Logo
Logo
×

শেষ পাতা

‘মধ্যস্বত্বভোগী’র কারণে অস্থির পেঁয়াজের বাজার

চট্টগ্রামে বেড়েছে মুরগি, সবজি, ডিমের দামও

Icon

আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

‘মধ্যস্বত্বভোগী’র কারণে অস্থির পেঁয়াজের বাজার

দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ‘মধ্যস্বত্বভোগী’ ব্যবসায়ীদের কারণে অস্থির পেঁয়াজের বাজার। ভরা মৌসুমে দাম কমার পরিবর্তের উলটো আরও বাড়ছে। গত সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ৬৫ টাকার কমে ভালোমানের পেঁয়াজ মিলছে না। আর পাইকারী বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৫ টাকায়। এখনো স্বাভাবিক হয়নি ভোজ্যতেল সরবরাহ। বাজারে এর দাম বাড়ানো হলেও নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দাম বেড়েছে মুরগি, সবজি ও ডিমের।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, একাধিক কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। অথচ এখন পেঁয়াজের ভরা মৌসুম। কৃষকরা যাতে পেঁয়াজের মূল্য পায়, সে কারণে পেঁয়াজের আমদানি অনুমতিপত্র (আইপি) বন্ধ রেখেছে সরকার। ফলে বর্তমানে দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে রয়েছে। দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লেও মজুতদারির কারণে দাম বাড়ছে। পাইকারী বাজারে মেহেরপুরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। এছাড়া দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৪ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৮ টাকায়। খুচরা বাজারে মেহেরপুরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়, দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৪ টাকায়। আর ভারতীয় ভালোমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকার বেশি দামে। মানভেদে কেজিপ্রতি ৫ টাকা কম-বেশি রয়েছে। পেঁয়াজের বাজার বাড়ার পেছনে মূল কারণটাই হচ্ছে একশ্রেণীর মধ্যস্বত্বভোগীর মজুতদারি। কয়েকটি সিন্ডিকেট কৃষকের কাছ থেকে কম দামে পেঁয়াজ কিনে বেশি দামে বিক্রির জন্য মজুত করে রাখছে। তারপর ধীরে ধীরে সেগুলো বাজারে ছাড়ছে। এ বছর পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। সে হিসাবে পেঁয়াজের দাম কমার কথা, কিন্তু এখন উলটো দাম বাড়ছে।

পেঁয়াজের আড়তদার আবদুল হামিদ বলেন, পেঁয়াজের বাজার চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর। চাক্তাই খাতুনগঞ্জে গুটিকয়েক ব্যক্তি পেঁয়াজ আমদানি করেন। বাকিরা কমিশনের ভিত্তিতে বিক্রি করেন। অর্থাৎ পেঁয়াজ আমদানিকারক যে দাম নির্ধারণ করে দেন, সেই দামে বিক্রি করেন। এর বিনিময়ে কেজিপ্রতি তারা নির্ধারিত একটি কমিশন পেয়ে থাকেন। তাই আড়তদারদের পক্ষে দাম উঠা-নামা করার কোনো সুযোগ নেই। মধ্যস্বত্বভোগীর কারণে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, গত কয়েক মাস ধরে ভোজ্যতেলের বাজার অস্থির। আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করছে না। ফলে বাজারে তেলের কৃত্রিম সংকটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে বাজারে ভোজ্যতেলের তীব্র সংকটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে দামও হু হু করে বাড়ছে। সরকার দুই দফায় শুল্ক-কর কমিয়েছে। তারপরও দাম আরও বেড়েছে। একাধিক কারণে ভোজ্যতেলের বাজার অস্থির। দেশের ডলার সংকট এখনো চলমান। আমদানিকারকরা আগের মতো ভোজ্যতেল আমদানি করছেন না। বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দামও আগের চেয়ে বেড়েছে। এসব কারণে ভোজ্যতেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। দেশের ইতিহাসে পাম অয়েলের দাম এবারের মতো আর বাড়েনি। মূলত ইন্দোনেশিয়ার উৎপাদন সংকট, বায়োডিজেলে পাম অয়েল ব্যবহারের পরিমাণ ৫ শতাংশ বৃদ্ধিজনিত দাম।

বাজারে ১ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা, ২ লিটার ৩৯০ থেকে ৪০০ টাকা, ৫ লিটার বোতল ৯৫০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ১৮০ টাকার বেশি দামে। অথচ সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৯ টাকা, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬৯ টাকায় বিক্রি করার কথা। কিন্তু এ দামে মিলছে না ভোজ্যতেল। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ফার্মের মুরগির বাদামি ডিমের দাম ডজনে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে এক ডজন ডিম বিক্রি হয়েছিল ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়, যা শুক্রবার ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া, রসুনের দামও কিছুটা বেড়েছে। চায়না রসুন ১৮০ থেকে বেড়ে খুচরা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২২০ টাকায়। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে ভারতীয় আদার দাম, যা প্রতি কেজি ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

সবজির বাজারদর : আলু ছাড়া বেশির ভাগ সবজির দাম বেড়েছে। অধিকাংশ সবজির দামই ৮০ টাকার বেশি। প্রতি কেজি বরবটি, কচুর লতি, পটোল, চিচিঙ্গা, বেগুন ও শালগমের দাম রাখা হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা করে। কাঁকরোল ও শজনের দাম আরও বেশি। প্রতি কেজি কাঁকরোল ১২০ টাকা ও শজনে ১৪০-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে করলা, লাউ, ঝিঙে, ধুন্দুল, ঢেঁড়স ও পেঁপের কেজি এখন ৬০ থেকে ৮০ টাকা। কম দামের মধ্যে রয়েছে শুধু টমেটো, যার কেজি ৪০-৫০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি আলু ২০-২৫ টাকা ও কাঁচামরিচ ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম কিছুটা কম রয়েছে। শুক্রবার এক কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৯০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৫০-২৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এদিকে মাছের দাম আগের মতোই রয়েছে। রুই মাছ ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, কাতল ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, বেলে ৫০০ থেকে ১ হাজার ৩০০, কালিবাউশ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, কাঁচকি ৬০০, কৈ ২৮০ থেকে ৩০০, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০, শিং মাছ ৫০০ থেকে ৭০০, টেংরা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ পেঁয়াজ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম