উত্তরা লেক উন্নয়নে ধীরগতি
দুই বছরের প্রকল্প ১২ বছরে
ফাইল ছবি।
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজধানীর উত্তরা লেক উন্নয়নে বিরাজ করছে চরম ধীরগতি। দুই বছরে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে প্রায় ১১ বছর। এখন আবারও এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে এটি বাস্তবায়নে মোট সময় লাগবে ১২ বছর। এক্ষেত্রে আগেই বেড়েছে খরচ। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬৫ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৬২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবটি আজ উঠছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পের কাজ এখনো বাকি রয়েছে। বাস্তবায়ন পর্যায়ে নানা জটিলতা ছিল। এখনো অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কাজ চলছে। এ অবস্থায় বাকি ৩৫ শতাংশ কাজ শেষ করতে বাধ্য হয়েই মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য একনেকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। এসব শর্ত মেনে বর্ধিত সময়ের মধ্যে অবশ্যই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। এরপর আর মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ থাকবে না।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ছিল উত্তরা লেক দখল হওয়া থেকে রক্ষা করা। এছাড়া লেকের চারপাশে হাঁটার পথ তৈরি, ডাইভারশন ড্রেনেজের মাধ্যমে দূষণ প্রতিরোধ করে পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো। পাশাপাশি মহানগরীর নান্দনিক সৌন্দর্য ও চিত্তবিনোদনের সুবিধা বাড়ানো। এসব কারণে উত্তরা লেক উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত দুই বছরে বাস্তবায়নের জন্য হাতে নেয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নানা জটিলতায় এর মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় পাঁচবারে সময় বাড়ানো হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ বছর। অর্থাৎ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। এর মধ্যেও কাজ শেষ করতে না পারায় ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পে ধীরগতির কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, অতিবৃষ্টি, ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা, প্রকল্পের কার্য এলাকায় দুটি মসজিদ থাকা, দিনে ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকা, জনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় প্যালাসাইডিং কাজে বিলম্ব এবং প্রকল্প এলাকায় বস্তি উচ্ছেদে সমস্যা থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৩৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ১১ কোটি ৮৮ লাখ এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তহবিলের ২৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য ধরা হয়। কিন্তু প্রকল্পের প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে দ্বিগুণেরও বেশি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৯০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের অঙ্ক একই থাকলেও বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিলের খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৭৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
প্রকল্পের আওতায় মূল কার্যক্রম হচ্ছে, ভূমি অধিগ্রহণ ও স্থাপনার ক্ষতিপূরণ, ওয়ার্কওয়ে নির্মাণ, মাটি ভরাট, তীর সংরক্ষণ, কাদা মাটি অপসারণ, বিদ্যুতায়ন, ইন্সপেকশন পিট নির্মাণ, বর্জ্য ফেলার বাস্ক স্থাপন ইত্যাদি।
আইএমইডি সূত্র জানায়, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবে ৮ ধরনের শর্ত দিয়েছে আইএমইডি। সংস্থাটি বলেছে, বর্ধিত মেয়াদের মধ্যেই কাজ শেষ করতে হবে। এরপর কোনোক্রমেই মেয়াদ বাড়ানো যাবে না এবং প্রকল্প শেষে পিসিআর (সমাপ্ত প্রতিবেদন) তিন মাসের মধ্যেই জমা দিতে হবে। এছাড়া লেক উন্নয়ন কাজ গুণগত মানসম্পন্ন যাতে হয় এবং স্থায়িত্ব যাতে বজায় থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে। যথাসময়ে কাজ শেষ করতে এডিপিতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখতে হবে। পরিকল্পনা কমিশনের পরিপত্র অনুযায়ী প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিতে হবে। উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি বাদ দিয়ে সীমিত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করতে হবে। প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রতিবছর অডিট কার্যক্রম চালাতে হবে। নিয়মিতভাবে পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) এবং পিএসসি (প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটি) সভা করতে হবে। এছাড়া যেসব সুপারিশ দেওয়া হয়েছে এগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতি আইএমইডিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই জানাতে হবে।

