Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

ঝুলে গেল এনসিপি-এবি পার্টিসহ ৭ দলের জোট

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঝুলে গেল এনসিপি-এবি পার্টিসহ ৭ দলের জোট

এনসিপি, এবি পার্টিসহ ৭ দলের সমন্বয়ে সম্ভাব্য নির্বাচনি জোট আলোচনাতেই ঝুলে গেছে। বৃহস্পতিবার জোটের আত্মপ্রকাশ করার কথা থাকলেও দলগুলোর মধ্যে মতভেদ থাকায় শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ‘আপ বাংলাদেশ’ নিয়ে তীব্র ‘আপত্তি’ রয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)। এছাড়া জোট-পরবর্তী সময়ে বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে ‘আসন সমঝোতার’ ইস্যু নিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে দ্বিধাবিভক্তি দেখা দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত জোট হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা থাকলেও উদ্যোক্তরা বলছেন, প্রয়োজনে ৪-৫টি দল নিয়ে জোট আত্মপ্রকাশ করবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে জোটের ঘোষণা দিতে চান তারা। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার জন্য কয়েকদিন সময় নিতে চান দলগুলোর শীর্ষ নেতারা।

সূত্র জানায়, এনসিপি, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), আপ বাংলাদেশসহ আরেকটি দল নিয়ে বৃহস্পতিবার জোট ঘোষণার দিনক্ষণ চূড়ান্ত ছিল। এর আগে বুধবার মধ্য রাতে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির কার্যালয়ে বৈঠক করেন এনসিপি, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতারা। সেখানে আপ বাংলাদেশ নিয়ে আপত্তি জানায় এনসিপি। গণঅধিকার পরিষদের শীর্ষ এক নেতা জোট-পরবর্তী কর্মকাণ্ড কী হবে, তা নিয়ে আপত্তি জানান। এতেই জোট ঘোষণা আটকে যায়।

জানতে চাইলে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বৃহস্পতিবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, আপ বাংলাদেশ নিয়ে জোট গঠনে এনসিপি আপত্তি জানিয়েছে। এছাড়া জোটের সিদ্ধান্ত নিয়ে গণঅধিকার পরিষদ দুই দিন সময় নিয়েছে। আশা করি, কয়েকদিনের মধ্যেই জোট আত্মপ্রকাশ করবে। এনসিপি, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও জেএসডি-এই পাঁচটি দলের সমন্বয়ে একটি রাজনৈতিক জোট গঠনের আলোচনা চলছে, যা নির্বাচনি জোটে রূপান্তরিত হবে। জোট যদি হয়, তাহলে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই হবে। যে কয়টি দলের সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত হবে, তাদের নিয়েই জোট গঠন হবে।

জানা যায়, বুধবার বিকালে সম্ভাব্য নির্বাচনি জোটের লাভ-ক্ষতি নিয়ে এনসিপির নির্বাহী কাউন্সিলে প্রায় চার ঘণ্টা আলোচনা হয়। সেখানে বেশির ভাগ নেতা জোটের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ইতিবাচক সাড়া দেন। তবে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের একাংশের উদ্যোগে গঠিত রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম আপ বাংলাদেশকে (ইউনাইটেড পিপল বাংলাদেশ) এই জোটে রাখার প্রশ্নে এনসিপির বেশির ভাগ নেতা নেতিবাচক মত দেন। পরে রাতেই বাংলামোটরের কার্যালয়ে এনসিপির সঙ্গে এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতারা বৈঠক করেন। শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্যকার আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি।

সূত্র আরও জানায়, রাতের ওই বৈঠকে এনসিপির পক্ষে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দুই মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী; এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু; রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম এবং গণঅধিকারের সভাপতি নুরুল হক নুর, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান, সিনিয়র যুগ্মসাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ ও শহিদুল ইসলাম অংশ নেন। তাদের একজন সম্ভাব্য জোটের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানান। তার মতে, জোট গঠনের পরবর্তীকালে কোনো আসন সমঝোতা হলে তা শুধু বিএনপির সঙ্গেই করতে হবে। যদিও বৈঠকে এনসিপিসহ অন্য দলগুলোর নেতারা বলেছেন, শুধু বিএনপি নয়, প্রয়োজনে জামায়াতের সঙ্গেও আসন সমঝোতা হতে পারে। এ নিয়ে বৈঠকে গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি দেখা দেয়। রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত কয়েকটি বিষয়ে মীমাংসা না হওয়ায় কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়।

গণঅধিকার পরিষদের শীর্ষ এক নেতা বলেন, জোট গঠনের বিষয়ে বৈঠকে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আপ বাংলাদেশ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে এনসিপি। এছাড়া জোটের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়েও মতভেদ রয়েছে। সম্ভাব্য জোটের বিষয়ে এখনো আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।

এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব ও মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন সাংবাদিকদের এক বার্তায় জানান, এনসিপির সঙ্গে কিছু দলের সমন্বয়ে বৃহস্পতিবার কোনো জোট ঘোষণা হচ্ছে না। আলোচনা চলছে। চূড়ান্ত হলে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। সন্ধ্যায় তিনি যুগান্তরকে বলেন, এনসিপির সঙ্গে জোট নিয়ে বৈঠকের ব্যাপারে গণমাধ্যমে আসা খবরের কিছুই আমরা জানি না। আমরা এখনো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট বিষয়ে বৈঠকে বসিনি। আমাদের দলীয় শীর্ষস্থানীয় নেতা কিংবা দল থেকে এমন আহ্বান কিংবা সংবাদ সংগ্রহের জন্য কোনো গণমাধ্যমকে জানাইনি। জোটের আত্মপ্রকাশ হচ্ছে-এমন সংবাদ ভিত্তিহীন জানিয়ে সালেহীন বলেন, আমরা কি কোথাও বলেছি আজ কিংবা কাল জোটের বৈঠকে বসছি, আত্মপ্রকাশ করছি। নিশ্চয় এমনটা আমরা বলিনি। তবে এটা বলতে পারি, বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট নিয়ে কথাবার্তা চলছে। বিষয়টি গোপনীয় নয়, কার্যকর আলোচনা হলে সঙ্গে সঙ্গেই তা প্রকাশ করা হবে। আলোচনায় বসলে তা দেশবাসীকে জানানো হবে। দেশবাসীকে জানানো আমাদের দায়িত্ব।

এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষ্য, জোট না একক নির্বাচন-এমন প্রশ্নে কৌশলগত অবস্থান নিয়েছে এনসিপি। দলের নেতারা বলছেন-সংস্কার, বিচার এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে থাকলে যে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট হতে পারে। অন্যথায় একক নির্বাচনের পথে হাঁটবে এনসিপি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম