Logo
Logo
×

টিউটোরিয়াল

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান

Icon

আফরোজা বেগম

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সিনিয়র শিক্ষক, উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ

উত্তরা, ঢাকা

জীবনের জন্য পানি

প্রশ্ন : পানিচক্র ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : পানিচক্র : যে প্রক্রিয়ায় পানি বিভিন্ন অবস্থায় পরিবর্তিত হয়ে ভূপৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডলের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে তাই পানিচক্র।

ব্যাখ্যা : সাগর, নদী, পুকুর, খাল-বিলসহ যে কোনো জলাশয়ের পানি সূর্যের তাপে বাষ্পীভূত হয়ে জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়। বাষ্পীভূত পানি ওপরে উঠে ঠান্ডা ও ঘনীভূত হয়ে পানির বিন্দুতে পরিণত হয়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানির বিন্দু একত্রিত হয়ে মেঘ সৃষ্টি করে। এ মেঘের পানিকণা বড় হয়ে বৃষ্টিপাত ও শিলা বৃষ্টি রূপে আবার চক্রাকারে ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে। শীতপ্রধান দেশে সাধারণত মেঘ থেকে বৃষ্টি না পড়ে তুষার পৃথিবীতে পড়ে। বৃষ্টির পানি কিছুটা মাটিতে শোষিত হয়। আর বাকিটা নদীতে বা যে কোনো জলাশয়ে পড়ে। মাটিতে শোষিত পানি ভূগর্ভস্থ পানি হিসাবে মাটির তলদেশে জমা থাকে। নদীতে গড়িয়ে পড়া পানি সমুদ্রে প্রবাহিত হয় এবং বাষ্পীভূত হয়ে আবার বায়ুতে ফিরে আসে। সূর্যের তাপের কারণেই পানিচক্র সম্ভব হচ্ছে। পানিচক্র পরিবেশে পানির ভারসাম্য রক্ষা করে।

প্রশ্ন : জীবের কেন পানি প্রয়োজন?

উত্তর : জীব বলতে উদ্ভিদ ও প্রাণীকে বোঝায়। প্রত্যেক জীবের বেঁচে থাকার জন্য পানি প্রয়োজন।

উদ্ভিদ : * উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য পানি প্রয়োজন।

* উদ্ভিদের দেহের প্রায় ৯০ ভাগই পানি।

* উদ্ভিদ খাদ্য তৈরিতে পানি ব্যবহার করে।

* মাটি থেকে পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করতে পানি প্রয়োজন।

* সংগৃহীত পুষ্টি উপাদান ও তৈরিকৃত খাদ্য উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশে পরিবহণ করতে উদ্ভিদের পানি প্রয়োজন।

* পানি ছাড়া উদ্ভিদ মাটি থেকে খনিজ উপাদান শোষণ করতে পারে না।

* প্রচণ্ড গরমে পানি উদ্ভিদের দেহ শীতল করতে সাহায্য করে।

প্রাণী : * বেঁচে থাকার জন্য প্রাণীদেরও পানি প্রয়োজন।

* মানবদেহের গঠন উপাদানের মধ্যে ৬০-৭০ ভাগ পানি।

* অধিকাংশ পানি পান না করে অল্প কিছু দিন বাঁচতে পারে মাত্র।

* দেহের বিভিন্ন অংশে পুষ্টি উপাদান পরিবহণে সাহায্য করে।

* খাদ্য হজমে বা পরিপাকে পানি প্রয়োজন।

* দেহে পুষ্টি উপাদান শোষণে পানি প্রয়োজন।

* প্রাণী দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে পানি প্রয়োজন।

* প্রাণীরা তৃষ্ণা নিবারণে পানি ব্যবহার করে।

মোট কথা, জীবের বেঁচে থাকাসহ নানা জৈবিক কাজে পানির কোনো বিকল্প নেই। তাই পানির অপর নাম জীবন।

প্রশ্ন : ৩(৪) বাতাসে যে জলীয়বাষ্প আছে তা কীভাবে বোঝা যায়? বাতাসে পানি আছে তা আমরা কীভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি?

উত্তর : পরীক্ষার নাম : বাতাসে পানি জলীয়বাষ্প আছে তা পরীক্ষার সাহায্যে দেখাতে হবে।

মূলনীতি : জলীয়বাষ্প হলো পানির বায়বীয় অবস্থা। জলীয়বাষ্প ঠান্ডা পেলে জমে পানি অর্থাৎ তরল পদার্থে পরিণত হয়।

উপকরণ : * একটি গ্লাস

* কয়েক টুকরা বরফ * একটি সুতির কাপড়

কার্যধারা : প্রথমে একটি গ্লাসে কয়েক টুকরা বরফ রাখা হলো।

পর্যবেক্ষণ : * ১৫/২০ মিনিট লক্ষ করলে দেখা যাবে, গ্লাসের গায়ে বিন্দু বিন্দু পানি জমেছে। বাতাসের জলীয়বাষ্প গ্লাসের গায়ে লেগে ঠান্ডা হয়। বাষ্প ঠান্ডা পেলে পানিকণায় পরিণত হয়।

* সুতির কাপড় দিয়ে গ্লাসটির চারদিক মুছে দেওয়া হলো। লক্ষ করলে দেখা যাবে, গ্লাসটির বাইরে আবারও একই কারণে পানি জমা হয়েছে।

ফলাফল : ওপরের পরীক্ষা থেকে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, বাতাসে পানি (জলীয়বাষ্প) আছে।

প্রশ্ন : পুকুরের পানিকে জীবাণুমুক্ত করতে হলে কীভাবে শোধন করতে হবে? পুকুরের পানি থেকে আমরা কীভাবে নিরাপদ পানি পেতে পারি?

উত্তর : পানি শোধন : সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের নিরাপদ পানি পান ও ব্যবহার করতে হবে। তাই নদীর পানিকে পান বা ব্যবহার করার আগে শোধন করে নিতে হয়। বিভিন্ন উপায়ে পানিকে শোধন করা যায়। নিচে এ উপায়গুলো বর্ণনা করা হলো।

ছাঁকন : পুকুর, খাল-বিল ও নদীর পানিতে কাদা ও ময়লা মিশে থাকে। পাতলা কাপড় বা ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে এ পানি পরিষ্কার করা যায়। তবে পরিষ্কার হলেও এভাবে পানি জীবাণুমুক্ত হয় না। আজকাল শহরের অনেক বাড়িতে উন্নতমানের ছাঁকনযন্ত্র বা ফিল্টার রয়েছে। এ ধরনের ফিল্টার দ্বারা পানিকে বেশিরভাগ জীবাণু থেকে মুক্ত করা যায়। তবে কোনো কোনো জীবাণু রয়ে যেতে পারে। পানিকে পুরোপুরি নিরাপদ করতে হলে পানিকে ফুটাতে হবে।

থিতানো : নদী বা পুকুরের পানি কোনো কলস বা পাত্রে রেখে দিতে হবে। দেখবে পাত্রের তলায় তলানি জমেছে। এতে করে ওপরের অংশের পানি পরিষ্কার হয়ে গেছে। তলানি জমে যাওয়ার পর কলস বা পাত্রটি অল্প কাত করে ওপরের পানি ঢেলে নাও। এভাবে পরিষ্কার পানি আলাদা করার পদ্ধতিকে থিতানো বলে। পাত্রের পানিতে অল্প ফিটকিরি দিলে তাড়াতাড়ি তলানি জমে এবং পানি কিছুটা জীবাণুমুক্ত হয়।

ফুটানো : পুকুর, নদী বা ট্যাপের পানি সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত করতে চাইলে পানিকে ফুটাতে হবে। পানি ফুটতে শুরু করার পর আরও ২০ মিনিট তাপ দিলে পানিতে থাকা জীবাণু মারা যায়। এরপর পানি ঠান্ডা করে ছেঁকে নিলে তা পান করার জন্য নিরাপদ হয়।

রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে পানি বিশুদ্ধকরণ : অনেক সময় বন্যা বা জলোচ্ছ্বাসের কারণে পানি ফুটানো সম্ভব হয় না। তখন ফিটকিরি, ব্লিচিং পাউডার, হ্যালোজেন ট্যাবলেট ইত্যাদি পরিমাণমতো মিশিয়ে পানিকে জীবাণুমুক্ত করা হয়। সুতরাং, উপরের পদ্ধতিতে আমরা পুকুরের পানি থেকে নিরাপদ পানি পেতে পারি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম