Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বিচারকের ছেলে হত্যা

রাজশাহীতে পাঁচ দিনের রিমান্ডে আসামি লিমন

আনু মোস্তফা

আনু মোস্তফা

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাজশাহীতে পাঁচ দিনের রিমান্ডে আসামি লিমন

আসামি লিমন মিয়াকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে

রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের ছেলেকে হত্যা এবং স্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার মামলায় একমাত্র আসামি লিমন মিয়ার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শনিবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) আসামিকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২-এর বিচারক মামুনুর রশিদ তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র উপকমিশনার (ডিসি) গাজিউর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে পুলিশ হেফাজতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আসামি লিমনের ভিডিও বয়ান রেকর্ড করে সামাজিক মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানকে শোকজ করে আদালতে তলব করা হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালে লিমনের পাহারায় নিয়োজিত রাজপাড়া থানা পুলিশের এক উপপরিদর্শক (এসআই), তিন কনস্টেবলসহ চারজনকে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্তের পর পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্ত এবং বিভাগীয় মামলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আরএমপির রাজপাড়া থানা সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লিমন মিয়াকে হাসপাতাল ত্যাগের ছাড়পত্র দিয়েছে। এরপর লিমনকে বুঝে নিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আসাদুল ইসলাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করেন। ম্যাজিস্ট্রেট পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে তদন্ত কর্মকর্তা আসামিকে রাজপাড়া থানায় নিয়ে যান। এর আগে ১৪ নভেম্বর দুপুরে বিচারক বাদী হয়ে রাজপাড়া থানায় হত্যা মামলা রুজু করায় লিমনকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আরএমপির রাজপাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আসাদুল ইসলাম জানান, হত্যা মামলার আসামি লিমনকে বিশদ জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। এ কারণে তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কী কারণ রয়েছে, তাও উদ্ঘাটন করা জরুরি। বিচারকের স্ত্রী বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি সুস্থ হয়ে উঠলে ১৬১ ধারায় তার জবানবন্দি নেওয়া হবে। এছাড়া লিমনের পিসিপিআর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তার বাড়ি গাইবান্ধার ফুলছড়ি থানা পুলিশকে অনুরোধ পাঠানো হয়েছে।

আরএমপি কমিশনারকে আদালতে তলব : হত্যাকাণ্ডের সময় আঘাতপ্রাপ্ত লিমনকেও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। এরই মধ্যে কে বা কারা লিমনের ভিডিও বয়ান রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। লিমন তার বয়ানে বিচারকের স্ত্রী লুসি সম্পর্কে আপত্তিকর ও অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেছে। এটি ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা বলে বিচারকদের ক্ষোভের উদ্রেক হয়। হত্যাকারীর ওই বয়ান নিয়ে সামাজিকমাধ্যমেও বিভিন্ন মতামত ও প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পেয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পুলিশ হেফাজতে থাকা কারও বয়ান গ্রহণ করে গণপ্রচার করা সুপ্রিমকোর্টের এই ধরনের বিভিন্ন মামলার আদেশ ও নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। শনিবার এ বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতের বিচারক মামুনুর রশিদ বিবিধ মামলা নং- ১ চালু করেন। তিনি পুলিশ হেফাজতে থাকা আসামির ভিডিও বয়ান রেকর্ড করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানোর কারণে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানকে ১৯ নভেম্বর আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

রাজপাড়া থানার চার পুলিশ সাময়িক বরখাস্ত : এদিকে আদালতে পুলিশ কমিশনারকে তলবের ফলে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ। পুলিশ হেফাজতে থাকা হত্যা মামলায় জড়িত ব্যক্তির ভিডিও বয়ান গ্রহণের সময় হাসপাতালে দায়িত্ব পালনকারীদের বিষয়ে অবহেলাজনিত তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় রাজপাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু শাহাদাত, কনস্টেবল আব্দুস সবুর, কনস্টেবল মাহফুজার রহমান ও কনস্টেবল মিঠু সরদারকে শনিবার বিকালে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজুর প্রক্রিয়ায় তদন্ত কমিটি করেছে পুলিশ কর্তৃপক্ষ।

তৌসিফকে জামালপুরে দাফন : বিচারক আব্দুর রহমান একমাত্র ছেলে তৌসিফের লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার রুদ্র বয়রা চকপাড়া গ্রামে পৌঁছান শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে। স্থানীয় ইসরাইল আহমেদ স্কুল মাঠে জানাজা শেষে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তৌসিফকে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। তৌসিফের ফুপাতো ভাই রাসেল ফকির বলেন, আমার বিচারক মামারা চার ভাই চার বোন। সবাই বেঁচে আছেন। তৌসিফ খুব শান্ত ও সরল প্রকৃতির ছেলে ছিল। সে মামাদের এই বড় পরিবারের সবার খুব প্রিয় ছিল।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম