Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সাগরে নিম্নচাপ, ভারি বৃষ্টি-ঝড়ো হাওয়া

বরিশালের মেঘনায় ৬ বাল্কহেড ডুবি, প্লাবিত সুন্দরবন

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বরিশালের মেঘনায় ৬ বাল্কহেড ডুবি, প্লাবিত সুন্দরবন

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ভারি বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে দেশের উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ সময় ঝড়ো হাওয়ায় অনেক বাড়িঘর ভেঙেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজার- হাজার মানুষ। বরিশালে মেঘনা নদীতে ছয়টি বাল্কহেড ডুবেছে। নোয়াখালীতে ভাঙনের মুখে দেড়শতাধিক বাড়িঘর। কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

বরিশাল : ঝড়ো বাতাসে বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলাসংলগ্ন মেঘনা নদীতে ছয়টি বাল্কহেড ডুবে গেছে। এ সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আরও একটি বাল্কহেড চরে আটকে যায়। তবে এ ঘটনায় কেউ নিখোঁজ হননি। শনিবার বিকালে মেহেন্দিগঞ্জের কালীগঞ্জ নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক এনামুল হক এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে ঝড়ের সময় মেহেন্দিগঞ্জের মল্লিকপুর গ্রামসংলগ্ন মেঘনা নদীতে পাঁচটি বাল্কহেড ডুবে যায়। একই সময় হিজলা উপজেলার ধুলখোলা ও আলিগঞ্জসংলগ্ন মেঘনা নদীতে একটি পাথরবোঝাই বাল্কহেড ডুবে যায়।

ভোলা : জেলায় শনিবার দমকা বাতাস বন্ধ হয়েছে। তবে কমেনি বৃষ্টি। ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। তবে সাগরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত অব্যাহত থাকায় ভোলা-লক্ষ্মীপুর, ভোলা-মনপুরা, মনপুরা-ঢাকা রুটের লঞ্চ ও সি-ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। ১৩ জেলেসহ ডুবে যাওয়া ট্রলারের নিখোঁজ যাত্রী মো. জসিম উদ্দিনের সন্ধান শনিবার বিকাল পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) : পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। শুক্র ও শনিবার জোয়ারের সময় কয়েক দফা পানি বাড়ায় সাগরের ঢেউ তীব্র আঘাত হানে সৈকতে। এতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে নিম্নাঞ্চলগুলো। ঝুঁকিতে পড়েছেন সে সব স্থানের বাসিন্দারা। এ পরিস্থিতিতে শনিবার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী মানববন্ধন করে সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। ব্যবসায়ী, রাজনীতিকসহ স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। তাদের বক্তব্য, উপকূল রক্ষায় টেকসই ব্যবস্থা না নিলে পুরো কুয়াকাটা হুমকির মুখে পড়বে।

সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কুয়াকাটা ঝাউবাগানসংলগ্ন জাতীয় উদ্যান ও বেড়িবাঁধসংলগ্ন এলাকা। কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী কুয়াকাটার হোসেনপাড়া এলাকায় সড়কের প্রায় ৩০ মিটার অংশ সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। গ্রামে ঢুকেছে সমুদ্রের পানি। ডিসি পার্কসংলগ্ন সড়কে নতুন করে দেখা দিয়েছে ভাঙন। উপড়ে গেছে বহু গাছ। স্থানীয়রা জানান, কুয়াকাটার প্রায় ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতের নানা স্থানে বালু সরে গিয়ে নিচের মাটি বেরিয়ে এসেছে। এতে পর্যটনের মূল আকর্ষণও ধ্বংসের পথে। এদিকে, দফায় দফায় প্লাবনে বেড়িবাঁধের বাইরের শতাধিক পরিবার ঘরছাড়া হয়েছেন। ভেসে গেছে অনেক মাছের ঘের ও পুকুর। কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, মৎস্য খাতে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণে কাজ চলছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পরিবেশবাদীরা বলছেন, ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে গভীর পর্যবেক্ষণ, জিও ব্যাগ বসানো এবং স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের বিকল্প নেই।

মোংলা (বাগেরহাট) : মোংলাসহ সুন্দরবন উপকূলে থেমে থেমে মাঝারি বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বইছে। এতে বন্দরে অবস্থানরহ বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য খালাস ব্যাহত হচ্ছে। বন্দরের পশুর চ্যানেলের বহিঃনোঙ্গর ও জেটিতে আমদানি করা চাল, ক্লিংকার, কয়লা, পাথর ও ফ্লাইঅ্যাসসহ বিভিন্ন পণ্যবোঝাই ১১টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। বৃষ্টি থামলে খালাসের কাজ চলে। আবার বৃষ্টি এলে কাজ বন্ধ রাখা হয়। পশুর নদীসহ সুন্দরবনের অভ্যন্তরের নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ২ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বিভিন্ন পর্যটন স্পটসহ নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মোংলা পৌর শহরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ডুবে গেছে শতাধিক চিংড়ি ঘের ও মাছের খামার।

নোয়াখালী : দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার মেঘনা নদীতে প্রবল জোয়ারের কারণে কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর ইউনিয়ন ও চরএলাহী ইউনিয়নের কিছু অংশ ও হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে দেড়শতাধিক বাড়িঘর।

ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) : ইন্দুরকানীতে বেড়িবাঁধ না থাকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। পাউবো বন্যাপরবর্তী নিম্নমানের বেড়িবাঁধ করায় অতিরিক্ত পানির চাপে বিলীন হয়ে গেছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছেন।

চাঁদপুর : চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারে পানির উচ্চতা বেড়েছে প্রায় ৩ ফুট। চাঁদপুর সদর ও হাইমচর অঞ্চলের সড়ক, পুকুর ও বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের অধিকাংশ অধিবাসী। বর্তমানে শহর রক্ষা বাঁধের পুরান বাজার এলাকায় নদীর পানি সড়ক সমান অবস্থায় রয়েছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম