পাওয়া যায় না। আবার চাষের মাছ দেশীয় বলে দেদার বিক্রি হচ্ছে। কাওরান বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী মিলন মিয়া বলেন, এখনো বাজারে দেশীয় মাছের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু দেশীয় মাছ নেই, চাষের মাছকেই দেশীয় হিসাবে বিক্রি করতে হচ্ছে। রং ব্যবহার করে ক্রেতাদের ভাঁওতায় ফেলা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ওয়াহিদা হক যুগান্তরকে বলেন, দেশি মাছ পাওয়াই যাচ্ছে না, কৃত্রিম ভাবে যা চাষ হচ্ছে, সেগুলো দেশি মাছ নয়। খাল-বিলে এখনো যতটুকু দেশীয় মাছ পাওয়া যায়, তাও দিন দিন বিলুপ্ত হবে।
দেশীয় মাছ বাঁচাতে হলে, ভরাট ও দূষণ শূন্যে আনতে হবে। কৃত্রিম চাষে সংশ্লিষ্টদের নজর থাকলেও দেশীয় মাছ রক্ষায় নজর নেই। নদীতে মশারি জালের ব্যবহার, নদীর বুক অবৈধ ভাবে আটকে মাছের চলাচলের পথ নষ্ট করা, নদী-খাল-বিলের পানিতে বিষ মিশিয়ে মাছ ধরা-এসবের কারণে ছোট মাছ-দেশীয় মাছের সংখ্যা কমছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক এক কর্মকর্তা জানান, সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কিংবা মন্ত্রণালয়ের নদীদূষণ রোধে কোনো কার্যক্রমই নেই। তাছাড়া সুন্দরবনসহ বিভিন্ন নদী-নালায় ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচলে পানি দূষিত হচ্ছে। কলকারখানার রাসায়নিক তো রয়েছেই। এতে মাটির উপকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হচ্ছে, ফলে ফসলের ফলনও কমছে। দেশীয় মাছও হারিয়ে যাচ্ছে।

