Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বিপিসি কিনবে না ভেজাল তেল

Icon

মুজিব মাসুদ

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিপিসি কিনবে না ভেজাল তেল

অবশেষে ভেজাল তেল না কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে কনডেনসেট (গ্যাসের উপজাত) দেয়াও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ১ জুলাই থেকে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে বিপিসি। এ অবস্থায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সরকারি বেসরকারি ১২টি ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্ট। কোম্পানিগুলো এতদিন স্থানীয় বাজার থেকে কনডেনসেট নিয়ে পরিশোধনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল উৎপাদন করত।

বিপিসি চেয়ারম্যান সামছুর রহমান যুগান্তরকে এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, মোট ১২টি ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্টের কাছ থেকে তারা জ্বালানি তেল কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। ওই প্ল্যান্টগুলোতে কনডেনসেট দেয়াও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কোম্পানিগুলোর উৎপাদিত অকটেন ও পেট্রলে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনযুায়ী ‘অকেটেন নাম্বার’ থাকত না।

জানা গেছে, ১২টি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- সুপার রিফাইনারি লিমিটেড, অ্যাকোয়া মিনারেল টারপেনটাইন অ্যান্ড সলভেন্টস প্ল্যান্ট লিমিটেড, পিএইচপি পেট্রো রিফাইনারি, চৌধুরী রিফাইনারি, গোল্ডেন কনডেনসেট অয়েল রিফাইনারি, জেবি রিফাইনারি, ইউনিভার্সেল রিফাইনারি, লার্ক পেট্রোলিয়াম, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, সিনথেটিক রেজিন প্রোডাক্টস, রূপসা ট্যাংক টার্মিনাল ও কার্বন হোল্ডিং লিমিটেড। ১ জুলাই থেকে কনডেনসেট সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় কোম্পানিগুলোর কার্যক্রমও বন্ধ হওয়ার পথে।

অভিযোগ আছে, দীর্ঘদিন ধরে এসব ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্ট সরকারের কাছ থেকে কনডেনসেট কিনে ভেজাল অকটেন ও পেট্রল উৎপাদন করে বিপিসির কাছে বিক্রি করত। একই সঙ্গে পরিশোধন না করে অকটেন ও পেট্রলের সঙ্গে মিশিয়ে তা বিভিন্ন পেট্রলপাম্পে বিক্রি করে দিত। বিপিসি এসব অসাধু ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্টগুলোকে একাধিকবার সতর্ক করেও ভেজাল তেল উৎপাদন বন্ধ করতে পারেনি। সর্বশেষ ৩ মাসের সময় বেঁধে দিলেও তারা ভেজাল বন্ধ করেনি। শেষ পর্যন্ত ১ জুলাই থেকে এই ১২টি ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্ট থেকে জ্বালানি তেল না কেনা এবং কোম্পানিগুলোকে কনডেনসেট না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রিফাইনারি কোম্পানি বা ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্টগুলো পরিশোধন না করে জ্বালানি তেল ভেজাল করে গত ১৬ বছরে ৭ হাজার ৫৬০ কোটি টাকার বেশি অর্থ লোপাট করেছে। ২০০০ সাল থেকে থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এক হিসাবে এই অর্থ লোপাটের ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে ২০০০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে সরকারি বেসরকারি রিফাইনারি কোম্পানি পেট্রবাংলার কাছ থেকে ১৮৬ কোটি ৯৩ লাখ লিটার কনডেনসেট নিয়েছে। এ ছাড়া আমদানি করা কনডেনসেটের পরিমাণ ছিল ২৬ কোটি ৬৭ লাখ লিটার। আমদানিসহ মোট কনডেনসেট নিয়েছে ২১২ কোটি লিটার। কিন্তু জ্বালানি তেল (অকটেন-পেট্রল) হিসেবে পরিশোধন করে বিপিসিকে দিয়েছে মাত্র ১০৩ কোটি ৮৭ লাখ লিটার। বিপিসি বলছে, এ সময়ে মোট ১০৮ কোটি লিটার কনডেনসেটের কোনো হিসাব দিতে পারেনি ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্ট কোম্পানিগুলো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপিসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, রিফাইনারিগুলো এই ১০৮ কোটি লিটার কনডেনসেট পরিশোধন না করে অকটেন পেট্রলের সঙ্গে মিশিয়ে ভেজাল আকারে পেট্রল পাম্পগুলোতে বিক্রি করে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, লিটারপ্রতি অকটেন ও পেট্রল ও ডিজেলের মাঝামাঝি রেট ৭০ টাকা হিসেবে ধরলে মোট সাত হাজার ৫৬০ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। একই সঙ্গে ১৬ বছরে ১০৮ কোটি লিটার ভেজাল তেল বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে।

বর্তমানে দেশে তিনটি সরকারি ও ১২টি বেসরকারি তেল রিফাইনারি বা ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্ট রয়েছে। তারা পেট্রোবাংলার কাছ থেকে কনডেনসেট কেনে। কনডেনসেট থেকে পেট্রল অকটেন ও অন্যান্য জ্বালানি তেল উৎপাদন করে বিপিসির কাছে বিক্রি করে। কিন্তু অভিযোগ আছে কিছু রিফাইনারি পেট্রলপাম্প মালিকদের সঙ্গে যোগসাজশে ক্রয় করা কনডেনসেট পরিশোধন (রিফাইন) না করেই পুরোটাই ভেজাল আকারে পাম্পগুলোতে বিক্রি করে দিচ্ছে। এর ফলে গাড়ির ইঞ্জিন নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই বিকল হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি দূষণ হচ্ছে পরিবেশও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ্বালানি বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, কনডেনসেট পরিশোধন করতে গিয়ে ২ থেকে ৩ শতাংশ ‘প্রসেস লস’ হয়। কিছু অংশ দিয়ে জ্বালানি তেল ছাড়াও অন্য উপজাত তৈরি হয়। কিন্তু কোম্পানিগুলো পুরো কনডেনসেট বিভিন্ন পেট্রলপাম্পে বিক্রি করে দিয়েছে বলে অভিযোগ আছে।

১২টি রিফাইনারির বিরুদ্ধে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকার দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করছে।

জ্বালানি বিভাগের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, ১২ কারখানায় ফেব্রুয়ারি বা মার্চের মধ্যে কনডেনসেট বন্ধ করে দেয়ার কথা ছিল। কারণ, তাদের উৎপাদিত পণ্যের মান (বিএসটিআই গ্রেড) ৭০ থেকে ৮২ পর্যন্ত। কিন্তু পেট্রলের ন্যূনতম মান ৮৫ নির্ধারণ করেছে বিএসটিআই। ১২ কারখানা আধুনিকায়নের জন্য মালিকপক্ষকে অনেক তাগাদা দেয়া হয়েছে। তারা কথা শুনছেন না। তাই তাদের কাঁচামাল (কনডেনসেট) বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

বিপিসি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম