Logo
Logo
×

শেষ পাতা

আজ বিশ্ব সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস

৯৫ শতাংশ দৃষ্টিহীন ঘরে বাইরে বঞ্চনার শিকার

শিপন হাবীব

শিপন হাবীব

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

৯৫ শতাংশ দৃষ্টিহীন ঘরে বাইরে বঞ্চনার শিকার

ফাইল ছবি

দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ দৃষ্টিহীন ঘরে-বাইরে বঞ্চনার শিকার। দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ প্রতিবন্ধী। এর মধ্যে ৫ লাখের বেশি শতভাগ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা খেলাধুলার সুযোগও নামেমাত্র। মাসিক কিংবা এককালীন ভাতা ৫-৬ গুণ (৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার) বাড়ানোর দাবি উঠলেও তার বাস্তবায়ন নেই। এমন বাস্তবতার মধ্য দিয়েই প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ‘বিশ্ব সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস’ পালিত হচ্ছে আজ (১৫ অক্টোবর)। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘সাদাছড়ির আধুনিকায়ন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উন্নয়ন’।

জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ দেবনাথ যুগান্তরকে বলেন, প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়ানোর বিকল্প নেই। দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ১০০ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীকে ৫ হাজার টাকা করে এককালীন আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে। এছাড়া পুরো বছরের জন্য অফিস খরচ, বেতনভাতাসহ ১২ ধরনের প্রতিবন্ধীর উন্নয়নে ৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক অর্থ চলে যায় অফিস ও বেতনসহ ভাড়ার পেছনে। বাকি টাকা প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে খরচ হয়। ১২ ধরনের প্রতিবন্ধীদের মধ্যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে ৪ কোটি টাকারও কম খরচ করা হয়। সারা দেশে ১০৩টি সেন্টার রয়েছে, যেখানে ৮০০ লোকবল কাজ করে। ৭৪টি স্কুল আছে-শিক্ষক বেতন, স্কুলের ভাড়াসহ সব কিছুই প্রদান করতে হয়, যা নামে মাত্র।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা নিজেদের অধিকার বাস্তবায়নে বছরের পর বছর ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। লায়নস ইন্টারন্যাশনালের হিসাব মতে, বিশ্বে ২৮ কোটি ৫০ লাখ মানুষ পুরোপুরি ও আংশিকভাবে চোখে দেখে না। এসব দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী চলাচলের জন্য হাতে সাছাছড়ি ব্যবহার করে থাকে। নিজেদের নিরাপত্তায় সড়ক ও অন্যান্য স্থানে চলাচলের সুযোগ করে দেওয়ার প্রতীক হিসাবে সাদাছড়ির ব্যবহার হয়ে থাকে। ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য এই দিবসটি পালন শুরু হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশে প্রায় ৮-১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী রয়েছেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, দেশে ৩৬ লাখ প্রতিবন্ধী রয়েছেন-যার মধ্যে প্রায় ৫ লাখ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। সাদাছড়ি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বা যাদের সমস্যা আছে তারা ‘প্রতীক’ হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। হাতে ছড়ি থাকলে অন্যরা বুঝতে পারেন যে, তাদের বিশেষ সাহায্য দরকার। সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির মতে, অন্ধদের মধ্যে বেশির ভাগ অল্পবয়স্ক।

সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি সূত্রে জানা যায়, দেশে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ কম-বেশি অন্ধ। প্রতিবছর এর সঙ্গে নতুন করে যোগ হচ্ছে ৪০ হাজার। প্রতি বছর গড়ে মাত্র ৫০টি কর্নিয়া সংগ্রহ করছে এ সমিতি। এভাবে চলতে থাকলে দেশের কর্নিয়াজনিত অন্ধত্ব দূর করতে প্রায় ৬ হাজার বছর সময় লাগবে।

১৯৮৪ সালে সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি ও সন্ধানী জাতীয় চক্ষুব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। মরণোত্তর চক্ষুদান এবং মৃত্যুর পরও মৃত ব্যক্তির বৈধ অভিভাবকরা কর্নিয়া দান করতে পারেন। এ পর্যন্ত ৩ হাজার মানুষকে দানকৃত চক্ষু লাগানো হয়েছে, সিরিয়াল অনুযায়ী আরও ৩ হাজার মানুষ অপেক্ষা করছে।

সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির সমন্বয়ক জানান, দেশে দৃষ্টিহীনদের মধ্যে যাদের আলো দেখার সক্ষমতা আছে, কেবল তাদেরই কর্নিয়া স্থাপন করা যায়। কোনো ধর্মেই চক্ষুদান নিষেধ নেই-যে কোনো মানুষ চক্ষুদান করতে পারেন।

জাতীয় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সংস্থার মহাসচিব অ্যাডভোকেট মো. আইউব আলী হাওলাদার যুগান্তরকে বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের মধ্যে শিক্ষার হার নামেমাত্র। যেসব প্রতিবন্ধী উচ্চ বংশে ধনী পরিবারে জউন্মোগ্রহণ করছে, সেসব শিশু শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু ৯৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বয়স্ক প্রতিবন্ধীরা নিজ ঘরেই প্রতিনিয়ত বঞ্চনার-নির্র্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ঘরে-বাইরে নিজেদের অধিকার পাচ্ছেন না। ভিক্ষা করে জীবন চালাতে হচ্ছে অনেককে। দেশে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের প্রকৃত সংখ্যাও এখনো নিরূপণ করা হয়নি।

জানা যায়, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের মধ্যে অর্ধেকই নারী ও কন্যাশিশু। এদের মধ্যে সচেতনতার অভাব, লজ্জা ও সংকোচ রয়েছে। রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরের বাসিন্দা কামরুন্নাহার বেলী। বেলীর ছেলে, স্বামী-সবাই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। ছেলে-স্বামী সাদাছড়ি ব্যবহার করলেও তিনি করেন না। সাধারণ মানুষ কী বলবে, কী ভাববে-এমন ভাবনায় তিনি ঘর থেকেই বের হন না। অপরদিকে মোহাম্মদপুরের নাজনীন সুলতানা ও তার স্বামীও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। স্কুলজীবন থেকেই সাদাছড়ি ব্যবহার করছেন। দেশের ফুটপাতে গাছ, দোকানপাট, গর্ত সবই আছে। হাতে যখন সাদাছড়ি থাকে, তখন এসব বাধা অতিক্রম করে চলা যায়।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের শিক্ষাসহ জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে-ব্লাইন্ড এডুকেশন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (বার্ডো)। বার্ডোর নির্বাহী পরিচালক মো. সাইদুল হক যুগান্তরকে বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাদাছড়ি প্রয়োজন। তারচেয়ে বেশি প্রয়োজন তাদের জীবন উন্নয়নে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানসহ ৫টি মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। সরকার তাদের উন্নয়নে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন’ করেছে। এ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন হলেই প্রতিবন্ধী মানুষের কল্যাণ হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম