Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

দৃষ্টিপাত

বাড়ছে বৈষম্য ও দারিদ্র্য

অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ্ চৌধুরী

অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ্ চৌধুরী

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাড়ছে বৈষম্য ও দারিদ্র্য

বিশ্বব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের দারিদ্র্য ও বৈষম্য মূল্যায়ন প্রতিবেদন-২০২৫-এ বাংলাদেশের দারিদ্র্যপ্রবণতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দারিদ্র্য কীভাবে বিস্তার লাভ এবং সমাজকে প্রভাবিত করছে, তার উদ্বেগজনক চিত্র প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত ৪ বছর ধরে বাংলাদেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি ঘটেছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশে দরিদ্র মানুষের হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এ বছরের শেষদিকে ২১ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। বর্তমানে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ৬০ লাখ। আরও ৬ কোটি ২০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার উপরে অবস্থান করছেন, যারা সামান্য অভিঘাতেই দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যেতে পারেন। বন্যা, খরা বা ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ২০৫০ সাল নাগাদ ১ কোটি ৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে। যারা বাস্তুচ্যুত হবে, তাদের নিশ্চিতভাবেই দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

দারিদ্র্য পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার অন্যতম কারণ উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং কর্মসংস্থানের অভাব। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় ২০ লাখ কম কর্মসংস্থান হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার মান ব্যাপকভাবে নিম্নমুখী হয়েছে। একইসঙ্গে কর্মপোযোগী শিক্ষা নিশ্চিত করতে না পারার কারণে একজন ছাত্র/ছাত্রী চাকরির বাজারে গিয়ে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। যারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন, তারা কার্যত অহমিকাপূর্ণ বেকারে পরিণত হচ্ছেন। কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতার অভাবে কর্মসংস্থান সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠান ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা থেকে মাঝ পর্যায়ের দক্ষ কর্মী এনে নিয়োগ দিয়েছে।

সবচেয়ে বিত্তবান ১০ শতাংশ পরিবারের হাতে বেশি সম্পদ পুঞ্জীভূত হচ্ছে। আয়-বৈষম্য বাড়ছে উদ্বেগজনকভাবে। বিশ্বব্যাংক তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, গত চার বছর ধরে বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে দারিদ্র্য পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। কিন্তু সরকারি সংস্থা কখনোই এটা স্বীকার করতে চায় না। দারিদ্র্যের নানা স্বরূপ রয়েছে। অনেকেই কর্মসংস্থান হারিয়ে অসহায় অবস্থায় দিন যাপন করছেন। সার্বিকভাবে উৎপাদনশীল সেক্টরকে গতিশীল করার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের নতুন নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে হবে। দেশে ব্যাপকহারে কল-কারখানা স্থাপিত হলে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেশের উৎপাদন খাত মন্থর হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং নানা সামাজিক অস্থিতিশীলতার কারণে উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধান্বিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যক্তি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ২৯ শতাংশে। এটি বিগত ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। কাঁচামাল, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ এবং মধ্যবর্তী পণ্য আমদানিও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের ক্ষেত্রেও মন্দা লক্ষ করা যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আহরিত হয়েছে ১০ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার, যা বিগত ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা রয়েছে বিপর্যয়ের মধ্যে। এস আলম, সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপসহ ১১টি শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী লুটপাটের মাধ্যমে ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের মারাত্মক প্রভাবের সঙ্গে সম্পর্কিত দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক বৈষম্য। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, একটি পরিবারের আর্থিক দুর্দশা রোধ করতে হলে পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। আগেকার দিনে একটি পরিবারের একজনমাত্র সদস্যের উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা গেলে পুরো পরিবার তার উপার্জনের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারত। এখন আর্থিক চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবারের একজন সদস্যের উপার্জনের ওপর নির্ভর করে অন্যদের টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে পরিবারের একাধিক সদস্যের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

যেসব ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান করা সম্ভব হচ্ছে, সেখানেও উপযুক্ত মজুরি বা বেতন-ভাতার নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না। উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মজুরি বাড়ছে না। যেমন গত ডিসেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। একই সময়ে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ। মজুরি বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির মধ্যে ব্যবধান ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষ আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে রয়েছে। ফলে নিম্নমধ্যবিত্ত অনেক পরিবারই নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ঝড়, বন্যা, খরা বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হলেই বিপুলসংখ্যক মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারে। বিগত সরকারের আমলে যেসব সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল, তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে দরিদ্র পরিবারের পরিবর্তে অনেক ক্ষেত্রেই বিত্তবান পরিবারগুলো সামাজিক সুরক্ষার সুবিধা ভোগ করছে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির ৩৫ শতাংশ সুবিধাভোগী হচ্ছে বিত্তবান পরিবার। মানুষের একটি সাধারণ প্রবণতা হচ্ছে, তারা কর্মমুখী জনপদ বা অঞ্চলের দিকে ধাবিত হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে যারা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো কারণে বাস্তুচ্যুত অথবা দরিদ্র হয়ে পড়ে, তারা কর্মসংস্থানের জন্য রাজধানীমুখী হয়ে থাকে। রাজধানী ঢাকাকে দেশের সবচেয়ে কর্মচঞ্চল এলাকা বলে মনে করা হয়। তাই মানুষ কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে নিজ এলাকা ত্যাগ করলে প্রথমেই রাজধানীমুখী হতে চেষ্টা করে। এভাবে অযাচিত অভিবাসনের কারণে ঢাকা দিন দিন কার্যত মানববসতির অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন মোতাবেক, ঢাকা এখন বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল শহরে পরিণত হয়েছে। ঢাকার মোট জনসংখ্যা ৩ কোটি ৬৬ লাখ। ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা ৪ কোটি ১৯ লাখ জনসংখ্যা নিয়ে বিশ্বের শীর্ষ জনবহুল শহরের মর্যাদা লাভ করেছে। ২০৫০ সালের মধ্যে ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহরে পরিণত হবে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দরিদ্র ও বাস্তুচ্যুত মানুষ ঢাকায় এলেও তাদের কর্মসংস্থান অথবা আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ফলে ঢাকায় আগতদের একটি বড় অংশই মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছে। এরা দারিদ্র্য পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে।

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উন্নতি অর্জন করেছে ঠিকই; কিন্তু সেই উন্নয়নের সুফল ন্যায্যতার ভিত্তিতে বণ্টন করা সম্ভব হয়নি। ফলে উন্নয়নের সুফল সামান্য কিছু বিত্তবান পরিবারের হাতে চলে গেছে। এতে ধনী-দরিদ্রের মাঝে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবধান আরও বেড়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিল মানুষের মাঝে বিদ্যমান অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে সামাজিক স্থিতিশীলতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা। ১৯৭০ সালে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের ‘সোনার বাংলা শ্মশান কেন’ শীর্ষক পোস্টারের কথা অনেকেরই মনে আছে নিশ্চয়ই। সেই পোস্টারে পাকিস্তানের দু’অংশের মধ্যে বিদ্যমান অর্থনৈতিক বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল। পাকিস্তান আমলে আমরা ২২ পরিবারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি। এখন ২২ হাজার পরিবারের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২-১৯৭৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের মাঝে বিদ্যমান আয়-বৈষম্য ছিল অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে। কিন্তু স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগের সাড়ে তিন বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে দেশে দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার ঘটে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতির বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেওয়া হয় শহর থেকে গ্রামে। ফলে বিত্তবান ও বিত্তহীনের মাঝে অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়তে থাকে দ্রুতগতিতে। আওয়ামী লীগ যতবারই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে, ততবারই দেশ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়েছে। দলটি দুর্নীতিতে কতটা সিদ্ধহস্ত, তা বিগত ১৬ বছরে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। বিনা ভোটে নির্বাচিত সরকারের জনগণের কাছে কোনো দায়বদ্ধতা ছিল না। ফলে তারা দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর একজন পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছিলেন। তাহলে যারা একটু উপরের পর্যায়ে ছিলেন, তারা কী পরিমাণ অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন, তা সহজেই বোধগম্য। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান চালিয়ে বিগত সরকার আমলে নেতা-নেত্রীদের দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের যে চিত্র পাওয়া যাচ্ছে, তা বিস্ময়কর। দেশের বাইরে একজন প্রতিমন্ত্রীর তিন শতাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে। মন্ত্রীরা দেশের বাইরে বাড়ি ও ফ্ল্যাট ক্রয় করলেও দেশে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৬ সালের পর থেকে প্রবৃদ্ধির সুফল পেয়েছে ধনীরা। ফলে দরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। বাংলাদেশে সম্পদের অভাব নেই। এছাড়া বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের সুবর্ণ সময়ে অবস্থান করছে। গত প্রায় ২০ বছর ধরে বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একটি দেশের মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের বয়স যখন ১৫ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, অর্থাৎ কর্মক্ষম সীমার মাঝে থাকে, সেই অবস্থাকে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বলা হয়। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থা একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে অনুকূল বলে বিবেচনা করা হয়। অর্থনীতিবিদদের মতে, একটি দেশে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থা একবারই সৃষ্টি হয়। আবার কারও কারও মতে, হাজার বছরে একবার এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়। যেসব দেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সুযোগ কাজে লাগাতে পারে না, তারা উন্নয়নের শিখরে উঠতে পারে না। চীনও ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তারা এর সুযোগ পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে জাপান ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থা থেকে দূরে সরে আসার কারণে তার উন্নয়নের গতি কিছুটা হলেও মন্থর হয়ে পড়েছে। জাপান বিগত ৪৪ বছর ধরে বিশ্ব অর্থনীতিতে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল। চীন সম্প্রতি জাপানের সেই অবস্থানকে অতিক্রম করে বিশ্ব অর্থনীতিতে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার মধ্য দিয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ সেই সুবিধা কাজে লাগানোর জন্য কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। অর্থাৎ আমরা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সুযোগ হারাতে চলেছি।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন এবং বিদ্যমান প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহারের মাধ্যমে সমৃদ্ধি অর্জন কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা হচ্ছে উৎপাদিত সম্পদের সুফল ন্যায্যতার ভিত্তিতে সবার মাঝে বণ্টনের ব্যবস্থাকরণে ব্যর্থতা। যারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তারাই মনে করেন দেশটা তাদের নিজস্ব সম্পত্তি। অর্জিত সুফল ভোগ করার তারাই একমাত্র দাবিদার।

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশ এক নতুন যুগে পদার্পণ করেছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তার মাধ্যমে দেশে একটি গণতান্ত্রিক ও মানবদরদি সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে বলে জনগণ প্রত্যাশা করে। যারা সরকার গঠন করবেন, তাদের মনে রাখতে হবে, জনগণ যদি বিরূপ হয়, তাহলে মহাশক্তিধর সরকারও ব্যর্থ হতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে এটি বলা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার দারিদ্র্যবিমোচন ও বৈষম্য দূরীকরণে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। তাই আগামীতে যারা সরকার গঠন করবেন, তাদের দারিদ্র্যবিমোচন ও বৈষম্য নিরসনের ইস্যুকে প্রাধান্য দিতে হবে। এটি নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন হবে দ্রুত একটি গণমুখী ও কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করা, যার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হবে। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তিকে কাজে লাগাতে পারলে দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেতে পারে।

ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী : সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; বাহরাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম