Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সার বিতরণে ডিলার নিয়োগ

নতুন নীতিমালায় ‘অবাস্তব শর্ত’

শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার

শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নতুন নীতিমালায় ‘অবাস্তব শর্ত’

সারের ডিলার নিয়োগে ২০০৯ সালের নীতিমালা বদলে নতুন নীতিমালা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ‘স্টেকহোল্ডারদের’ কোনো মতামত নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। নীতিমালায় ইচ্ছেমতো ‘অবাস্তব শর্ত’ জুড়ে দেওয়া হয়োছে। ১৩ নভেম্বর গেজেট আকারে নতুন নীতিমালা প্রকাশ হয়। ১৬ নভেম্বর থেকে তা কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে গেজেটে। এ নিয়ে ২৭ নভেম্বর শুক্রবার ছুটির দিনে সারা দেশের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে জুম মিটিং করেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান।

এদিকে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন ও গেজেট প্রকাশের ঘটনায় চট্টগ্রামসহ সার দেশের প্রায় ছয় হাজার ডিলারের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএ) নেতাদের অভিযোগ, নতুন নীতিমালায় ডিলারদের পাশাপাশি কৃষকদের স্বার্থকেও জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে। তড়িঘড়ি করে নীতিমালা চাপিয়ে দেওয়ায় ডিলাররা যেমন ব্যবসা করতে পারবেন না, তেমনি নতুন কেউ ডিলারশিপ নিতেও আগ্রহী হবেন না। মাঝখানে সার সরবরাহ ব্যবস্থায় সারা দেশে বড় ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে। এতে কৃষি উৎপাদনও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্যই এমন অযৌক্তিক নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে কি না- তা খতিয়ে দেখার জন্য তারা সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। সূত্র জানায়, একসময় সার বিতরণ ব্যবস্থা ছিল উন্মুক্ত। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) থেকে যেকোনো ব্যবসায়ী সার উত্তোলন করে তা কৃষক পর্যায়ে পৌঁছে দিতেন। কিন্তু এতে কোনো শৃঙ্খলা ছিল না। যে কারণে ১৯৯৫ সালে বিএনপি সরকার ডিলারশিপ প্রথা চালু করে। বিসিআইসির মাধ্যমে ডিলার নিয়োগ দিয়ে সেই ডিলারদের মাধ্যমেই সারা দেশে সার সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করে। এর মাধ্যমে সার বিতরণ ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরে আসে। কৃষি উৎপাদনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। ২০০৯ সালে সর্বশেষ যে গেজেট হয়, সে অনুযায়ী প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে ডিলার, তার অধীনে প্রতি তিন ওয়ার্ডে একজন করে সাব-ডিলার নিয়োগের বিধান রাখা হয়। সে হিসাবে প্রতিটি ইউনিয়নে একজন ডিলার ও তিনজন সাব-ডিলার নিয়োগ করা হয়। এই ডিলারশিপ পেতে একজনকে দুই লাখ টাকা করে জামানত দিতে হয়। আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে চুক্তি করে প্রতি সাব-ডিলারকে ৩০ হাজার টাকা করে জামানত দিতে হতো। এভাবে চট্টগ্রামে ১৯৭ জনসহ সারা দেশে বর্তমানে প্রায় ছয় হাজার ডিলার সার সরবরাহ চেইন চালু রাখেন। কতিপয় অসাধু ডিলার ছাড়া বেশির ভাগ ডিলারই সরকারি নিয়ম মেনে সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখার ফলে কৃষি উৎপাদন অব্যাহত থাকে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং কমিটি নতুন একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। ‘সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণসংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০২৫’ নামে এই নীতিমালায় প্রতিটি ইউনিয়নে তিনজন করে ডিলার নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। একজন ডিলারকে তিন ওয়ার্ডে তিনটি করে দোকান খুলতে হবে। পাশাপাশি থাকতে হবে ৫০ টন ধারণক্ষমতার একটি এবং ১০ টন ধারণক্ষমতার একটি করে দুটি গুদাম। নতুন ডিলার হতে জামানত দিতে হবে পাঁচ লাখ টাকা।

বিদ্যমান ডিলার ও সার বিতরণ ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, একজন ডিলারকে তিনটি ওয়ার্ডে তিনটি দোকান, তিনটি গুদাম চালাতে গেলে গুদাম ভাড়ার অগ্রিম, মাসিক ভাড়া, কর্মচারী খরচ, লোডিং-আনলোডিং, পরিবহণ খরচসহ প্রতি মাসে দুই লাখ টাকারও বেশি খরচ করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে প্রতি ইউনিয়নে একজন ডিলার প্রতি মাসে সারের বরাদ্দ পান ৩০ টন থেকে ৩৫ টন। যখন একটি ইউনিয়নে তিনজন ডিলার থাকবেন তখন তা ভাগ হয়ে যাবে। প্রতিজন ডিলার ১০ টন করে সার পাবেন। প্রতি কেজিতে ডিলাররা সরকার থেকে কমিশন পান দুই টাকা করে। সে হিসাবে ১০ হাজার কেজিতে একজন ডিলার লাভ করবেন দুই টাকা করে ২০ হাজার টাকা। অথচ নতুন নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে গেলে একজন ডিলারের খরচই হবে প্রতি মাসে দুই লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে সার বিতরণ করে ডিলাররা লাভের মুখ তো দেখবেনই না, উলটো পকেট থেকে যাবে। এ অবস্থায় বিদ্যমান ডিলাররা যেমন ব্যবসা অব্যাহত রাখতে পারবেন না; তেমনি নতুন কোনো ডিলারও বুঝে-শুনে এই ব্যবসায় আসবেন না।

বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএ) চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাহবুবুল আলম খান বলেন, ‘নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে সারা দেশে সার বিতরণ ব্যবস্থায় নৈরাজ্য তৈরি হবে। বিদ্যমান ডিলারদের ব্যবসা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। এ অবস্থায় কৃষি খাতে বড় ধরনের ধাক্কা আসবে।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন এমন একজন আমলা তড়িঘড়ি করে ডিলার ও কৃষকবিরোধী অযৌক্তিক নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন- যাতে বর্তমান সরকার বেকায়দায় পড়ে। এই নীতিমালা বা গেজেট স্থগিত রাখার জন্য ইতোমধ্যে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পাশাপাশি চট্টগ্রামসহ সারা দেশে জেলা প্রশাসকদের স্মারকলিপি প্রদান করেছি। প্রধান উপদেষ্টার কাছেও স্মারকলিপি দিয়েছি।’

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম