বিশ্ব AMR সপ্তাহ ২০২৫
বাংলাদেশে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সে গুরুত্ব
ডা. মালিহা শিফা
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নভেম্বর ১৮ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (AMR) সপ্তাহ পালন করে থাকে। বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং অযথা ব্যবহারের কারণে AMR একটি বড় স্বাস্থ্য ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স হচ্ছে একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে মাইক্রোবস (ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, পরজীবী বা ফাঙ্গাস) চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্য অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। এর ফলে সংক্রমণের চিকিৎসা কঠিন হয়ে পড়ে এবং জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা ব্যর্থ হতে পারে।
* বাংলাদেশে AMR-এর প্রভাব
বাংলাদেশে মধ্যে অধিকাংশ মানুষ চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে অযথা অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করেন, যা AMR বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। যার ফলে সংক্রমণ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং পরবর্তীতে মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়। গ্রামীণ অঞ্চলে পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি (WASH) সম্পর্কিত অপ্রতুলতা AMR-এর বিস্তারকে আরও ত্বরান্বিত করছে। অপরিষ্কার পানি এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে সংক্রামক রোগের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে এবং এর ফলে AMR আরও মারাত্মক হচ্ছে।
* কমিউনিটি ওয়াশ প্রোগ্রাম ওয়াটারএইড বাংলাদেশ গ্রামাঞ্চলে ওয়াশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে জনসচেতনতা তৈরি করেছে। কমিউনিটির মানুষের কাছে এ বার্তাটি পৌঁছানো হয়েছে যে, সঠিক স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে অনেক ধরনের সংক্রামক রোগের ঝুঁকি কমে যায়, ফলে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পায় এবং AMR-এর বিস্তার কমে।
* শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ
কমিউনিটি নেতা এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে যাতে তারা স্থানীয় মানুষের মধ্যে AMR, অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে পারেন। স্কুল, গ্রাম পরিষদ এবং মসজিদসহ সামাজিক স্থানগুলোতে এই বিষয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
* বাংলাদেশে AMR কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
▶ ওয়াশ প্রোগ্রামের শক্তিশালীকরণ : নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা AMR-এর বিস্তার ঠেকাতে সহায়ক হতে পারে।
▶ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণ : অযথা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা এবং ডাক্তারদের মাধ্যমে সঠিক পরামর্শের প্রচলন।
▶ স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ : AMR নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের আরও প্রশিক্ষণ প্রদান এবং তাদের সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করতে উৎসাহিত করা।
▶ কমিউনিটি সচেতনতা : স্থানীয় পর্যায়ে AMR-এর বিপদ এবং সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা। স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে এ প্রচারণা চালানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
▶ সরকারি উদ্যোগ : AMR মোকাবিলায় সরকারি উদ্যোগ বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তায় স্থানীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি ঘটাবে।
লেখক : জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
