Logo
Logo
×

শেষ পাতা

গণ-অভ্যুত্থানের তথ্য সংগ্রহ

দলিল হিসাবে গণ্য হবে ফেসবুক দেওয়াল চিত্র

হামিদ-উজ-জামান

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দলিল হিসাবে গণ্য হবে ফেসবুক দেওয়াল চিত্র

সংগৃহীত ছবি

জুলাই অভ্যুত্থানের দলিল হিসাবে গণ্য হবে ফেসবুক তথ্য ও দেওয়াল চিত্র। অন্যান্য কার্যক্রমের সঙ্গে এ দুটি বিষয় নতুনভাবে অন্তর্ভুক্তি হবে। সেইসঙ্গে তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া সহজ করার চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সব ই-জিপি (ই-টেন্ডার)-এর পরিবর্তে সহজ পদ্ধতিতে ব্যক্তিপর্যায়ে দলিল গ্রহণের চিন্তা করা হচ্ছে। ফলে দেশের যে কোনো ব্যক্তির কাছে থাকা জুলাই অভ্যুত্থানের দুর্লভ অডিও-ভিজ্যুয়াল, দলিল বা ফুটেজ পাওয়া যাবে। গত ৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ‘দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান-২০২৪ এর অডিও ভিজ্যুয়াল দলিল সংগ্রহ সংরক্ষণ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) প্রথম সভা হয়। ওই সময় এসব সিদ্ধান্ত হয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আলী সরকার রোববার যুগান্তরকে বলেন, ‘ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) না থাকলেও নতুনভাবে দেওয়াল চিত্র এবং ফেসবুক থেকে দলিল সংগ্রহণ করা হবে। কেননা সবকিছুই বিস্তারিতভাবে ডিপিপিতে নাও থাকতে পারে। বাস্তবায়নপর্যায়ে কমিটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার রাখে। সভায় জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শের ভিত্তিতে সবাই একমত হয়েছেন। এটা একেবারেই নতুন সিদ্ধান্ত।’

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা। চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ। প্রকল্পের আওতায় মূল কার্যক্রম হচ্ছে-দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে গণ-অভ্যুত্থানের অডিও ভিজ্যুয়াল দলিল সংগ্রহের মাধ্যমে জাতীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা। এছাড়া গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের সাক্ষাৎকারভিত্তিক ২০০টি ডকুমেন্টারি তৈরি এবং একটি ইন্টারেক্টিভ ডিজিটাল আর্কাইভ তৈরি এবং গণ-অভ্যুত্থানের স্মারক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। এছাড়া একটি বিশেষায়িত ফ্লিম মিউজিয়াম স্থাপন এবং আর্কাইভিং ফ্যাসিলিটি ও প্রদর্শন ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা হবে।

পিআইসি সভায় জানানো হয়, প্রকল্পের অন্যতম কাজ হিসাবে গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক অডিও, ভিজ্যুয়াল দলিল সংগ্রহণের জন্য ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ১৫ কোটি টাকার সংস্থা রয়েছে। সরকারি ক্রয় পদ্ধতিতে দেশীয় উৎস হিসাবে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যম থেকে ৮০টি লটে সেবা ক্রয় করা হবে। এছাড়া বিদেশি উৎস হিসাবে বিভিন্ন গণমাধ্যম, সংবাদ সংস্থা, আর্কাইভ থেকে ২০টি লটে দলিলাদি সংগ্রহ করা হবে। সব স্থানীয় ক্রয় শতভাগ ইজিপি প্রক্রিয়ায় করার বিষয়ে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আছে। তবে ব্যক্তিগতপর্যায়ে সংরক্ষিত ইউনিক অডিও-ভিজ্যুয়াল দলিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে ই-জিপির সব নিয়মকানুনের বাধ্যবাধকতা করলে সংগ্রহ কাজ ব্যাহত হতে পারে। অভ্যুত্থানে গণমানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকায় যে কোনো পেশাজীবী বা ছাত্র-জনতার কাছে দুর্লভ অডিও-ভিজ্যুয়াল দলিল বা ফুটেজ থাকতে পারে। অথচ তারা ইজিপি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সক্ষমতা রাখেন না।

এ প্রসঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম সভায় বলেন, ‘ব্যক্তিপর্যায়ে অডিও, ভিডিও বা তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ই-জিপি প্রক্রিয়ার পরিবর্তে কীভাবে অপেক্ষাকৃত সহজ প্রক্রিয়ায় ক্রয় করা যায় সে বিষয়ে প্রচেষ্টা নিতে হবে। এক্ষেত্রে সার্বিক বিষয় ব্যাখ্যা করে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির (বিপিপিএ) মতামত গ্রহণ করা যেতে পারে।’

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) কামাল আকবর সভায় বলেন, ‘অভ্যুত্থানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম একটি অন্যতম প্রভাবক হিসাব কাজ করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন পোস্ট ও কমেন্ট আন্দোলনকে বেগবান করেছে। গণ-অভ্যুত্থানের দলিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে সেগুলো বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। এসব মতামতের বিভিন্ন সভায় সিদ্ধান্ত দিয়ে বলা হয়, অভিও-ভিজ্যুয়াল দলিল সংগ্রহ কাজ শিগগিরই শুরু করতে হবে। এছাড়া দলিল সংগ্রহে ক্রয় পদ্ধতি সহজ করতে বিপিপিএ’র মতামত গ্রহণ করতে হবে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থেকেও দলিল সংগ্রহ করতে হবে। এদিকে সভায় জানানো হয়, সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দেওয়াল চিত্র বা গ্রাফিতিগুলো গণ-অভ্যুত্থানের গুরুত্বপূর্ণ দলিল। নষ্ট হয়ে যাওয়ার আগেই সেগুলো দ্রুত সংগ্রহ করা প্রয়োজন।’

সভায় প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আলী সরকার জানান, প্রকল্পের আওতায় দলির সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও ডকুমেন্টারির কাজ সমন্বয়ে ডিপিপিতে ২ জন পরামর্শকের সংস্থান রয়েছে। এ খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা। পরামর্শক নির্বাচনের ক্ষেত্রে পিপিআর-২০০৮ এর বিধি ১০৫ অনুযায়ী গুণগতমান ও ব্যয়ভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। পরামর্শক সেবার কর্মপরিধি তৈরির কাজ চলছে। এছাড়া প্রকল্পের অন্যতম কাজ ২০০টি ডকুমেন্টারি তৈরি করা। এর জন্য ডিপিপিতে ৮ কোটি টাকার সংস্থান রয়েছে। চলতি অর্থবছরে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা রাখা আছে। গুণগতমান ও ব্যয়ভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতিতে ৪টি লটে ই-জিপিতে দর প্রস্তাব আহ্বান করা হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম