Logo
Logo
×

অল্পকথা

স্বেচ্ছাসেবা আত্মবিশ্বাস বাড়ায়

Icon

নাজমুল হাসান

প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গত ৫ ডিসেম্বর ছিল আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবস। আমাদের দেশের স্বেচ্ছাসেবকরা প্রতিনিয়ত মুমূর্ষু রোগীর জন্য রক্ত সংগ্রহ, ছিন্নমূল শিশুদের শিক্ষাদান, অসহায় মানুষদের সহযোগিতাসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে থাকে। তারা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুঃসময়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জনকল্যাণমূলক কাজে অংশ নিয়ে থাকে। স্বেচ্ছাসেবা ছাড়াও জরুরি প্রয়োজনে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকে। যেমন-বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস-পরবর্তী সময়ে ত্রাণ ও সেবা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ। স্বেচ্ছাসেবকরা এ ধরনের কাজগুলো কোনো প্রাপ্তির আশা ছাড়াই করে থাকে। স্বেচ্ছাসেবায় নিয়োজিত অধিকাংশ স্বেচ্ছাসেবকই শিক্ষার্থী, বিশেষ করে তারা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত। কিছু ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও শিক্ষকরাও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এসব কার্যক্রমে অংশ নিয়ে থাকেন। দেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চল পর্যায়েও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে উঠেছে। এসব সংগঠনের মাধ্যমে তরুণরা মানবতার সেবায় নিজেদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিয়োজিত করে। পড়াশোনার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসাবে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে যুক্ত হলে যোগাযোগের দক্ষতা তৈরি হয়, সেই সঙ্গে নিজের ভাবনা উপস্থাপনের কৌশলও শেখা যায়। দলের সঙ্গে কাজ করা, নেতৃত্ব দেওয়া, সময় ব্যবস্থাপনা, আত্মবিশ্বাস, ইন্টারপার্সোনাল দক্ষতাসহ বিভিন্ন দক্ষতা শিক্ষার্থীরা সংগঠন থেকে শিখতে পারে। স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমের সবচেয়ে গুরুত্বপূণ বিষয় হলো, এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সামাজিক জড়তা দূর হয়। নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়া, স্পষ্ট ভাষায় কথা বলাসহ যে কোনো বিষয়ে নিজের অবস্থান প্রকাশ করতে শেখে শিক্ষার্থীরা।

যে কোনো কাজের জন্যই আত্মবিশ্বাস থাকা জরুরি। আত্মবিশ্বাসী হলে সব কাজে জয় আসবেই। জীবন গড়ার লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে আত্মবিশ্বাস থাকতেই হবে। বহু শিক্ষার্থী আছে, যারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে যুক্ত হয়েই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। যে ছেলে অনেকের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে ভয় পেত, সে-ই এখন মঞ্চে তুখোড় বক্তৃতা দিচ্ছে। নিজের শক্তির জায়গাগুলো জানা যায় বলেই স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম থেকে মানুষ আত্মবিশ্বাসী হয়।

স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের লিডারশিপ স্কিল বা নেতৃত্বদানের যোগ্যতা অর্জিত হয়। সংগঠনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে যখন কোনো শিক্ষার্থী অনেক মানুষকে একসঙ্গে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করে এবং নির্ধারিত কাজটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়-এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর যে গুণটি আমরা দেখতে পাই, সেটিই লিডারশিপ স্কিল। এছাড়া সংগঠনের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে নেতৃত্বের চর্চা হয়। এভাবে চর্চার মাধ্যমেই একজন শিক্ষার্থী অতি সহজেই লিডারশিপ স্কিল অর্জন করতে সক্ষম হয়। স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করার সময় একজন শিক্ষার্থীকে অনেক মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হয়, বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণ করতে হয়। ফলে তার কথা বলার জড়তা দূর হয়, তৈরি হয় পরিকল্পনা করার সক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ করার দক্ষতা, সৃষ্টি হয় দলগত কাজ বা সাংগঠনিক কাঠামো সম্পর্কে ধ্যান-ধারণা, বৃদ্ধি পায় আত্মবিশ্বাস ও স্মার্টনেসসহ নানাবিধ গুণ। এসব গুণ চাকরির ক্ষেত্রেও অনেক কাজে লাগে, যা যে কোনো শ্রেণি বা পেশার মানুষের সঙ্গে মিশতে পারার সক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হয়। স্বেচ্ছাসেবক হওয়া এক ধরনের যোগ্যতা। স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ শুধু ক্যারিয়ারকে সফলভাবে গড়তে সাহায্য করে না-ধর্মীয়, নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি অর্জনেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

নাজমুল হাসান : রোভার স্কাউট লিডার, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এয়ার রোভার স্কাউট গ্রুপ

nazmul33-3424@diu.edu.bd

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম