রাজধানীতে ঝটিকা মিছিল-নাশকতা
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কিশোর গ্যাং
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজধানীতে ঝটিকা মিছিল-নাশকতায় কিশোর গ্যাং, মাদকসেবী, ছিন্নমূল এবং সুবিধাবঞ্চিতদের ব্যবহার করছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত দল আওয়ামী লীগ। বিপুল অর্থের বিনিময়ে অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ, গ্রেনেড নিক্ষেপসহ নানা নাশকতায় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যুক্ত করছে তাদের। বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে তৎপর তারা। আর অপরাধ বিশ্লেষকদের মন্তব্য-নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে অপরাজনীতির পথে হাঁটছে আওয়ামী লীগ। শুরু করেছে আগুন-সন্ত্রাসের রাজনীতি। এসব কাজে ব্যবহার করছে কিশোর গ্যাং সদস্যদের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সজাগ হওয়ার পরামর্শ তাদের।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, অর্থের মাধ্যমে কিশোর গ্যাং সদস্যদের দিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করা হচ্ছে। এ কিশোর গ্যাং সদস্যরা সামনে থাকলেও তাদের পেছনে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা রয়েছে। তারাই কিন্তু এসব কর্মসূচির আয়োজন করছে। আমরা এসব ঝটিকা মিছিল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছি। মিছিল ও নাশকতার সঙ্গে যুক্ত থাকায় ইতোমধ্যেই অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ছিল গত বৃহস্পতিবার। এ কর্মসূচি ঘোষণার পর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বাসে অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ, গ্রেনেড ও পেট্রোলবোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। খণ্ড খণ্ডভাবে বের করা হয় ঝটিকা মিছিল। এসব কর্মসূচিতে অংশ নেন ঢাকায় আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। তাদের অধিকাংশই বিভিন্ন জেলা, মহানগর, বিশ্ববিদ্যালয়, উপজেলা, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দল বা সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। দলটির এসব নেতাকর্মীর সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যুক্ত হয় কিশোর গ্যাং সদস্য, মাদকসেবী, ছিন্নমূল ও সুবিধাবঞ্চিতরা।
পুলিশের অভিযোগ-ঘোষিত কর্মসূচি সফল করতে কিশোর গ্যাং, ছিন্নমূল ও সুবিধাবঞ্চিতদের ব্যবহার করেছে আওয়ামী লীগ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি ভিন্ন খাতে রাখতে তাদের সামনে রেখেছে দলটি। ব্যয় করেছে মোটা অঙ্কের টাকা। যদিও আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল কিংবা নাশকতার ঘটনায় যুক্ত থাকা কিশোর গ্যাং সদস্যদের সংখ্যা খুব বেশি নয় বলে মনে করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। জানতে চাইলে ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, টাকা দিয়ে ঝটিকা মিছিল করানো হচ্ছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এসব মিছিলের সঙ্গে কারা জড়িত, তাদের সম্পর্কে আমরা খোঁজখবর রাখছি। এ বিষয়ে আমাদের তদন্তও চলমান রয়েছে। অভিযুক্তদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। সেজন্য আমরা কাজ করছি।
ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, ঢাকা লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণার পর গত ৬ দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগী সংগঠনের ১৮৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঝটিকা মিছিল, ককটেল বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগ, পেট্রোলবোমা ও গ্রেনেড নিক্ষেপের অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও ঝটিকা মিছিল থেকে কয়েকজন কিশোর গ্যাং সদস্যকে আটক করা হয়। তবে চেষ্টা করেও আটক কিশোর গ্যাং সদস্যদের সঠিক সংখ্যা জানা সম্ভব হয়নি। সব মিলিয়ে গত ১০ মাসে ঝটিকা মিছিলে অংশ নেওয়ায় আওয়ামী লীগ ও দলটির বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের প্রায় ৩ হাজার ২০০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে ডিএমপি।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে লোক ভাড়া করা নতুন কিছু নয়। টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কিশোর গ্যাং ও সুবিধাবঞ্চিতদের মাধ্যমে দলীয় কর্মসূচি পালন করে। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ আদায়ে তারা অনেক সময় অর্থ দিয়ে এসব মানুষকে সংঘাত-সহিংসতা, দুর্বৃত্তায়নসহ নানা অপরাধে যুক্ত করে অপরাজনীতিও করে। নেতারা বিদেশে আরাম-আয়েশে থেকে ছিন্নমূল ও সুবিধাবঞ্চিতদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। সম্প্রতি পতিত আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিচার বন্ধ, নির্বাচনে বিরোধিতা ও দেশের রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করতে এসব অপকৌশল নতুন করে শুরু করেছে দলটি। এসব নিয়ন্ত্রণে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। নইলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ শঙ্কার মধ্যে পড়বে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ দেশের রাজনীতিতে একটা অবস্থান তৈরির চেষ্টা করছে। তাদের প্রধান লক্ষ্য দুর্বৃত্তায়ন, সংঘাত ও সহিংতার মধ্যদিয়ে ভয় সৃষ্টি করে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করা। দলটির নেতারা বিদেশে বসে অর্থের বিনিময়ে দলীয় নেতাকর্মী, কিশোর গ্যাং ও নানা ধরনের অপরাধীদের মাধ্যমে সহিংসতা সৃষ্টি করা। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এগুলো নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক তৈরি হবে। তারা নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগে অংশ নিতে ভয় পাবে।
