তারিক সাঈদ মামুন হত্যার পরিকল্পনাকারী রনি। ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজধানীর সূত্রাপুরে শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাঈদ মামুন হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের নির্দেশে হত্যার পরিকল্পনাকারী রনি এখনো অধরা। এই রনি ইমনের ডান হাত হিসাবে পরিচিত। মামুনকে হত্যার জন্য লোক ভাড়া থেকে শুরু করে অস্ত্র সরবরাহ সবকিছু হয়েছে তার প্রত্যক্ষ নির্দেশনায়। রনি বসবাস করেন রাজধানীর কাফরুলে। এক সময় ছিলেন মুদি দোকানি।
ইমনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়লে পালটে যায় তার জীবন চিত্র। মুদি দোকানি থেকে ডিশ ও ইন্টারনেটের ব্যবসার মালিক বনে যান। রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকায় একচেটিয়া ব্যবসা তার। রাতারাতি অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন।
ইমনের পক্ষে নিয়মিত চাঁদার টাকা তোলেন তিনি। মামুন হত্যায় গ্রেফতার পাঁচজনের মধ্যে রুবেল এই রনির ডিশের ব্যবসার ম্যানেজার। এক সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকা রুবেল গত বছরের পাঁচ আগস্টের পর শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ছত্রছায়ায় রয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
মামুন হত্যার ৪ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো থানায় মামলা করেননি স্বজনরা। পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার বলা হলেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কেউ মামলা করতে আসেননি।
ডিএমপির সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বৃহস্পতিবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, এখনো মামুনের পরিবারের কেউ মামলা করতে আসেননি। তাদের মামলা করতে বলা হয়েছে; তারা বলেছেন, কুলখানি ও মিলাদের অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত আছেন। বৃহস্পতিবার আসবেন বলেছিলেন কিন্তু আসেননি। মামুনের স্বজনরা মামলা না করলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে বলেও জানান ওসি।
রাজধানীর পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে সোমবার সকালে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাঈদ মামুন। আদালতে একটি হত্যা মামলার হাজিরা দিতে গেলে টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হন মামুন। এ ঘটনার পরপর দ্রুত সময়ে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে ডিবি। তারা হলেন, মূল শুটার মো. ফারুক হোসেন ফয়সাল ও রবিন আহম্মেদ ওরফে পিয়াস এবং তাদের সহযোগী মো. রুবেল, শামীম আহম্মেদ, মো. ইউসুফ ওরফে জীবন। তাদের কাছ থেকে দুটি পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় হওয়া মামলার তদন্ত করছে ডিবি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর সাজ্জাদ যুগান্তরকে বলেন, অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার পাঁচজন ৪ দিনের রিমান্ডে আছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সূত্র বলছে, রিমান্ডে খুনিরা জানিয়েছে-রনি দুই লাখ টাকায় তিন শুটারকে ভাড়া করে। শুট করার জন্য প্রথমে রবিনকে ভাড়া করা হয়। পরে কুত্তা ফারুক ও সুমনকে ভাড়া করা হয়। তবে শেষ মুহূর্তে হত্যা পরিকল্পনা নিয়ে সুমনের সঙ্গে ফোনে রনির কথাকাটাকাটি হলে তাকে সরিয়ে শুট করার দায়িত্ব দেওয়া হয় রবিনকে। ফারুক ও রবিন মুখে মাস্ক পরে শুট করে মামুনকে। পরিকল্পনাকারী রনি ছাড়াও সুমন ও কামাল এখনো গ্রেফতার হয়নি। জানা গেছে, হত্যা মিশনে সাদা গেঞ্জি পরা লোকটি ছিল কামাল। কামাল, তারিক সাঈদ মামুন ও ইমন এক সময় ঘনিষ্ঠ ছিল। ৪ দিনের রিমান্ডের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিবির একটি সূত্র।
রিমান্ডে থাকা পাঁচজনের মধ্যে রবিন খুবই অনুতপ্ত। তিনি কান্নাকাটিও করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, এটা ছিল তার প্রথম কিলিং মিশন। তবে রিমান্ডে থাকা অন্যরা স্বাভাবিক রয়েছে। তাদের মধ্যে কোনো অপরাধবোধ নেই।
জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি জানতে পেরেছে, দুবাইতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের নির্দেশে হত্যার পরিকল্পনা করে রনি। শুটারদের টাকা দেওয়া ও অস্ত্র লুকানোর দায়িত্ব ছিল রনির ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসার ম্যানেজার রুবেলের ওপর। রুবেল টেইলার্স ব্যবসায়ী ইউসুফের কাছে অস্ত্র লুকিয়ে রাখে। ইউসুফ ওরফে জীবনের বাসা মোহাম্মদপুরের রায়ের বাজারে। তিনি স্থানীয় সালেহা বেগমের কাঠের তৈরি দুই তলা ভবনের দুই তলাতে পাঁচ হাজার টাকায় ভাড়া থাকেন। সেখানে বিশেষ ব্যবস্থায় অস্ত্র লুকিয়ে রাখেন।
ইউসুফের বিষয়ে জানা গেছে, তিনি পেশায় দর্জি দোকানি। তার পাশের রুমের ভাড়াটিয়া গাড়িচালক গাফফার মৃধা যুগান্তরকে বলেন, গত এক বছর ধরে বাসাটিতে থাকেন ইউসুফ। মোহাম্মদপুরের ১৫ নম্বর রোডে একটি টেইলার্সের দোকানে চাকরি করতেন। তার সঙ্গে খুব একটা কথা হতো না।
যেভাবে সংঘটিত হয় হত্যাকাণ্ড : রিমান্ডে তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানতে পেরেছেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী সোমবার সকাল ৯টার দিকে রনি রবিনকে জজকোর্ট এলাকায় যেতে নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী মোটরসাইকেলে রবিন কিলিং মিশনে অংশ নেওয়ার জন্য জজকোর্ট এলাকায় যান। একই সময় রনির নির্দেশে ফারুক, সুমন, কামালসহ আরও এক থেকে দুজন ঘটনাস্থলের কাছাকাছি উপস্থিত হয়। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মামুন ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পৌঁছালে তারা তাকে অনুসরণ করতে থাকেন।
কামালের ওপর নির্দেশনা থাকে মামুনকে অনুসরণ করা এবং পরিকল্পনা মোতাবেক তিনি মামুনের কাছেই থাকেন। কামালের সংকেত পেয়েই ফারুক ও রবিন মামুনকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।



