Logo
Logo
×

শেষ পাতা

জেনেভা ক্যাম্পে পুলিশের অভিযান

বাবাকে ছাড়াতে গিয়ে থাপ্পড় খেল শিশুটি

ভিডিও ভাইরাল, কেউ ফেলছেন চোখের পানি * অভিযোগ মোহাম্মদপুর থানার এক পরিদর্শকের বিরুদ্ধে

ইকবাল হাসান ফরিদ

ইকবাল হাসান ফরিদ

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাবাকে ছাড়াতে গিয়ে থাপ্পড় খেল শিশুটি

ফাইল ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার এক মাদক ব্যবসায়ীর ছোট্ট মেয়ে বাবাকে জড়িয়ে অঝোরে কাঁদছিল। হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে কেউ একজন শিশুটির গালে থাপ্পড় মারে। মুহূর্তেই কেঁপে ওঠে চারপাশ। সেই মর্মস্পর্শী দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিও দেখে নেটিজেনদের নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড় ওঠে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, থাপ্পড়টি কে মারল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে, স্থানীয়দের অভিযোগ শিশুটির গালে থাপ্পড় মারেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. মফিজ উদ্দিন। তবে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি। বৃহস্পতিবার ভোরে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসায়ী দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন বুনিয়া সোহেল গ্রুপের সদস্য জাহিদ (২০)। ওইদিন সন্ধ্যায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। তাদের মধ্যে রুস্তম নামে একজন মাদক ব্যবসায়ীও ছিলেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি জাহিদ হত্যা মামলায়ও অভিযুক্ত। রুস্তমকে গ্রেফতার করে পুলিশ যখন নিয়ে যাচ্ছিল, ওই সময় তার সাত বছর বয়সী মেয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। চোখে-মুখে আতঙ্ক ভর করা মেয়েটি বাবাকে ছাড়তে চাইছিল না। সে মুহূর্তেই ঘটে শিশুটিকে থাপ্পড় মারার ঘটনা। এ ঘটনার ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

ভিডিওতে দেখা যায়, মেয়েটি বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে, আর ভিড়ের মধ্যে থেকে কেউ একজন আচমকা তাকে থাপ্পড় মেরে দেয়। শিশুটি কেঁপে ওঠে। বাবার কাছ থেকে একজন তাকে সরিয়ে নেয়। স্থানীয়রা জানান, ওই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) মফিজ উদ্দিন। তিনিই শিশুটিকে থাপ্পড় মারেন।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে যুগান্তর থেকে ফোন করা হলে পরিদর্শক মফিজউদ্দিন ফোন রিসিভ করেননি। এ ব্যাপারে যাতে সংবাদ প্রচার না হয়, সেজন্য অন্যদের দিয়ে তদ্বির করান। পরে আবার তার বক্তব্য জানতে চাইলে, তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ওই সময় থাপ্পড় মারার ঘটনা ঘটেনি। আমি শিশুটিকে সরিয়ে দিয়েছি। আমার সামনে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, রুস্তম জাহিদ হত্যা মামলার আসামি নয়। আমরা জেনেভা ক্যাম্পে অভিযান করার সময় তার পকেটে ইয়াবা পাই। এরপর তাকে গ্রেফতার করা হয়।

এদিকে এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার জুয়েল রানা যুগান্তরকে বলেন, ভিডিওটি দেখেছি। রুস্তম গ্রেফতারের পর মেয়েটি বাবাকে জড়িয়ে কান্না শুরু করে। তখন স্থানীয় লোকজনের ভিড় ছিল। আমাদের ধারণা, ভিড়ের মধ্যে থেকেই কেউ শিশুটিকে চড়-থাপ্পড় মেরেছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি।’ তিনি বলেন, ‘রুস্তম শুধু মাদক ব্যবসার সঙ্গেই জড়িত নন, জাহিদ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামিও।

ভাইরাল ভিডিওতে ক্ষোভের ঝড় : শিশুটিকে থাপ্পড় মারার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর নিন্দার ঝড় উঠেছে। অসংখ্য মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন। ‘একজন অপরাধীকে পুলিশ ধরতে পারে, কিন্তু শিশুকে কেন মারধর করবে?’

মোহাম্মদ বাবর নামে একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন ‘আমি শুধু হতবাক হয়ে ভিডিওটা দেখি...আমার অজান্তেই চোখের কোণে কি জানি জমে আছে। রাশেদুল হক নয়ন নামে একজন লিখেন-‘এই জন্য কেউ পুলিশকে সম্মান করে না।’

আবরার আহমেদ খান লিখেছেন-‘বাচ্চার গালে থাপ্পড় মারা পুলিশ সদস্যকে আইনের আওতায় আনা হোক’।

একজন লিখেছেন-‘বাবাকে হারানোর ভয়েই শিশুটি কাঁদছিল, সেখানে এমন আচরণ মানবিকতার পরিপন্থি।’ আরেকজন মন্তব্য করেছেন-‘এটি কেবল এক শিশুর গালে চড়-থাপ্পড় নয়, বরং আমাদের সমাজের সহানুভূতির দুরাবস্থার প্রতিচ্ছবি।’

সন্ত্রাসী নাসিম গ্রেফতার : এদিকে শুক্রবার রাতে পুলিশ জেনেভা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী ভাইরাল নাসিমকে গ্রেফতার করেছে। জেনেভা ক্যাম্পে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় ডানহাতে পিস্তল ও বামহাতে দেশীয় ধারালো অস্ত্র সামুরাই হাতে তাকে ছুটতে দেখা গেছে। এসকে নাসিম জেনেভা ক্যাম্পের ৭ নম্বর সেক্টরের জি ব্লকে থাকতেন। তিনি এসকে জিলানী ওরফে কানা জিলানীর ছেলে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম