|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এখন মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভয় পেতে হয়! সেটা দূরের মানুষকে নয়, বরং কাছের মানুষকে! পর মানুষকে নয়, বরং আপন মানুষকে! একটা সময় কুকুরে ভয় ছিল, সাপে ভয় ছিল, এমনকি বিচ্ছুতেও ভয় ছিল। এখন ভয় মানুষে। স্বার্থের ঘুঁটি উলটে গেলে পালটা হামলা চালাতে দ্বিধা করে না মানুষ।
যে মানুষের মধ্যে নৈতিকতা নেই, যারা কথায় কথায় মিথ্যা বলতে পারে, নিমিষেই চোখ উলটে দিয়ে পলটি নিতে পারে, চোগলখুরি করতে পারে, তাদেরকে ভরসা করলে মানুষের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে যায়। মানুষের প্রতি ভয় জেঁকে বসে। যাদের কাছে অভ্যাসগত বা আয়েশি ধনী লোকের জীবনের বাইরে সত্য ও সততার কোনো দাম নেই, নৈতিক জীবনের কোনো মূল্য নেই, সেই মানুষদের ভয় পেতেই হবে। যারা জীবনে অঢেল টাকা-সম্পত্তি বানানোর ধান্ধায় থাকে, কেবল ক্ষমতাবান হওয়াকেই বড় সাফল্য ও সম্মানের মনে করে, তাদের ভয় না পেয়ে উপায় আছে? যাদের কাছে চোরের জীবন, দুর্নীতিবাজ-ঘুসখোরের জীবন, লম্পট-নেশাখোরের জীবন, দালালি ও সুবিধাভোগীর জীবন সবচেয়ে আকর্ষণীয়, তাদেরকে ভয় করতেই হবে। যারা চাকরির প্রতিশব্দ বলতে ক্ষমতা ভাবে, যারা আয়ের সমার্থক হিসাবে অবৈধ উপার্জন ভাবে, যারা ক্ষমতা দেখানোর নামে দুর্বলকে আঘাত করে মজা পায়, তাদের ভয় না পেলে, তাদের থেকে সাবধান না হলে বিপদ হবে। সবচেয়ে বড় কথা, মন খারাপ হয়ে যাবে। মানুষ এখন মন খারাপের প্রতিষেধকের চেয়ে ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকায় বেশি অবতীর্ণ হয়। কারও ক্ষতি করতে পারলেই তার বড় তৃপ্তি।
দেখা যায়, অনেকের ক্ষতির যত খতিয়ান, তার বেশিরভাগই ঘটে কাছের মানুষের দ্বারাই। অনেক আপনজন ক্ষুদ্র্র স্বার্থের জন্য জীবনসংহারকের মতো শত্রুতে পরিণত হয়। একসঙ্গে ওঠাবসা, একসঙ্গে আড্ডা মাতানো মানুষরা যখন বিগড়ে যায়, তখন ভীত না হয়ে উপায় থাকে না। যত ভয় তা মানুষকে ঘিরেই। জঙ্গলে বাঘ আর জলের কুমির কতজনের আর ক্ষতি করেছে? মানুষের ক্ষতি মানুষের দ্বারাই হয়েছে বেশি। তাই মানুষকেই যত ভয়! কথার ভয়, ক্ষমতার ভয় এবং জীবনহানির ভয়। তাই হয়তো বলা হয়-মানুষ চেনা বড় দায়! তাই শত ভয়-উৎকণ্ঠা নিয়েই মানুষকে চলতে হয়। সকাল-বিকাল মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়। অনেকের সঙ্গে দেখা হয়। কারও আচরণ হৃদয়কে জয় করে, আবার কেউ যেন কলিজা ছিড়ে খায়। ক্ষতিকর মানুষদের এড়াতে পারলে, দুর্নীতিবাজ-ঘুসখোরদের কবল থেকে নিরাপদ দূরে থাকতে পারলে অবশ্য মানুষের জীবন বড়ই সুন্দর। তবে সেই জীবনকে উপভোগের জন্য, জীবনের সুধা পানের জন্য মানুষের সামনে নিজের সম্মান অরক্ষিত রাখা যাবে না।
রাজু আহমেদ : প্রাবন্ধিক
raju69alive@gmail.com
