বাইডেনকে ঘুমকাতুরে বলে মন্ত্রিসভায় নিজেই ঘুমিয়ে পড়লেন ট্রাম্প!
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মার্কিন মন্ত্রিসভার বৈঠক। ভরা মজলিশ। টেবিল ঘিরে বসে আছেন মন্ত্রীরা। শুরুর দিকে খানিকটা শ্লেষ-সুরেই হঠাৎ সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ‘স্লিপি জো’ (ঘুমকাতুরে) বলে উপহাস করে বসলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মাঝেমাঝেই বাইডেনের বয়স নিয়ে এমন ঠাট্টা-টিটকারি করেন ট্রাম্প। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস-প্রতিপক্ষকে নিয়ে ওই রসিকতার কিছুক্ষণের মধ্যে নিজেই ‘ঘুমিয়ে’ পড়লেন তিনি!
তার ঠিক আগেই নিজের সুস্বাস্থ্যের তারিফ করে বলেন, ‘২৫ বছর আগে যেমন ছিলাম, বর্তমানে এর চেয়েও বেশি চাঙা (প্রখর বুদ্ধিমান)।’ স্থানীয় সময় মঙ্গলবার মধ্য দুপুরের ঘটনা। ‘ভাতঘুম’ কিনা নিশ্চত নয়-কারণ ট্রাম্প মধ্যাহ্নভোজ সেরেই বৈঠকে বসেছিলেন; এমন তথ্য পাওয়া যায়নি।
সিএনএন-এর প্রতিবেদন বলছে, ২ ঘণ্টা ১৭ মিনিট চলা এই বৈঠকে খুব সম্ভবত ট্রাম্প একাধিকবার মনোযোগ হারিয়েছেন। বৈঠকে টেবিল ঘিরে থাকা মন্ত্রিসভার সদস্যরা যখন একে একে তার প্রশংসা করছিলেন, তখনও প্রেসিডেন্ট বারবার ঘুমিয়ে পড়ছিলেন বলে মনে হচ্ছিল। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তির বয়স তার কাজের ওপর প্রভাব ফেলছে কি না-তা নিয়ে মানুষজনের প্রশ্ন বাড়ছে। ভিডিওতে দেখা যায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও যখন ট্রাম্পের পরিবর্তনমূলক বৈদেশিক নীতির প্রশংসা করছিলেন, তখন তার পাশের চেয়ারে বসে প্রেসিডেন্ট ঢলে পড়ছিলেন এবং চোখও বন্ধ করে ছিলেন। এমনকি বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক যখন ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের প্রশংসা করছিলেন এবং ‘সর্বকালের সেরা প্রেসিডেন্টের জন্য সর্বকালের সেরা মন্ত্রিসভা’ বলে উল্লাস করছিলেন, তখনও ট্রাম্পকে নিজের চোখ খোলা রাখতে সংগ্রাম করতে দেখা যায়। আবার শিক্ষামন্ত্রী লিন্ডা ম্যাকমাহন এবং স্বাস্থ্য ও মানবিক পরিষেবামন্ত্রী রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন দেখা যায়, ট্রাম্প প্রায় ১০-১৫ সেকেন্ড ধরে চোখ বন্ধ রেখে স্থির হয়ে আছেন।
তবে হোয়াইট হাউজের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন এবং পুরো তিন ঘণ্টা ধরে চলা মন্ত্রিসভার দীর্ঘ বৈঠক পরিচালনা করেছেন।’ লেভিট আরও বলেন যে, প্রেসিডেন্ট এই বছর নয়বার মন্ত্রিসভার বৈঠক করেছেন এবং এসব ঐতিহাসিক বৈঠকে মার্কিন জনগণের পক্ষে ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ লক্ষ্য অর্জনে কৃত কাজগুলোর বিস্তৃত তালিকা তুলে ধরা হয়েছে। ট্রাম্প গত সপ্তাহে তাকে নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের একটি দীর্ঘ ও বিস্তারিত প্রতিবেদনের সমালোচনা করেন, যেখানে তার কাজের সময়সূচি ও জনসমক্ষে তার উপস্থিতি বিশ্লেষণ করে বয়স ও শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তোলা হয়। প্রতিবেদনে দেখানো হয়, ৭৯ বছর বয়সি প্রেসিডেন্ট তার দ্বিতীয় মেয়াদে কিছুটা ধীরগতির হয়ে গেছেন। ট্রাম্প এই সমালোচনা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের পাগল বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, ‘ট্রাম্প চটপটে, তারা চটপটে নয়।’ তবে এক মাসের কম সময়ের মধ্যে হোয়াইট হাউজে কোনো অনুষ্ঠান চলাকালে এটি দ্বিতীয়বারের মতো ঘটল। এর আগে গত ৬ নভেম্বর ওভাল অফিসে এ দৃশ্য দেখা যায়, যখন ওয়াশিংটন পোস্ট ভিডিও ফিড পর্যালোচনা করে হিসাব করেছিল যে, ট্রাম্প প্রায় ২০ মিনিট ধরে চোখ খোলা রাখার জন্য লড়াই করেছেন। কয়েক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং (এমআরআই) পরীক্ষা করা হয়, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যদিও হোয়াইট হাউজ এটিকে তার নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ বলে জানিয়েছে, কিন্তু সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে এমআরআই করানো হয় না।
আগেরবার গত ৬ নভেম্বর ওভাল অফিসে এ দৃশ্য দেখা যায়। সেই ঘটনার পর ওয়াশিংটন পোস্ট বিভিন্ন ভিডিও ফিড পর্যালোচনা করে হিসাব করেছে যে ট্রাম্প প্রায় ২০ মিনিট ধরে চোখ খোলা রাখার জন্য লড়াই করেছেন। ওই সময় ট্রাম্পের কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ছবি দেখে মনে হচ্ছিল, তিনি ঘুমিয়ে পড়েছেন। ট্রাম্পের সমালোচকরা এ ছবি ব্যবহার করে প্রেসিডেন্ট হিসাবে তার কার্যদক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মঙ্গলবার একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি হলো, ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তির বয়স তার কাজের ওপর প্রভাব ফেলছে কি না-তা নিয়ে প্রশ্ন বাড়ছেই। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শরীর-স্বাস্থ্য ভালো আছে।
