Logo
Logo
×

স্বজন সমাবেশ

টঙ্গীতে নবান্ন উৎসব

Icon

অলিদুর রহমান অলি

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলার সুপ্রাচীন কৃষি জীবনের মহোৎসব নবান্ন যেন মাটির বুক ছুঁয়ে ওঠা নবজাগরণের ক্ষুরধার রূপ। নতুন ধানের প্রথম শস্যাগন্ধ যখন বাতাসে ভেসে ওঠে, তখন বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য যেন আবারও নবভাবে আত্মপ্রকাশ করে। সেই চিরায়ত উৎসবেরই এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি পাওয়া গেল খাইলকুর বাদশাহ্ মিয়া অগ্রণী উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের নীরব হলরুমে; যেখানে সন্ধ্যার আলো চিকচিকিয়ে উঠেছিল ‘আনন্দে-হর্ষে নবান্ন ১৪৩২’-এর মিলনমেলায়।

মলিন দিনের ক্লান্তি পেরিয়ে যখন অতিথিদের পদচারণায় উঠোন ভরে উঠছিল, তখন বাতাসে ভেসে আসছিল পিঠার মিঠে গন্ধ; আর আলো-আঁধারির ভাঁজে ফুটছিল মানুষের মুখের হাসি। মনে হচ্ছিল আজ এ আয়োজন কেবল উৎসব নয়, বরং মানুষের হৃদয়ে হারিয়ে যাওয়া বন্ধনকে নতুন করে ফিরে পাওয়ার দিন।

যুগান্তর স্বজন সমাবেশ, গাছা ও টঙ্গী শাখার উদ্যোগে ২৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় যুগান্তর স্বজন সমাবেশ, গাছা থানা শাখার সভাপতি প্রদীপ দেবনাথের সভাপতিত্বে ও সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি অ্যান্ড কলেজ বাংলা বিভাগের শিক্ষক জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা করেন যুগান্তর স্বজন সমাবেশ টঙ্গী শাখার সভাপতি অলিদুর রহমান অলি, খাইলকুর বাদশাহ্ মিয়া, অগ্রণী উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও স্বজনের গাছা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম রুবেল, শুচি পাঠচক্র ও পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা শাহজাহান শোভন, স্বজনের গাজীপুর মহানগরীর সভাপতি আমান উল্লাহ, টঙ্গী সরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক শিক্ষক আজিজ টিপু, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর টঙ্গী শাখা সংসদের সভাপতি উজ্জ্বল লস্কর, টঙ্গী রিপোর্টাস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শেখ কামরুল হাসান সাহা ও কবি আতিক শাহরিয়ার। স্বজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উম্মে সালমা, খুশি আক্তার রিমি, পাপিয়া সুলতানা, শাখাওয়াত কবির শুভ, নাজমুল আলম, সাইফুল ইসলাম টুটুল, তৌহিদুল ইসলাম, খাদিজা আক্তার মৌমি, ডি.এম ইলিয়াস আলী, হাসান চৌধুরী, বিপ্লব মিয়া, তাজুল ইসলাম, রুবি আক্তার, বিউটি আক্তার প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রদীপ দেবনাথ এক আবেগমাখা কণ্ঠে বলেন, ‘নবান্ন আমাদের মাটির সঙ্গে, মানুষের সঙ্গে এক অন্তরঙ্গ আত্মীয়তার সেতুবন্ধন। নতুন ধান কেবল খাদ্য নয়, এ হলো আশার আলো, পরিশ্রমের সৌরভ, মানুষের বিনম্র প্রার্থনা। আমরা যেন এ উৎসবের মাধ্যমে মানবিকতার বীজটি আরও গভীরে বুনতে পারি।’

স্বজন গাছা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাজহার রুবেল বলেন, সংস্কৃতি একটি জাতির হৃদস্পন্দন। নবান্নের মতো উৎসব তরুণদের হৃদয়ে মানবিকতা, নৈতিকতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলে।

যুগান্তর স্বজন সমাবেশ টঙ্গী শাখার সভাপতি অলিদুর রহমান অলি বলেন, শেকড়ের সঙ্গে যুক্ত থাকা ছাড়া মানুষ পূর্ণতা পায় না। নবান্ন তরুণ প্রজন্মকে তাদের নিজস্ব মাটি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের গৌরবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়।

শুচি পাঠচক্র ও পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা শাহজাহান শোভন বলেন, নবান্ন বাঙালির প্রাণের কবিতা। লোককথা, সংগীত, সাহিত্য সবকিছুর মধ্যেই নবান্নের গীতধ্বনি প্রতিনিয়ত বেজে ওঠে। এ উৎসব আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনাকে জীবন্ত রাখে।

গাজীপুর স্বজন সমাবেশের সভাপতি আমান উল্লাহ আমান বলেন, নবান্ন আমাদের সেই সম্প্রীতি ও ঐতিহ্যের কথা শেখায়। স্বজন সমাবেশের মাধ্যমে আমরা মানুষের কাছে পৌঁছে দিই সৌহার্দের বার্তা।

সাংস্কৃতিক কর্মী আজিজ টিপু আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, এ উৎসব শুধু আনন্দের নয়, এটি নিজেকে ফিরে দেখারও একটি পথ। মাটির গন্ধ, মানুষের হাসি, পিঠার মাধুর্য-সবমিলিয়ে নবান্ন আমাদের শেকড়ের চিরন্তন স্মারক।

আলোচনা ও নবান্নের উচ্ছ্বাস শেষে সবাই মিলে স্বজন সখিনা আক্তারের জন্মদিনের কেক কাটায় অংশ নেন। এসময় পুরো প্রাঙ্গণ আরও আলোকোজ্জ্বল হয়ে উঠল শুভেচ্ছার দীপ্তিতে। মানুষের মুখের হাসি, পিঠার মাধুর্য আর মিলনের সুকোমল মুহূর্তগুলো যেন চারদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছিল সম্প্রীতির উজ্জ্বল বার্তা।

সভাপতি, স্বজন সমাবেশ, টঙ্গী (গাজীপুর)

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম