Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বরিশালের কোনো আসনই ছাড়ছে না বিএনপি

আকতার ফারুক শাহিন

আকতার ফারুক শাহিন

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বরিশালের কোনো আসনই ছাড়ছে না বিএনপি

বরিশালের কোনো আসনই শরিক কিংবা সমমনা দলগুলোকে ছাড়ছে না বিএনপি। এখন পর্যন্ত এমনই সিদ্ধান্ত দলটির। বৃহস্পতিবার ঘোষিত দ্বিতীয় দফা প্রার্থী তালিকায় আরো স্পষ্ট হয়েছে বিষয়টি। প্রথম দফায় বরিশালের ২১ আসনের ১৬টিতে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়েছিল। তাই ফাঁকা আসনগুলো জোট কিংবা সমমনা দলগুলোকে দেওয়া হতে পারে-এমন আলোচনা ছিল। ফাঁকা পাঁচ আসনের মধ্যে তিনটিতে বৃহস্পতিবার প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি দুটির একটি পটুয়াখালী-৩ আসনে মনোনয়ন না পেলেও নির্বাচন করার কথা জানিয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন। আর পিরোজপুর-১ আসনও শেষ পর্যন্ত দলের কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। সব মিলিয়ে বরিশালের ২১ আসনের সবকটি প্রকারান্তরে নিজেদের হাতেই রাখছে বিএনপি। শরিক ও সমমনাদের অপরিচিত প্রতীক আর শক্তিশালী প্রার্থী না থাকার কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

ভাবা হয়েছিল প্রার্থী ঘোষণা না হওয়া পাঁচটি আসন শরিক কিংবা সমমনা দলগুলোকে দেওয়া হবে। এর মধ্যে বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদের নাম আলোচনায় ছিল। সম্ভাব্য নির্বাচনি জোট আর রাজনৈতিক নানা সমীকরণের হিসাবে আসনটি ফুয়াদকে ছাড়তে পারে বিএনপি-এমন আলোচনাই চলছিল। আসনটি ফুয়াদ পেলে প্রকারান্তরে জামায়াত যে লাভবান হবে-সেই আলোচনাও ছিল। কেননা ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত ফুয়াদকে তেমন একটি চিনত না এলাকার মানুষ। এছাড়া তার দলের নাম কিংবা প্রতীকও খুব একটা পরিচিত নয়। যেহেতু নির্বাচন কমিশনের দেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে দল যার সঙ্গেই জোট করুক না কেন ভোটে লড়তে হবে নিজ প্রতীকে। এটাও বড় সমস্যা। এসব কারণে জয় নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন বিএনপি নেতারা। বাবুগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান খান বলেন, ‘ভোটের মাঠে প্রতীক ধানের শীষ না হলে বিজয় নিশ্চিত করা কঠিন। এছাড়া নতুন একটি প্রতীক ভোটারদের কাছে পরিচিত করাতেই তো কয়েক মাস লাগবে। সেক্ষেত্রে না চাইতেই বাড়তি সুবিধা পাবে জামায়াত।’

বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ওয়াহিদুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, ‘নেতাকর্মীদের এই শঙ্কার বিষয়টি বুঝতে পেরেই হয়তো সর্বশেষ ঘোষণায় এখানে দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিনকে প্রার্থী করেছে বিএনপি। এখন আর আমাদের কোনো শঙ্কা নেই। দলের সবাই এখন ঐক্যবদ্ধভাবে জয়ের লক্ষ্যে কাজ করবে ইনশাআল্লাহ।’

বরিশাল-৩ এর মতো প্রার্থী নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনের বিএনপি নেতাকর্মীরা। এখানেও প্রথম দফায় ঘোষণা করা হয়নি দলীয় প্রার্থী। যদিও এলাকায় প্রচার চালাচ্ছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক দল বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান। এর আগে ২০১৮ নির্বাচনে ইরানকে পিরোজপুর-২ (ভান্ডারিয়া-কাউখালী-নেসারাবাদ) আসনে মনোনয়ন দিয়েছিল বিএনপি। ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনে নেমে এক লাখ ৬০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরে যান তিনি। জোটের শরিক বিবেচনায় তাকে এখানে মনোনয়ন দেওয়া হলে আসনটি হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা করছিলেন নির্বাচনি এলাকাসহ ঝালকাঠি জেলা বিএনপির নেতারা। কারণ একদিকে ইরান যেমন এলাকায় খুব একটা পরিচিত নন; তেমনি ‘আনারস’ প্রতীকের প্রার্থী যে বিএনপি সমর্থিত তা ভোটারদের বোঝানো সহজ হতো না। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ডা. শাহাদাত হোসেন তখন বলেছিলেন, ‘এরকম কিছু করা মানে হবে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারা। সেক্ষেত্রে আসনটি প্রতিপক্ষের হাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

বৃহস্পতিবার দেওয়া ঘোষণায় এখানে দলের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামালকে প্রার্থী করেছে বিএনপি। এ ঘোষণার পর যেন হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন সেখানকার দলীয় নেতাকর্মীরা। বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয়ের এ সিদ্ধান্তে আসনটিতে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত হলো।’ অবশ্য এ ঘোষণায় ক্ষুব্ধ ডা. ইরান। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থী ঘোষণার বিষয়টিকে বিএনপির বেইমানি বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ শরিকদের পাশ কাটিয়ে এমন সিদ্ধান্ত বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য সুখকর হবে না।’

প্রথম ঘোষণায় পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনেও প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। এখানে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী দলটির প্রভাবশালী নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। গুঞ্জন ছিল নির্বাচনি সমঝোতা প্রশ্নে বিএনপির কাছে আসনটি চাইছে ন্যাশনাল সিটিজেনস্ পার্টি-এনসিপি। দলের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম শাহিনের জন্য আসনটি চাওয়া হচ্ছে। বিষয়টি জানাজানি হলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে। কেননা একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এই মুজাহিদ। তার বাবা এখনো বাউফল উপজেলা জামায়াতের আমির। তাকে দেওয়া মানে প্রকারান্তরে বিনা লড়াইয়ে আসনটি জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়া। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আসনটি ছাড়েনি বিএনপি। বৃহস্পতিবারের ঘোষণায় এখানে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাবেক এমপি ও দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শহিদুল আলম তালুকদারকে।

পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান বলেন, ‘এখন আর বিনা চ্যালেঞ্জে যাবে না বাউফল। ইনশাআল্লাহ ধানের শীষের আসন ধানের শীষেরই থাকবে।’

যদিও বরিশালের দুটি আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। তবে সেগুলোও ছাড়া হবে না বলে আভাস মিলেছে দলের একাধিক দায়িত্বশীল নেতার কাছ থেকে। গুঞ্জন রয়েছে পিরোজপুর-১ (জিয়ানগর-সদর-নাজিরপুর) আসনটি জোটের শরিক জাতীয় পার্টির মোস্তফা জামাল হায়দারকে ছাড়তে পারে বিএনপি। এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাইদুল ইসলাম কিসমত বলেন, ‘আমরা তো শুরু থেকেই বলে আসছি যে, এখানে জয় নিশ্চিত করতে ধানের শীষের কোনো বিকল্প নেই। তার পরও দল যে সিদ্ধান্ত দেবে তাই মেনে নেব।’

পরিচয় না প্রকাশের শর্তে বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘জোটের শরিক কিংবা সমমনা যাই বলুন না কেন, এমন কাউকে আসন দেওয়া হবে না, যার নিজস্ব ভোট ব্যাংক কিংবা জিতে আসার সম্ভাবনা নেই। সবকিছু ভেবেচিন্তেই করছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেই বিবেচনায় পিরোজপুরেও শেষ পর্যন্ত দলের কাউকেই মনোনয়ন দেবে বিএনপি।’

পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনে এখন পর্যন্ত বিএনপি কাউকে মনোনয়ন না দিলেও এখানে প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়েছেন দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন। যুগান্তরসহ একাধিক গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, দল মনোনয়ন না দিলেও তিনি প্রার্থী হবেন। এদিকে আসনটি বিএনপি গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে ছাড়তে পারে-এমন আলোচনা রয়েছে সেখানে। নুরকে ছাড়া হলেও হাসান মামুনের বিপরীতে সহজ জয় যে তার ভাগ্যে জুটছে না সেটা নিশ্চিত। পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি স্নেহাংশু সরকার কুট্টি বলেন, ‘পটুয়াখালী-৩ নির্বাচনি এলাকায় বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে প্রচণ্ড শক্তিশালী করে গড়েছেন হাসান মামুন। তিনি ভোটে নামলে ফলাফল তার বিপক্ষে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা আমরা দেখছি না।’

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম