Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

যৌন স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় করণীয়

Icon

ডা. নুসরাত জাহান দৃষ্টি

প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

যৌন স্বাস্থ্য হলো যৌনতার সঙ্গে সম্পর্কিত শারীরিক, মানসিক, আবেগজনিত এবং সামাজিক সুস্থতার একটি অবস্থা। এটি শুধু রোগ, অক্ষমতা বা যৌন সমস্যার অনুপস্থিতি নয়। যৌন স্বাস্থ্য মূলত সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও কল্যাণে ভূমিকা রাখে। যৌন স্বাস্থ্য ভালো থাকলে মানসিক শান্তি, আত্মবিশ্বাস এবং সম্পর্কের গুণগত মান বাড়ে। নিরাপদ যৌন অভ্যাস, যৌন সংক্রমণ ও রোগ- প্রতিরোধে সাহায্য করে। পরিবার পরিকল্পনা, নিরাপদ গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মের অধিকারের মাধ্যমে প্রজনন স্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। নিজের শরীর যৌন ও প্রজনন সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতনতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এর মাধ্যমে সমাজে সহনশীলতা ও মানবাধিকারের চর্চা বৃদ্ধি পায়। সম্মতি, শ্রদ্ধা ও সমতার চর্চা যৌন স্বাস্থ্য চর্চার অন্যতম দিক।

যৌন অঙ্গ শুধু যৌনতা বা প্রজননের মাধ্যম নয় বরং এটি একটি সামগ্রিক শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য যা আত্মবিশ্বাস এবং জীবনমানের প্রতিচ্ছবি।

যৌন অঙ্গের সুস্বাস্থ্য একটি সমন্বিত প্রক্রিয়া। এখানে জীবন যাপন, খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, মানসিক অবস্থা, সঠিক চিকিৎসা বিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বজায় রাখে। কিন্তু সামাজিক সংকোচ বা ভুল তথ্যের কারণে এ বিষয়ে সচেতনতা এখনো কম।

বিভিন্ন উপায়ে যৌন অঙ্গের সুস্বাস্থ্য বিজ্ঞানসম্মতভাবে বজায় রাখতে পারেন। যেমন-সঠিক পরিছন্নতা বজায় রেখে, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে, সঠিক ব্যায়াম ও রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি, নেশা জাতীয় দ্রব্য পরিহার, মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সচেতনতা বজায় রেখে এ সুস্বাস্থ্য অর্জন করা যায়।

যৌন অঙ্গের স্বাস্থ্য রক্ষার প্রথম ধাপ হলো নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। বিশেষ করে পুরুষদের মাঝে যারা সারকামসিশন অর্থাৎ খৎনা করেননি, তাদের ক্ষেত্রে লিঙ্গের ডগায় স্মেগ্মা নামক সাদা আবরণ জমে থাকে। যা মূলত ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুর সংক্রমণের উৎস।

যৌন স্বাস্থ্যের সঙ্গে রক্ত প্রবাহের সম্পর্ক রয়েছে। সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহের জন্য রক্তনালিগুলোর সুস্থতা বজায় রাখতে হয়। এক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ। যেমন-ওমেগা থ্রী ফ্যাটি এসিডসমৃদ্ধ খাবার, অ্যান্টি অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ ফলমূল, লাইকোপিনযুক্ত সবজি, আর্গিনিনসমৃদ্ধ খাবার ইত্যাদি বেশ কার্যকর। তবে কিছু কিছু খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। যেমন-অতিরিক্ত চিনি ও প্রসেসড খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। এ ছাড়া ট্রান্স ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট এড়িয়ে চলা উচিত।

যারা সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলেন, তাদের মাঝে বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যা বা ইরেকটাইল ডিসফাংশনের ঝুঁকি ৩০ ভাগ কমে যায়।

নিয়মিত ব্যায়াম বিশেষ করে পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ, যেমন-কেগেল এক্সারসাইজ নারী-পুরুষ উভয়ের লিঙ্গে রক্ত প্রবাহ উন্নত করে। পাশাপাশি যৌন স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা দৌড়ানো উচিত। শ্রেণিচক্রের মাংসপেশিকে শক্তিশালী করতে কেগেল এক্সারসাইজ করা উচিত। এ ছাড়া রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি এবং মানসিক চাপ কমাতে যোগাসন ভালো ভূমিকা রাখে। নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে লিঙ্গের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

ধূমপান লিঙ্গে রক্তপ্রবাহ কমিয়ে দেয় যা সেক্সুয়াল ডিসফাংশনের অন্যতম কারণ। একইভাবে অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করলে পুরুষদের সেক্স হরমোন টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যায়। যার ফলে যৌন স্বাস্থ্য ব্যাহত হয়। অনেক ক্ষেত্রে যৌন ইচ্ছা ও সক্ষমতা দুটোই হ্রাস পায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বিভিন্ন ধরনের নেশায় আসক্ত তাদের মাঝে যৌন অক্ষমতার হার দ্বিগুণ।

অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, বিষণ্নতা, ভয় ইত্যাদি মানসিক সমস্যা যৌন জীবনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যৌন উত্তেজনা মূলত মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রিত একটি প্রক্রিয়া। তাই যৌন স্বাস্থ্যের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে মস্তিষ্কের বিশ্রাম প্রয়োজন। যেমন-দৈনিক অন্তত ছয় ঘণ্টা ঘুম, মেডিটেশন, গভীর শ্বাস প্রশ্বাসের অনুশীলন প্রয়োজন।

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হলে সেক্সুয়াল ডিশফাংশনের লক্ষণ প্রায় ৪০ ভাগ কমে যায়।

যৌন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যে কোনো ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে তা যদি প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা যায় তাহলে সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। বছরে অন্তত একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত। তবে সন্দেহজনক উপসর্গ ও লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে পরীক্ষা করা উচিত। নিয়মিত যৌন স্বাস্থ্যের সুরক্ষা যৌন স্বাস্থ্যের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা প্রতিরোধে কার্যকর।

যৌন স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে যৌনতা ও যৌন সম্পর্কে ইতিবাচক ও শ্রদ্ধাশীল মনোভাব থাকা জরুরি। নিরাপদ, আনন্দদায়ক ও সম্মতিসূচক যৌন অভিজ্ঞতার সুযোগ থাকা উচিত। বল প্রয়োগ, বৈষম্য ও সহিংসতা থেকে মুক্ত থাকতে হবে।

যৌন অঙ্গের সুস্বাস্থ্য রক্ষা মানে শুধু যৌন জীবনের সন্তুষ্টি নয় বরং এটি সামগ্রিক স্বাস্থ্য, আত্মবিশ্বাস এবং সুখী দাম্পত্য জীবনের পূর্ব শর্ত। পরিচ্ছন্নতা, খাদ্য, ব্যায়াম, মানসিক সুস্থতা এবং সঠিক চিকিৎসার সমন্বয়ে একজন মানুষ তার যৌন স্বাস্থ্যকে দীর্ঘদিন ধরে সুস্থ ও সক্রিয় রাখতে পারেন। সতর্কতা এবং সচেতনতাই পারে ভবিষ্যতের জটিলতা এড়াতে। নিজের শরীরকে ভালোবাসুন। নিজের যত্ন নিন।

যৌন স্বাস্থ্য শুধ একটি চিকিৎসার বিষয় নয়, এটি ব্যক্তিগত অধিকার, মানব মর্যাদা এবং সমাজের সুস্থ বিকাশের একটি অপরিহার্য অংশ। যৌনতা নিয়ে সচেতনতা, শিক্ষা ও উন্মুক্ত আলোচনা যৌন স্বাস্থ্য উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি।

লেখক : সেক্সুয়াল হেলথ এডুকেটর, সেক্স এডু উইথ ডক্টর দৃষ্টি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম