Logo
Logo
×

অল্পকথা

ক্ষতিকর মাছ ‘সাকার’

Icon

মো. মাহির দাইয়ান

প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাস্তুতন্ত্রে অস্থানীয় প্রজাতির উপস্থিতি স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের কারণ হতে পারে। এর একটি উদাহরণ হলো সাকার মাছ। এটি এমন এক প্রজাতির মাছ, যা বিশ্বব্যাপী জলাভূমির বাস্তুতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠেছে। মূলত আমাজন অববাহিকা থেকে মাছটি সারা বিশ্বের বিভিন্ন জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি স্থানীয় প্রজাতি বিনাশ করছে এবং সূক্ষ্মভাবে পরিবেশগত ভারসাম্যকে ব্যাহত করছে। সাকার মাছ হলো একটি সর্বভূক ধরনের শিকারি মাছ। এর খাদ্যতালিকায় রয়েছে ছোট মাছ, ক্রাস্টেসিয়ান, ছোট ছোট উভচর প্রাণী ও তার লার্ভা। এছাড়াও এটি অন্যান্য জলজ প্রাণীও খেয়ে থাকে। ফলে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিছু এলাকায় সাকার ফিশ দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছকে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।

স্থানীয় প্রজাতির ওপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব রাখা ছাড়াও সাকার মাছের উপস্থিতি সমগ্র খাদ্য জাল এবং পরিবেশগত প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে। এর সুদূরপ্রসারী পরিণতি হতে পারে পানির গুণমান থেকে পুষ্টির চক্র পর্যন্ত সবকিছুকে বিনষ্ট করা। শিকার ছাড়াও সাকার ফিশ বাসা বাঁধার জায়গা এবং প্রজনন স্থানের জন্য স্থানীয় প্রজাতির মাছের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে। তাদের আক্রমণাত্মক আচরণ স্থানীয় প্রজাতির বিলুপ্তির প্রক্রিয়া আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। দেশে অ্যাকুয়ারিয়াম ব্যবসা এবং বাসাবাড়িতে জলজ প্রাণী পালনের মাধ্যমে সাকার মাছের আবির্ভাব ঘটেছে বলে মনে করা হয়। মাছটির বিশেষ বর্ণ এবং প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার মতো বৈশিষ্ট্যগুলো মানুষকে আকৃষ্ট করে এবং তা পালনে আগ্রহী করে তোলে। কিন্তু অ্যাকুরিয়ামের অন্য মাছের ক্ষতি বা লালনপালনে অসুবিধা হলে মানুষ তা ড্রেনে বা ছোট জলাশয়ে ছেড়ে দেয়। পরবর্তী সময়ে সাকার মাছ ভেসে যায় মুক্ত জলাশয়ে। একবার জলাশয়ে চলে গেলে সাকার মাছ দ্রুত প্রজনন ঘটিয়ে বংশবিস্তার করতে পারে। ফলে এদের নির্মূল প্রচেষ্টা চ্যালেঞ্জিং ও ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়ায়। তবে শুরুতেই শনাক্তকরণ, কোনো জলাশয়ে না ছাড়া এবং জনসচেতনতার মতো সক্রিয় পদক্ষেপ এই আক্রমণাত্মক প্রজাতির মাছের বিস্তার রোধ করতে এবং দুর্বল বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করতে সহায়ক হতে পারে। সাকার মাছ যেখানেই রাখা হোক না কেন, তা জলাভূমির জীববৈচিত্র্যের জন্য একটি বড় হুমকি। এর আক্রমণাত্মক আচরণ, দ্রুত প্রজনন এবং প্রতিযোগিতামূলক বৈশিষ্ট্য এটিকে একটি ক্ষতিকর মাছে পরিণত করেছে। বিশ্বব্যাপী জলজ বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য সাকার মাছের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা অপরিহার্য।

মো. মাহির দাইয়ান : শিক্ষার্থী, পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম