Logo
Logo
×

অল্পকথা

কৃত্রিম রক্ত!

Icon

প্রদীপ সাহা

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মানবদেহে রক্তের ভূমিকা ও প্রয়োজনীয়তার কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। রক্ত খাদ্যবস্তু কোষগুলোয় সরবরাহ করে এবং কোষ থেকে বর্জ্যপদার্থ বর্জ্য নিষ্ক্রমণ অঙ্গে নিয়ে যায়। তাছাড়া রক্ত শ্বেত কণিকার মাধ্যমে আমাদের রোগ প্রতিরোধ করে। অনেক সময় বিভিন্ন কারণে কিংবা কোনো দুর্ঘটনায় আমাদের শরীরে রক্ত পরিসঞ্চালনের দরকার হয়। প্রয়োজনের সময় রক্ত সংগ্রহ করা বা নিরাপদ রক্ত পাওয়া অনেক সময় হয়ে ওঠে দুঃসাধ্য ও কষ্টকর। অর্থ থাকলেও কখনো কখনো হাতের কাছে পাওয়া যায় না প্রয়োজনীয় গ্রুপের নিরাপদ রক্ত। বিজ্ঞানীরা রক্তকে প্রধানত চারটি গ্রুপে ভাগ করেছেন-‘এ’, ‘বি’, ‘এবি’ এবং ‘ও’। রক্তের প্রতিটি গ্রুপের আবার নেগেটিভ ও পজিটিভ দুটি ভাগ রয়েছে। কোন রক্ত কাকে দান করা যাবে, তার ওপর ভিত্তি করেই রক্তের গ্রুপ নির্ধারণ করা হয়। রক্তের গ্রুপ প্রধানত নির্ভর করে ‘অ্যান্টিজেনে’র ধরনের ওপর। এই অ্যান্টিজেন থাকে রক্তের কোষপর্দায়। রক্তের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোহিত কণিকা থাকে বলে কোষপর্দায় থাকা অ্যান্টিজেন সবচেয়ে গুরুত্ব বহন করে। মজার তথ্য হলো, ‘এ’ গ্রুপের রক্তে ‘এ’ অ্যান্টিজেন, ‘বি’ গ্রুপের রক্তে ‘বি’ অ্যান্টিজেন এবং ‘এবি’ গ্রুপের রক্তে ‘এ’ ও ‘বি’ উভয় অ্যান্টিজেন থাকলেও ‘ও’ গ্রুপের রক্তে কোনো অ্যান্টিজেন থাকে না। রক্তের গ্রুপের এই হেরফেরের কারণে একজনের রক্ত ইচ্ছা করলেই আরেকজনের শরীরে সঞ্চালন করা সম্ভব হয় না বা আরেকজন তা গ্রহণ করতে পারে না। এক্ষেত্রে রক্তের গ্রুপের পাশাপাশি আরও অনেক কিছুরই মিল থাকতে হয়। এক শরীর থেকে অন্য শরীরে রক্ত সঞ্চালনের মধ্যে দাতার অ্যান্টিবডি আর গ্রহীতার অ্যান্টিজেনের মধ্যে মিল থাকলে চলবে না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ‘ও’ নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত যে কেউ গ্রহণ করতে পারে অর্থাৎ সবার শরীরের জন্যই তা গ্রহণযোগ্য।

রক্ত নিয়ে ভাবনার দিন শেষ হতে চলছে। ব্রিটেনের গ্লাসগো ইউনিভার্সিটির স্টেম সেল গবেষক জো মাউন্টফোর্ড কৃত্রিম রক্ত তৈরি করেছেন এবং প্রথমবারের মতো ভ্রূণসংক্রান্ত স্টেম সেল থেকে মানুষের রক্তের লোহিত কণিকা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। মি. জো মাউন্টফোর্ড এবং স্টেম সেলের অন্যান্য গবেষক প্রজনন ক্লিনিক থেকে অতিরিক্ত ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) ভ্রূণ অর্থাৎ টেস্টটিউব বেবি সংগ্রহ করে তা থেকে রক্তের লোহিত কণিকা উৎপাদন করার নিশ্চয়তা দিয়েছেন। ওয়েলকাম ট্রাস্টের অনুদানে পরিচালিত ৩০ লাখ পাউন্ডের প্রকল্পের মাধ্যমে কৃত্রিম রক্ত অর্থাৎ রক্তের বিকল্প উৎস হিসাবে ‘ও’ নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত তৈরি করেছেন। গবেষক জো মাউন্টফোর্ড বলেন, আইভিএফ ভ্রূণের ভেতর ‘আরসি-৭’ নামে যে স্টেম সেলটি রয়েছে, সেটি রূপান্তর করে অক্সিজেন বহনকারী হিমোগ্লোবিন তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। আর এই হিমোগ্লোবিন তৈরির মাধ্যমে সহজেই তৈরি হবে ‘ও’ নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত।

এক জরিপে জানা যায়, ব্রিটেনে রক্ত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো রক্তের সম্পূর্ণ প্রয়োজন মেটাতে পারে না এবং বছরে তাদের প্রায় ২৫ লাখ রক্তদাতার ঘাটতি থেকে যায়। আর তাই প্রকল্পটি এই বিরাট সমস্যাকে সামনে রেখে বছরে প্রায় ১১ কোটি লিটার রক্ত তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। গবেষকরা মনে করেন, এই কৃত্রিম রক্তের মাধ্যমে সমগ্র ব্রিটেনের রক্তের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। আশার কথা হচ্ছে, সবকিছু ঠিক থাকলে ব্রিটেনে এই কৃত্রিম রক্তের ব্যবহার সম্ভব হবে বলে গবেষকরা মনে করছেন।

প্রদীপ সাহা : প্রাবন্ধিক

pradipsaha509@gmail.com

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম