পরিবার থেকে দূরে ঈদ উদযাপন
উচ্চশিক্ষা, চাকরি বা বিভিন্ন কারণে প্রবাসে রয়েছেন অনেক বাঙালি। পরিবার থেকে বহু দূরে তারা কীভাবে ঈদুল আজহা উদযাপন করবেন। লিখেছেন-
সাব্বিন হাসান
প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশের ঈদ নিয়ে ঈর্ষা হয় : জান্নাতুল আদনা
২০১৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে (এমবিএ) শেষ করে সিটি ব্যাংকে করপোরেট ক্রেডিট সেকশনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন জান্নাতুল আদনা ইসলাম। ২০২০ সালের শেষদিকে স্বামীর সঙ্গে পাড়ি জমান কানাডায়। বর্তমানে স্বামী ও সন্তানসহ বসবাস করছেন আটলান্টিক মহাসাগরে ঘেরা নিউ ফাউন্ডল্যান্ডের রাজধানী সেইন্টজোন্স শহরে। শুরুতে তীব্র শীতের সঙ্গে অনভ্যস্ততায় কিছুটা বেগ পেলেও সামলে নিয়েছেন খুব তাড়াতাড়ি। হয়ে উঠেছেন পুরোপুরি সংসারী। প্রবাসে থাকা, সংসারী হয়ে ওঠা আর ঈদের অভিজ্ঞতা বলতে আদনা জানালেন, দেশে থাকতে পড়ালেখা ও চাকরির কারণে কখনো রান্নাটা শেখা হয়নি। এখানে এসে তাই প্রথম চ্যালেঞ্জ হয় রান্না শেখা। দ্রুতই চলার মতো বেসিক রান্নাটা শিখে ফেলি। তার মাঝেই এলো রমজান। মিস করা শুরু করলাম ঈদকে সামনে রেখে সবাই মিলে কেনাকাটার সেই ধুম।
এবারই প্রথম রমজানে ঈদ শপিংয়ে মার্কেটে যাওয়া হয়নি। করোনার নিষেধাজ্ঞা তো সব দেশেই আছে। রমজান গড়িয়ে এলো রোজার ঈদ। জীবনের প্রথম প্রবাস ঈদ। ব্যতিক্রমী এক ঈদ। জন্ম থেকে এখানে আসার আগ অবধি ঈদ পালনের ধরন ছিল শুধু পরিবার নিয়ে ঘুরোঘুরি, বোনদের সঙ্গে মেহেদি লাগানো, মেহমানদের সঙ্গে গল্প জমানো, কাজিনদের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঈদ আড্ডা। যথারীতি ঈদের স্পেশাল রান্না বা পরিবেশন কখনো নিজের হাতে করতে হয়নি। বিয়ের সাত বছর পর এবারই আমি পুরোপুরি গৃহিণী রূপে আত্মপ্রকাশ করলাম। ভিন দেশে পরিচিত দেশি কমিউনিটির সবাইকে দাওয়াত করলাম ঈদে বাসায় আসার জন্য। আর জীবনে প্রথমবার রান্না করলাম ঈদের স্পেশাল সব ডিশ। স্বামীর সহায়তায় সব রান্না করতে করতে বাজল ভোর পাঁচটা। অথচ আগের শেষ কয়েক ঈদের আগের রাতে মেহেদি লাগানো আর আড্ডা দিতে দিতেই ভোর হয়ে যেত। দুই ঘণ্টা ন্যাপ নিয়েই রেডি হয়ে যাই মেহমানদের জন্য অপেক্ষায়। এ যেন এক অন্যরকম আনন্দ, নতুন আনন্দ। বিকালে আবার সবার বাসায় বেড়াতে যাই। ঈদের সারাটি দিন মিস করেছি মা-বাবা, ভাই-বোন আর কাজিনদের। ফেসবুকে দেশের পরিচিতদের ঘুরে বেড়ানোর ছবি দেখে ঈর্ষা হলেও নতুন রকমের ঈদ আনন্দটাই আমার ভালো লেগেছে। সময় এখন কুরবানি ঈদের। রোজার ঈদের মতো করেই কুরবানির ঈদ উদযাপন করব। রান্নায় থাকবে মাংসের বিশেষ আয়োজন। বিদেশে অতিথি আপ্যায়ন আর নিজেও দাওয়াত পাওয়ার মধ্যেই ঈদ আনন্দ সীমাবদ্ধ থাকে। স্বামী আর ছেলেকে নিয়ে আউটডোর ইভেন্টে যাব। সঙ্গে কষ্ট থাকবে দেশের সবাইকে কাছে না পাওয়ার।
প্রচলিত প্রবাদ, নদীর এপাড় কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস, ওপাড়েতে যত সুখ আমার বিশ্বাস। জীবনে সবসময়ই আপোস থাকে যে, ওপাড়ের (দেশের) সব সুখ যদি এপাড়ের (কানাডার) সব সুখের সঙ্গে একসঙ্গে করতে পারতাম, জীবনটা কতই না আনন্দের হতো। কিন্তু এপাড়ের কষ্টগুলোকে সঙ্গে নিয়েই সুখে শান্তিতে চলতে হবে বাকিটা জীবন। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।
শৈশবের ঈদ আনন্দ ভাবায় আমাকে : সাবরিনা ঋতু
বাংলাদেশ ছেড়ে অস্ট্রেলিয়া এসেছি বছর ছয় পেড়িয়ে গেছে। বিদেশের জীবনে ঈদের দিনে ভালোলাগা বলতে দেশে ফোন দিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলা। সবাইকে বোঝাই এই তো আসছে ঈদ একসঙ্গে করব। যদিও মন জানে সেটি হয়তো শেষ অবধি আর হয়ে উঠবে না। বিদেশে মেয়ের স্কুল খোলা থাকে, ঈদে নিজেদের অফিসের ছুটিও থাকে না। তখন ছুটির দিনে ঈদের জন্য প্রস্তুতি আর পরিকল্পনা নিয়ে ভাবতে হয়। ছুটির দিনে ঈদ পড়লে ঘরোয়া রান্না করি আর কাছাকাছি কোথাও থেকে একটু বেড়িয়ে আসি। সিডনিতে বাংলাদেশি কমিউনিটি বেশ বড়। ঈদের দিন ফ্যামিলি ফ্রেন্ড সবার বাসায় ঘুরতে যাই। খাবার-দাবার, নিজেদের ঘরোয়া সংস্কৃতিতে মনে হয় না বাংলাদেশ থেকে হাজার মাইল দূরে আছি। তারপরও মাঝেমধ্যে দেশে অনেক কিছুর সঙ্গে ফেলে আসা বর্ণিল ঈদগুলো মনকে ব্যাকুল করে তোলে। ঈদ শুরু হওয়ার আগে ঘুরে ঘুরে হইচই করে কেনাকাটা কথা খুব বেশি মনে পড়ে। শৈশবের মায়ের হাত ঈদের বিশেষ মাংস রান্না আর বাবার কাছ সালামি পাওয়া ঈদ এখানে আর পাওয়া হয় না। ঈদ শেষে আবার পরদিন যথারীতি প্রতিদিনের মতো ছোটাছুটি শুরু হয়। হঠাৎ আরেকটি ঈদ চলে আসে। অবশ্য কুরবানির ঈদে বিশেষ ব্যবস্থায় কুরবানি দেওয়া হয়ে থাকে।
