নেতৃত্বে ইলিয়াস কাঞ্চন ও শওকত মাহমুদ
‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’র আত্মপ্রকাশ
১৮ দফা সামনে রেখে ২৭ সদস্যের অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ নামের দলটির তিনি চেয়ারম্যান। মহাসচিব হয়েছেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি এবং বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ। আর নির্বাহী চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র গোলাম সারোয়ার মিলন। শুক্রবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নতুন দলটির আত্মপ্রকাশের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়। দলটির স্লোগান ‘গড়ব মোরা ইনসাফের দেশ’। অনুষ্ঠানে দলের নাম ঘোষণা ও ইশতেহার পাঠ করেন শওকত মাহমুদ।
আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে ২৭ সদস্যের অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা করেন ইলিয়াস কাঞ্চন। কমিটির অন্য সদস্যা হলেন-ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল হক হাফিজ, এবিএম ওয়ালিউর রহমান খান, রেহানা সালাম, মো. আবদুল্লাহ, এমএ ইউসুফ ও নির্মল চক্রবর্তী। সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব এম আসাদুজ্জামান, যুগ্মমহাসচিব এবিএম রফিকুল হক তালুকদার রাজা, আল আমিন রাজু, নাজমুল আহসান, সমন্বয়কারী নুরুল কাদের সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক মুরাদ আহমেদ।
সদস্যরা হলেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর ইমরান, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল সাব্বির, প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক গুলজার হোসেন ও প্রচার সম্পাদক হাসিবুর রেজা কল্লোল। উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হলেন শাহ মো. আবু জাফর, অবসরপ্রাপ্ত মেজর মুজিব, ইকবাল হোসেন মাহমুদ, ফরহাদ হোসেন মাহবুব, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, আউয়াল ঠাকুর, তৌহিদা ফারুকী ও মামুনুর রশীদ। পরে এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে বলে জানান ইলিয়াস কাঞ্চন।
নতুন দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে নিরাপদ সড়কের জন্য তিন দশক ধরে নিজের আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ৩২ বছর নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনে যেভাবে আমি সততার সঙ্গে এদেশের মানুষের জন্য কাজ করেছি, আমি নতুন এই দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এদেশের জন্য সততার সঙ্গে কাজ করতে চাই। আমি আশা করব, আমাকে সহযোগিতা করবেন, অনুপ্রাণিত করবেন, ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ নামে নতুন দল হিসাবে আত্মপ্রকাশের আগে বৃহস্পতিবার আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন ‘জনতার বাংলাদেশ পার্টির’ নামের একটি দলের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম সবুজ খান। এ প্রসঙ্গে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, বাংলাদেশ আগে-পরে এরকম হতে পারে তো। এটা তো একই টাইপের নয়। না, এটাতে (দলের নামকরণ) কোনো কনফ্লিক্ট হওয়ার কারণ নেই। আরও একটা কথা হচ্ছে, উনি (উকিল নোটিশকারী) যে নামটির কথা বলেছেন, সেই নামটি কি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হয়েছে? নির্বাচন কমিশনে কাগজপত্র জমা দিয়েছেন? সেগুলো না জমা দিয়ে এগুলো করার কোনো মানে হতে পারে না। এ বিষয়ে দলের চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র গোলাম সারোয়ার মিলন বলেন, জাতীয় পার্টি নামে নিবন্ধন চারটা, জাসদের নামে চারটা নিবন্ধন। সুতরাং এখানে যারা জনতার নাম দিয়ে দল করেছেন, আমরা তাদের অভিনন্দন জানাই। চেয়ারম্যান সাহেব, উনি যথার্থ জবাব দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে সূচনা ইশতেহারে শওকত মাহমুদ দলের আত্মপ্রকাশের জন্য ৬টি কারণ এবং ১৮ দফা লক্ষ্যের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, প্রতিটি গণ-অভ্যুত্থান, বিপ্লব ও আন্দোলনের পরে সেসব সংগ্রামী চেতনায় নতুন নতুন রাজনৈতিক দলের অভ্যুদয় ঘটে। যেহেতু রাষ্ট্র সাজবে একাত্তর ও চব্বিশের গণ-জাগরণের চেতনায়, সেই আঙ্গিকে নতুন দলের আবির্ভাব অনিবার্য। জাতির এই মাহেন্দ্রক্ষণে জাতীয় প্রত্যাশায় সব প্রকার বৈষম্য, ফ্যাসিবাদ, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে জনকল্যাণ, ইনসাফ, সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে এবং গর্বিত জাতীয়তাবোধ দৃঢ় করতে তারা আজ নতুন দলের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দিচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দুঃখপ্রকাশ করেন শওকত মাহমুদ। তিনি বলেন, আমাকে গোয়েন্দা সংস্থা তুলে নিয়ে আমার বিরুদ্ধে যে ৭০টি মামলা, সেই মামলার একটির রায় ঘোষণা করা হবে-এই ভয় দেখিয়ে নির্বাচনে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালে যারা নির্বাচনে গেছে, ২০২৪ সালে নির্বাচনে যাওয়া আর ২০১৮ সালে নির্বাচনে যাওয়ার মধ্যে আমরা কোনো পার্থক্য দেখি না। ২০২৪ সালের নির্বাচনে যাওয়ার জন্য আমরা দুঃখপ্রকাশ করি; কিন্তু একই সঙ্গে যারা ২০১৮ সালে নির্বাচনে গেছেন এবং নির্বাচিত সংসদ-সদস্য হিসাবে ভূমিকা পালন করেছেন, তাদেরও তো দুঃখপ্রকাশ করা উচিত। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব এমএ আবদুল করীম, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, মুসলিম লীগের চেয়ারম্যান মহসিন রশীদ, জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদের সদস্য মোবারক হোসাইন, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান এবিএম খন্দকার গোলাম মূর্তজা, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনেন্ট জেনারেল নাজিম উদ্দিন, নৈতিক সমাজের প্রতিষ্ঠাতা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আমসা আমিন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের একাংশের মহাসচিব শাহ আহমেদ বাদল, গণআজাদী লীগের একাংশের সভাপতি আতাউল্লাহ খান প্রমুখ। আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গোলাম সারোয়ার মিলন, আসাদুজ্জামান। শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন জুলাই আন্দোলনে আহত ওয়াহেদ এবং নিহত পরিবারের সদস্য মিঠুন হাসান।
