Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বড় সাজ্জাদের পরের টার্গেট বাবলার ছোট ভাই ইমরান!

বাবলার বিয়েতে উপস্থিত থাকলেও শেষবিদায়ে ছিলেন না রাজনৈতিক নেতারা * মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে

Icon

আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বড় সাজ্জাদের পরের টার্গেট বাবলার ছোট ভাই ইমরান!

ভারতে পালিয়ে থাকা একসময়ের দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ আলী খান ওরফে বড় সাজ্জাদের পরিকল্পনা ও নির্দেশে চট্টগ্রামে একের পর এক হত্যার ঘটনা ঘটছে। আলোচিত এইট মার্ডার, কমিশনার লিয়াকত হত্যা, ঢাকাইয়া আকবর হত্যা, সর্বশেষ সরোয়ার হোসেন বাবলা হত্যার পর প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এই প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে যে, তার পরবর্তী টার্গেট কে? বড় সাজ্জাদ নিহত বাবলার ছোট ভাই ইমরান খান ওরফে আজিজকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। ফোন করে বলছেন, ‘তোর ভাইকে শেষ করেছি। এখন তোর পালা।’ তাকে সময় দেওয়া হয়েছে এক মাসের। আর বাবলাকে এক সপ্তাহের সময় দিয়ে তিন দিনের মাথায় হত্যার মিশন বাস্তবায়ন করা হয়।

বড় সাজ্জাদের এমন হুমকিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ইমরান। তিনি যুগান্তরকে বলেন, সাজ্জাদ যা বলে, তা করে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ঘটনায় এর প্রমাণ হয়েছে। তিনি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে এখন শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বলে জানান।

এদিকে চট্টগ্রামে বাবলা হত্যাকাণ্ডে জড়িত আরও একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে মুন্না নামে এই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে ওই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হলো। খুন হওয়ার এক মাস আগে অনুষ্ঠিত বাবলার বিয়েতে চট্টগ্রামের বিএনপি নেতা লায়ন আসলাম চৌধুরী ও আবু সুফিয়ান উপস্থিত থাকলেও তার শেষবিদায়ে এই নেতাদের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। এ বিষয়টি নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা।

বড় সাজ্জাদের পরবর্তী টার্গেট : ইমরান যুগান্তরকে বলেন, আমার ভাইকে যেদিন গুলি করে হত্যা করা হয়, তার পরের দিন রাতে বড় সাজ্জাদ আমার মোবাইল ফোনে কল দেয়। ভারতীয় একটি নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে কল দেয় সে। বলে, আমার পরিবারের (বড় সাজ্জাদ) কারও বিরুদ্ধে মামলা করলে তোর অবস্থা খারাপ হবে। তোকেও তোর ভাইয়ের মতো পরিণতি ভোগ করতে হবে।

ইমরান আরও বলেন, শনিবার আবার কল দিয়ে বলে, বাবলার যত অস্ত্রশস্ত্র আছে, সব যেন বড় সাজ্জাদের লোকজনদের কাছে দিয়ে দেওয়া হয়। না হয় আমাকে, আমার বাবা ও আমার পরিবারকে বার্স্ট ফায়ার করে হত্যা করবে। আমার পরিবারকে তছনছ করে দেবে। আমি বলেছি, আমার পরিবার এমনিতেই তছনছ হয়ে গেছে। আর কী তছনছ হবে।

এদিকে নাসির উদ্দিন চৌধুরী ওরফে শিবির নাসিরও বড় সাজ্জাদের পরবর্তী টার্গেট বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি সামনে আসছে। দীর্ঘ ২৬ বছর জেল খেটে বের হন নাসির। ৬৫ বছর বয়সে বিয়ে করে তিনি এখন ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। তবে তাকে টার্গেট করার বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন নাসির। তিনি রোববার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, বড় সাজ্জাদকে আমি ভালোভাবে চিনিও না। জেলখানায় একবার দেখা হয়েছিল। আর কোনোদিন কথাও হয়নি, দেখাও হয়নি। এসব ফেক নিউজ। আমি কেন টার্গেট হব।

