বিশেষ অপরাধ পর্যালোচনা সভা
পুলিশে নিষ্ক্রিয়দের সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ
ফাইল ছবি।
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পুলিশের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সমর্থকরা এখনো দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে এ বাহিনীর মধ্যে নানা আলোচনা রয়েছে। ফলে মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করা যেসব পুলিশ সদস্য এখনো কাজে শৈথিল্য দেখাচ্ছেন, অপারেশনাল গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকেও গাছাড়া ভাব রয়েছে-এমন সদস্যদের বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ওইসব সদস্যদের চিহ্নিত করে অপারেশনাল কার্যক্রম থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
সোমবার রাজধানীর রাজারবাগে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের হল অব প্রাইডে অনুষ্ঠিত পুলিশের বিশেষ অপরাধ পর্যালোচনা সভায় (ক্রাইম কনফারেন্স) তিনি এ নির্দেশ দেন। সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পুলিশের জন্য এক চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতা পুলিশের রয়েছে। অতীতে নির্বাচন কেন্দ্র করে পুলিশ সম্পর্কে জনমনে যে নেতিবাচক ইমেজ (ভাবমূর্তি) তৈরি হয়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসার একটি বড় সুযোগ আগামী নির্বাচন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে জনগণের আস্থা অর্জনে সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে। পুলিশপ্রধান নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশনা দেন। তিনি এক্ষেত্রে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। অস্ত্র উদ্ধারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষিত পুরস্কার সম্পর্কে প্রচারণা বাড়ানোর ওপরও জোর দেন তিনি। আইজিপি গুমসংক্রান্ত কমিশনে অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে মামলা করার জন্য মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
এছাড়া কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়া পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট যথাসময়ে প্রদান নিশ্চিত করার জন্য জেলা পুলিশ সুপারদের প্রতি আহ্বান জানান আইজিপি। তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে উদ্ভূত মামলা বিশেষ গুরুত্বসহ তদন্ত ও নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেন। মামলা তদন্তের গুণগত মান বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সভায় অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) খোন্দকার রফিকুল ইসলাম দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা ও অপরাধ পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরেন। ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী, র্যাব মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, এসবি প্রধান মো. গোলাম রসুল প্রমুখ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সভায় অনলাইনে যুক্ত থাকা জেলা পুলিশ সুপাররা (এসপি) তাদের আলাদা বেতন কাঠামোসহ একগুচ্ছ সংকটের কথা তুলে ধরেন পুলিশ প্রধানের সামনে। বিশেষ করে প্রশাসনিক ও অপারেশনাল নানা বিষয়ে প্রতিবন্ধকতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কার বিষয়ে কথা বলেন তারা। ঢাকার পার্শ্ববর্তী একটি জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) বলেছেন, তার এলাকায় ইসলামী দলগুলো মব সৃষ্টির চেষ্টা করছে। বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আরেক এসপি, রাউজানে যুবদল নেতাকে হত্যার জেরে তার এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয় তুলে ধরেন। অপরাধীরা বিভিন্ন কোর্ট থেকে জামিনে বের হচ্ছে ফলে তার এলাকার আইনশৃঙ্খলার অবনতির শঙ্কা তৈরি হচ্ছে বলে জানান আরেক এসপি। দুর্ধর্ষ অপরাধীরা যেন জামিনে ছাড়া না পায় সে বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে আইজিপির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। আরেক এসপি বলেছেন, আসামি জামিনে বের হলে ‘বেইল বন্ড’ দেয় না। (বেইল বন্ড হলো একটি লিখিত চুক্তি যা আসামির জামিনের শর্ত পূরণ নিশ্চিত করে, যাতে তাকে আদালতের পরবর্তী কার্যক্রমে উপস্থিত থাকার জন্য মুক্তি দেওয়া হয়)। ঠিকমতো রেজিস্টার মেইনটেন করা হয় না। এটা যেন মেইনটেইন করা হয় সে বিষয়ে তিনি অনুরোধ করেন।
আসামি গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করার জেরে পরবর্তীতে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করছে উল্লেখ করে এক এসপি বলেন, আসামি পুলিশের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলার আবেদন করলে কোর্ট থেকে অনেক সময় পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে।
দেশের সমুদ্র তীরবর্তী মাদকপ্রবণ একটি জেলার এসপি বলেন, তার এলাকায় বড় বড় ইয়াবার মামলার আসামিরা জামিনে বের হয়ে যাচ্ছে। এসব আসামি গ্রেফতার করা কষ্টকর। এভাবে জামিনে বের হলে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আরও উৎসাহিত হবে। দেশের একটি দ্বীপ জেলার এসপি পুলিশের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো দাবি করে বলেন, পুলিশ সারাদিন রাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করে। রাত ২টা, ৫টা সব সময় ডিউটি করতে হয়। পুলিশের কোনো বিশেষ দিনও থাকে না। তাই পুলিশের জন্য আলাদা বেতন স্কেল দেওয়ার দাবি করেন তিনি।

