ভাষা আন্দোলনের ৬৯ বছর
ইতিহাসে ভাষা আন্দোলনের প্রভাব ব্যাপক
সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাঙালির ইতিহাসে ভাষা আন্দোলনের প্রভাব ব্যাপক। মূলত এই আন্দোলন ছিল পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন। বাঙালির মৌলিক অধিকার রক্ষায় বাংলা ভাষাকে ঘিরে গণদাবিরই বহিঃপ্রকাশ ঘটে। পরে ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই সব আন্দোলন-সংগ্রামের ডালপালার বিস্তার হয়। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধও এর ব্যতিক্রম নয়। ফলে ভাষা আন্দোলন বাঙালির ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
ভাষা আন্দোলনের প্রভাব নিয়ে কথা হয় ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিকের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমাদের জাতীয়তাবাদ ও বাঙালিয়ানার জোয়ার ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির মধ্য দিয়েই এসেছে। একুশের চেতনার প্রসারিত প্রভাব থেকেই ছয় দফা, ছাত্রদের ১১ দফা ও মওলানা ভাসানীর ১৪ দফা। এগুলোর সম্মিলিত ফলই হলো উনসত্তরের গণজাগরণ। এর পরিণামে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়। তাই আমি সব সময় বলি, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার।
আরেক ভাষাসংগ্রামী অধ্যাপক ফুলে হুসেন বলেন, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে ভিত্তি করেই বাংলাদেশের উৎপত্তি। আমাদের জাতীয়তাবোধের সবকিছুই শিখেছি ভাষা আন্দোলন থেকে। আমরা বাঙালি, বাংলা ভাষায় কথা বলি, আমাদের দেশ বাংলাদেশ-এসব বোধ এ আন্দোলন থেকেই পাওয়া। ভাষা আন্দোলন থেকেই উৎসারিত সব মন্ত্র।
ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভাষা আন্দোলন-পরর্বর্তী সময়ে বাঙালিয়ানার যে জোয়ার আসে, সেটাই আমাদের জাতীয়তাবোধের জন্ম দেয়। আর এই জাতীয়তাবোধের উৎসারিত চেতনা থেকেই আমরা এখনো সব আন্দোলন-সংগ্রামে প্রেরণা পাই। শোষণের বিরুদ্ধে, নির্যাতনের বিরুদ্ধে, দাবি আদায়ের সংগ্রামে আমাদের উজ্জীবিত করে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি।
এসব প্রেরণাকে সঙ্গী করেই আমরা এগিয়ে যাই সামনের দিকে। আজ যতটা পথ বাংলাদেশ এগিয়েছে, এর পেছনে অনুপ্রেরণা আমাদের চির অম্লান ভাষা আন্দোলন। আমাদের একুশের চেতনার জন্ম হয়েছিল একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে। তৎকালীন পাকিস্তানে শতকরা ৫৬ জনের মুখের ভাষা বাংলা হলেও শতকরা সাতজনের মুখের ভাষা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। আর ১৯৪৮ সালে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
এর প্রতিবাদে গর্জে ওঠে বাঙালি। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে তারা আন্দোলন শুরু করে। ১৯৪৯ থেকে ১৯৫১ সালের মধ্যে ক্রমে জোরাল হয়ে উঠে বাংলা ভাষার মর্যাদা আদায়ের দাবি। ১৯৫২ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ‘রাষ্ট্রভাষা দিবস’ ও সাধারণ ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত হয়।
পাকিস্তান সরকার আন্দোলন দমন করার জন্য ১৪৪ ধারা জারির মাধ্যমে জনসমাগম, জনসভা ও মিছিল নিষিদ্ধ করে দেয়। ছাত্ররা সংগঠিতভাবে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করলে পুলিশ গুলি চালায়। শহিদ হন সালাম, রফিক, জব্বার, বরকতসহ আরও অনেকে।
পরদিন সারা রাত জেগে শহিদদের স্মরণে গড়া হয় শহিদ মিনার। পুলিশ তা ভেঙে ফেললে আবারও গড়ে ওঠে শহিদ মিনার। ভাষা আন্দোলনের ভেতর দিয়ে বাঙালি জাতিসত্তায় জন্ম নিয়েছিল একুশের চেতনা। এই চেতনা আমাদের জাতীয় জীবনে আত্মত্যাগের বীজমন্ত্র।
