একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা প্রথমপত্র
ড. সনজিত পাল
প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সিনিয়র শিক্ষক, সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ লক্ষ্মীবাজার, ঢাকা
বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন
-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮-১৮৯৪) উনিশ শতকীয় বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক হিসেবে পরিচিত। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট। এ চাকরিসূত্রে খুলনার ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করে তিনি নীলকরদের অত্যাচার দমন করেছিলেন। দায়িত্ব পালনে তিনি ছিলেন নিষ্ঠাবান; যোগ্য বিচারক হিসেবে তার খ্যাতি ছিল। বাংলা সাহিত্যচর্চায় অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছিলেন তিনি। উপন্যাস ও প্রবন্ধ রচনার বাইরে বঙ্গদর্শন (১৮৭২) পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ তঁর অন্যতম কীর্তি। ১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দে সম্বাদ প্রভাকর পত্রিকায় কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে তাঁর সাহিত্যচর্চা শুরু। বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থসংখ্যা ৩৪। তাঁর রচিত প্রথম উপন্যাস দুর্গেশনন্দিনী। তিনি ধর্ম, দর্শন, সাহিত্য, ভাষা ও সমাজবিষয়ক অনেক প্রবন্ধ রচনা করেছেন। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ‘সাহিত্যসম্রাট’ উপাধিতে ভূষিত হন।
‘বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন’ রচনাটি প্রথম প্রকাশিত হয় প্রচার পত্রিকায়, ১৮৮৫ সালে; পরে এটি তাঁর বিবিধ প্রবন্ধ নামক গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়। সাধুরীতিতে লেখা এই প্রবন্ধটি আকারে ছোট হলেও চিন্তার মৌলিকত্বে অসাধারণ। বক্তেব্যের তাৎপর্য বিচার করলে প্রবন্ধটির রয়েছে সর্বকালীন বৈশ্বিক আবেদন। নতুন লেখকদের তিনি যে পরামর্শ এখানে উপস্থাপন করেছেন তার প্রতিটি বক্তব্যই পালনযোগ্য। খ্যাতি বা অর্থের উদ্দেশ্যে লেখা নয়; লিখতে হবে মানুষের কল্যাণ সাধন কিংবা সৌন্দর্য সৃষ্টির অভিপ্রায়ে। বঙ্কিমচন্দ্রের মতে, অসত্য, নীতি-নৈতিকতা বিরোধী কিংবা পরনিন্দার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা স্বার্থতাড়িত লেখা পরিহার করা বাঞ্ছনীয়। তিনি বলতে চান, নতুন লেখকেরা কিছু লিখে তাৎক্ষণিকভাবে না ছাপিয়ে কিছুদিন অপেক্ষা করে পুনরায় পাঠ করলে লেখাটি সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে। যার যে বিষয়ে অধিকার নেই সে বিষয়ে লেখার চেষ্টা করা যেমন অনুচিত তেমনি লেখার বিদ্যা জাহির করার প্রবণতাকেও তিনি নিন্দনীয় বলে মনে করেছেন। অনুকরণবৃত্তিকেও দূষণীয় বলেছেন। অনাবশ্যকভাবে লেখার সৌষ্ঠব বৃদ্ধি বা পরিহাস করার চেষ্টাও তার কাছে কাম্য নয়। সারল্যকেই তিনি সকল অলংকারের মধ্যে শ্রেষ্ঠ অলংকার বলে মনে করেছেন। সর্বোপরি বস্তুনিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এভাবে এই ছোট লেখাটিতে তিনি লেখকের আদর্শ কী হওয়া উচিত তা অত্যাবশ্যকীয় শব্দ প্রয়োগে উপস্থাপন করেছেন। নবীন লেখকেরা বঙ্কিমচন্দ্রের পরামর্শ মান্য করলে লেখক ও পাঠক সমাজ নিশ্চিতভাবে উপকৃত হবেন; আমাদের মননশীল ও সৃজনশীল জগৎ সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর হবে।
‘বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন’ প্রবন্ধের যে দিকগুলো ভালো করে পড়তে হবে :
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন’ প্রবন্ধে লেখক ভবিষ্যৎ বাঙালি লেখকদের প্রতি কতগুলো উপদেশ দিয়েছেন। তাঁর এ উপদেশ শুধু তাঁর কালের জন্যই প্রযোজ্য নয়, অনাগতকালের লেখকদের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য। প্রবন্ধে লেখকের এসব উপদেশের সর্বজনীনতা প্রবন্ধের আবেদনকে কালোত্তীর্ণ করেছে।
এ প্রবন্ধ পড়ার সময় যে দিকগুলো বেশি করে পড়তে হবে তা তুলে ধরা হলো-
১. লেখক কারা কিংবা লেখক বলতে যাদের বুঝায়, সাহিত্য রচনার সাথে টাকার সম্পর্ক কী এবং কেন টাকার সম্পর্কের কথা প্রাবন্ধিক তুলে ধরেছেন।
২. লেখকবৃন্দ কীভাবে লেখার মাধ্যমে সমাজকে উপকৃত করতে পারেন, কোন ধরনের লেখা পরিহার করা উচিত এবং কেন, কোনো বিষয়ে লেখা লেখার পর কিছুদিন কেন সেই লেখা রেখে দেয়ার কথা বলা হয়েছে কিংবা নতুন লেখকে কোনো বিষয়ে লেখার সাথে সাথে কেন তা ছাপাতে নিষেধ করেছেন, সাময়িক সাহিত্য লেখকের জন্য অবনতিকর কেন, বিদ্যা প্রকাশের চেষ্টা বলতে কী বোঝানো হয় এবং কেন তা করা উচিত নয়, সাহিত্য অলংকার সাহিত্যের সৌন্দর্যবর্ধক হলেও লেখক কেন অলংকার ব্যবহারে সর্তক করেছেন, সাহিত্য রচনায় সরলতা কেন আবশ্যক, সাহিত্য রচনায় অনুকরণ কেন অনুচিত এবং যে কোনো লেখার ক্ষেত্রে তথ্য রাখা কেন প্রয়োজন ইত্যাদি।
অনুধাবন প্রশ্ন :
১. লেখক বলতে কাদের বুঝায়? লেখক কারা? লেখকদের বৈশিষ্ট্য লিখো।
২. যশের জন্য লিখিবেন না- বলতে কী বোঝানো হয়েছে? / কেন বলা হয়েছে?
৩. টাকার জন্য লিখিবেন না- কেন বলা হয়েছে?
৪. কিন্তু আমাদের এখনও সে দিন হয় নাই- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
৫. রচনা বিকৃত ও অনিষ্টকর হইয়া উঠে- কখন এবং কেন?