সূত্র জানায়, বড় সাজ্জাদ যাকে টার্গেট করেন, তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেন। একটি ইনস্টিটিউট দখলকে কেন্দ্র করে ২০০০ সালের ১২ জুলাই তার নেতৃত্বে নগরীর বহদ্দারহাটে বার্স্ট ফায়ার করে হত্যা করা হয় ছাত্রলীগের ৬ নেতাকর্মীসহ ৮ জনকে। এর আগে সাজ্জাদের এলাকারই জনপ্রিয় ওয়ার্ড কমিশনার লিয়াকত আলীও খুন হন এই সাজ্জাদের হাতে। এইট মার্ডারের ঘটনায় করা মামলায় সাজ্জাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। তবে এর আগেই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের একপর্যায়ে একে-৪৭ রাইফেল ও সহযোগীসহ গ্রেফতার হয়েছিলেন সাজ্জাদ। পরে জামিন নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। পালিয়ে থেকেও চট্টগ্রামে তার সহযোগীদের দিয়ে অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করছেন সাজ্জাদ। যার তথ্য প্রশাসনের কাছে রয়েছে। প্রশাসন তা স্বীকারও করছে। সাজ্জাদের সেকেন্ড ইন কমান্ড রায়হানের নেতৃত্বে ঢাকাইয়া আকবরকে গত ২৫ মে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর আগে গত বছরের ২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার ও মোহাম্মদ আনিস নামে দুজনকে হত্যা করে বড় সাজ্জাদের অনুসারী ছোট সাজ্জাদ ও তার লোকজন।

বিয়েতে নেতারা থাকলেও শেষবিদায়ে কেউ নেই : সরোয়ার হোসেন বাবলা ১৯ সেপ্টেম্বর বিয়ে করেন। তার বিয়ের অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য লায়ন আসলাম চৌধুরী ও চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু সুফিয়ানসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। বিয়ের আসরে বর-বধূর সঙ্গে তারা ছবি তোলেন। সেই ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাবলার বিয়ের অনুষ্ঠানে বিএনপির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকলেও তার শেষবিদায়ে কেউই ছিলেন না। ৫ নভেম্বর এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে অংশ নিয়ে গুলিতে খুন হন বাবলা। ওই সময় এরশাদ উল্লাহও গুলিবিদ্ধ হন। তিনি বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধীন। ঘটনার একদিন পর পাঁচলাইশের চালিতাতলী এলাকায় পারিবারিক কবরস্থানে বাবলাকে দাফন করা হয়। তবে শেষবিদায়ের সেই শোকবিধুর দিনে তাকে বা তার পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে বিএনপি নেতাদের কাউকে দেখা যায়নি।

বড় সাজ্জাদের গ্রুপেরই সদস্য ছিলেন বাবলা। এইট মার্ডারসহ ১৫টি মামলার আসামি ছিলেন। জেলে ছিলেন দীর্ঘদিন। ৫ আগস্টের পর জেল থেকে বের হন।

বাবলা হত্যার মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে : বাবলা হত্যার চারদিন পরও মামলার তেমন অগ্রগতি নেই বললেই চলে। মূল হোতাদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পাশাপাশি এজাহারভুক্ত কোনো আসামিকেও পুলিশ পাকড়াও করতে পারেনি। বাবলা হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে তার বাবা আবদুল কাদের বাদী হয়ে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় মামলা করেন। মামলায় বড় সাজ্জাদ ও তার বাহিনীর কিলিং স্কোয়াডের প্রধান হিসাবে পরিচিত রায়হান আলমসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন-বোরহান উদ্দিন, নেজাম উদ্দিন, আলাউদ্দিন, মোবারক হোসেন ওরফে ইমন ও হেলাল ওরফে মাছ হেলাল। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে বড় সাজ্জাদকে।

বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি জসিম উদ্দিন বলেন, র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার দুজন এবং আমাদের হাতে গ্রেফতার দুজনসহ চারজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে। আমরা যে দুজনকে গ্রেফতার করেছি, তারা এজাহারভুক্ত আসামি নন। তবে তারা ঘটনায় জড়িত। আমাদের তদন্তে তাদের নাম উঠে এসেছে। ঘটনায় জড়িত বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম