Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

এসো শিক্ষা-সেবার ছায়াবীথিতলে

Icon

ড. হাসনান আহমেদ

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এসো শিক্ষা-সেবার ছায়াবীথিতলে

আমরা যত কথাই বলি, একটা বিষয় আমাদের মানতেই হবে-এদেশে সুস্থ-সামাজিক বিকাশ নেই; সামাজিক শিক্ষা ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ধস নেমেছে।

মানবিক মূল্যবোধ, সততা, ন্যায়নিষ্ঠা, দেশপ্রেম সামাজিক শিক্ষা ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে। জনগোষ্ঠী জন-আপদে পরিণত হয়েছে, জনগোষ্ঠীর চিন্তা-চেতনায় মনুষ্যত্বহীনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসবই অনভিপ্রেত। এতে এ জাতি পথ হারাবে। সময়ের অনিবার স্রোতে গা ভাসিয়ে সামনের দিকে চলতে থাকলেও পরিণতি শুভ হবে না।

প্রতিটি সুশিক্ষিত দেশ-সচেতন ব্যক্তিই তা ভালো করে বোঝেন। তাই কথা না বলে পারা যায় না। এ দেশের মানবগোষ্ঠীকে সুশিক্ষিত ও জনসম্পদরূপে গড়ে তোলার কথা তো সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই বলা হচ্ছে। কিন্তু নগদ হাতে কত? জনসম্পদ ও জাতীয় উৎকর্ষ-বিরুদ্ধ এসব অপচর্চা, অপশিক্ষা ও অপমানসিকতা থেকে পরিত্রাণের অগত্যা মধুসূদন হিসাবে একটা পথের রূপরেখা সংক্ষিপ্ত পরিসরে এরকম হতে পারে :

আমাদের সমাজে ভালো-মন্দ, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবার বসবাস। সুশিক্ষিত লোকেরা সমাজের কোনো কাজে আর সম্পৃক্ত হতে চান না। তাদের বেছে আলাদা করে পরিবেশ দিয়ে কাজে লাগাতে হবে। সৃষ্টির আদিকাল থেকেই প্রতিটি দেশে সমাজসেবক আছেন। সমাজ উন্নয়নে যুগে যুগে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের অনেকেই আছেন, যারা নিঃস্বার্থভাবে সমাজসেবা করতে চান। দেশব্যাপী প্রতিটি এলাকায় ক্রমেই ‘শিক্ষা-সেবা সমাজ’ গঠন করতে হবে।

‘শিক্ষা-সেবা সমাজ’ একটি স্বশাসিত, অরাজনৈতিক, অলাভজনক, স্বেচ্ছাসেবী, সেবাদানকারী সমাজ-সংগঠন হিসাবে কাজ করবে। প্রত্যেক সদস্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে অহিংস মনোভাবে বিশ্বাসী হবেন। প্রত্যেক সদস্যের রাজনৈতিক দলের প্রতি পরোক্ষ সমর্থন থাকতে পারে, তবে তারা প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে অংশ নেবেন না। সমাজসেবার মাধ্যমে ত্যাগের মহিমায় তারা মর্যাদাপ্রাপ্ত হবেন। শিক্ষা-সেবা সমাজের সব কার্যক্রম ক্ষমতাভিত্তিক ও কর্তৃত্ববাদী না হয়ে পরামর্শমূলক হবে।

প্রতিটি কাজের মধ্যে শিক্ষা ও আদর্শ ফুটে উঠতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংগঠনের বিশ্বস্ততার সম্পর্ক গড়ে ওঠে; সমাজের সাধারণ মানুষ সংগঠনের সদস্যদের শ্রদ্ধা ও অনুসরণ করে। এ দেশের স্থানীয় সরকার গঠনের উদ্দেশ্যও তো মূলত এরকমই ছিল, যা এখন দিকভ্রষ্ট হয়ে গেছে। ‘মহান রাজনীতিক’দের কৃতকর্মের সে কাসুন্দি এখানে আর না ঘাঁটি।

‘শিক্ষা-সেবা সমাজ’ গঠন মূলত সমাজের অশিক্ষিত, নিরক্ষর, সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে শিক্ষাহীনতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করে উন্নতি ও উৎকর্ষের পথে নিয়ে যাওয়ার একটা সম্মিলিত প্রচেষ্টা-শিক্ষার মান বাড়ানো, সমাজশিক্ষার ব্যবস্থা করা। ‘শিক্ষা-সেবা সমাজে’র আওতা হবে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার পরিবার বা এর কিছু বেশি-কম। প্রতিটি পরিবারকে একটি একক হিসাবে গণ্য করা হবে। প্রথমত, এক বা একাধিক সমাজসেবক উদ্যোগ নিয়ে সমাজের মধ্য থেকে এগারো থেকে সতেরো সদস্যবিশিষ্ট একটা ‘শিক্ষা-সেবা সমাজ’ গঠন করবেন। সদস্যদের ‘সোসাইটি কাউন্সিলর’ বলা হবে। প্রথমে কাউন্সিলরের সংখ্যা কম হলেও সমস্যা নেই। কিন্তু কোনো অশিক্ষিত, খারাপ চরিত্রের মানুষ যেন কাউন্সিলে না ঢুকে পড়ে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

শুধু স্বার্থত্যাগী সমাজসেবকদের জায়গা দিতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে তাদের মধ্য থেকে একজন ‘প্রধান সোসাইটি কাউন্সিলর’ নির্বাচিত হবেন। একজন সেক্রেটারি ও একজন ক্যাশিয়ারও নির্বাচিত হবেন। প্রতিটি পদ হবে পালাক্রমে বা পর্যায়ক্রমে। একজন কাউন্সিলর প্রধান সোসাইটি কাউন্সিলর না হয়েও নিজ উদ্যোগে অন্য কাউন্সিলরদের সঙ্গে নিয়ে সমাজের কাজ করতে পারবেন। এখানে পদের তুলনায় কর্মোদ্যোগ ও কাজ প্রাধান্য পাবে। কাউন্সিলের সভায় সমাজ থেকে (সমাজের আওতা বুঝে) পঞ্চাশোর্ধ্ব সমাজ-সদস্য নিয়ে একটি ওয়ার্কিং কমিটি থাকবে। কাউন্সিল কথা, কাজে ও চিন্তায় গ্রামীণ দলাদলি, ক্ষুদ্র-মানসিকতা, ব্যক্তিস্বার্থ, পারস্পরিক প্রতিহিংসা, গ্রুপিংয়ের ঊর্ধ্বে উঠে ‘শিক্ষা-সেবা সমাজে’র উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট হবে।

‘শিক্ষা-সেবা সমাজে’র উদ্দেশ্য হবে মোটামুটি এরকম-১. সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ। সাধারণ মানুষকে জনে জনে সামাজিক শিক্ষার মাধ্যমে সুস্থ চিন্তাধারার বিকাশসাধন করা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের সম্মিলনে শিক্ষার জন্য ত্রিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তোলা। প্রতিটি পক্ষকেই তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বুঝিয়ে বলা। বিশেষভাবে অভিভাবক মহলে তাদের সন্তানদের ব্যাপারে শিক্ষা ও শিক্ষার মান নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো। তাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে উচ্চশিক্ষা বা টেকনিক্যাল শিক্ষায় শিক্ষিত করতে বলা। স্কুল-মাদ্রাসাগুলোকে ‘ফুলটাইম স্কুলিং’ ব্যবস্থার দিকে ক্রমেই নিয়ে যাওয়া। শিক্ষক ও অভিভাবক মহলকে বুঝিয়ে শিক্ষায় সততা, মানবিক মূল্যবোধ ও আদর্শ ফিরিয়ে আনা। সমাজের মানুষের মধ্যে জনে জনে শিক্ষা সচেতনতা বৃদ্ধি করা ও সুশিক্ষা বেগবান করা। ছাত্রছাত্রীদের স্কুল-মাদ্রাসা থেকে ঝরে যাওয়া বন্ধ করা। স্কুল-মাদ্রাসার অবকাঠামো ব্যবহার করে অভিভাবক ও সাধারণ মানুষের জন্য সাধারণ ও ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করা। তাদের সুপ্রশিক্ষিত ও সুশিক্ষিত করা। শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে সচেষ্ট হওয়া। জীবনমুখী ও কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করা। সামাজিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা। সমাজের বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের মধ্যে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং করা। ২. স্কুল-মাদ্রাসার অবকাঠামো ব্যবহার করে নিয়মিত প্রশিক্ষণের আয়োজন করে সমাজের মানুষের মধ্যে সামাজিক স্বাস্থ্য-সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং তাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা। ৩. গরিব, নিঃস্ব, পীড়িত, অসহায় ও মেহনতি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আর্ত-মানবতার সেবায় আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করা। শ্রেণিভেদে, বিশেষ করে নিুবিত্ত জনগোষ্ঠীর ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়ের মাধ্যমে তাদের সুদবিহীন স্বল্প কিস্তিভিত্তিক আর্থিক সহায়তা প্রদান করা (ব্যক্তির আয়-রোজগার সৃষ্টিকারী সম্পদ তৈরি করে দেওয়া)। আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে মানুষকে কর্মমুখী করে গড়ে তোলা। ৪. ‘শিক্ষা-সেবা সমাজে’র সচ্ছল সদস্যদের কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহ করে তাদের দিয়ে এক বা একাধিক কৃষিভিত্তিক প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি গঠন করার পরামর্শক হিসাবে কাজ করা। কোম্পানিতে কর্মরত কর্মচারী-কর্মকর্তাদের কাজে মনোযোগী হওয়া এবং উৎসাহ দেওয়ার জন্য কোম্পানির বার্ষিক লাভের দশ শতাংশ তাদের মধ্যে বণ্টনের ব্যবস্থা রাখা। এ ছাড়া কোম্পানি লাভের আরও দশ শতাংশ ‘করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি’র জন্য ‘শিক্ষা-সেবা সমাজ উন্নয়ন ফান্ডে’ অবদান রাখবে। ‘শিক্ষা-সেবা সমাজ’ এই ফান্ড ও অন্য আরও ফান্ড ব্যবহার করে সমাজ-উন্নয়নমূলক, আর্থিক সহায়তা প্রদান ও সেবাধর্মী কাজ করবে।

বর্তমানে সমাজে টিনএজারদের মধ্যেও ড্রাগ-এবিউজ বিস্তার লাভ করেছে। ‘শিক্ষা-সেবা সমাজ’ শিক্ষক ও অভিভাবকদের এ বিষয়ে সচেতন করবে। প্রয়োজনে শিক্ষক-অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে। আমরা জানি, সমাজে, অফিস-আদালতে সুশিক্ষিত লোকের পদচারণা বাড়লে দুর্নীতি কমবে, সুনীতি বাড়বে। সুস্থ-চিন্তাশীল সুশিক্ষিত মানুষ ক্রমেই জনপ্রতিনিধি হতে এগিয়ে আসবেন। চেষ্টা না করলে সমাজ, অফিস-আদালত দুর্নীতিমুক্ত, অপব্যবস্থাপনামুক্ত কোনোদিনই হবে না। এ দেশের সুশিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে সময়ের প্রয়োজনে দেশরক্ষার স্বার্থে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসতে হবে।

কাউন্সিলরদের অন্যতম দায়িত্ব হবে, তাদের আওতাধীন বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসায় নিয়মিত যাওয়া। সেখানে কর্মরত মৌলভী-মওলানাদের সঙ্গে সমাজ উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা। কাউন্সিলরদের কাজ হবে, স্থানীয় সব মাদ্রাসায় জীবনমুখী, কর্মমুখী ও জীবনের উদ্দেশ্যভিত্তিক শিক্ষা চালু করার জন্য অনুরোধ করা। ছাত্রছাত্রীরা যেন বিজ্ঞান ও ব্যবসামুখী শিক্ষা নিয়ে কিংবা কারিগরি শিক্ষা নিয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে সে কথা বুঝিয়ে বলা। কুরআন ও হাদিস শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়ে বিভিন্ন অফিসে চাকরিতে তারা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দেশবাসীকে ভালো সেবা দিতে পারবে এবং এর বিনিময়ে হালাল রুজি-রোজগার করতে পারবে। এছাড়া জনসেবার মাধ্যমে পরকালের মুক্তি নিশ্চিত হবে। দেশবাসীও অফিসের ভালো সেবা পাবে, ঘুস-দুর্নীতি থেকে দূরে থাকতে পারবে, ভোগান্তি দূর হবে। ব্যবসায় শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ব্যবসা করলে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবে। উপার্জিত টাকা থেকে গরিব-অভাবীদের দান-খয়রাত করতে পারবে। ব্যবসায় যদি ধার্মিক, চরিত্রবান, সৎলোক চলে আসে, তাহলে সাধারণ মানুষ যারপরনাই উপকৃত হবে। ওজনে কম নিতে হবে না, ভেজাল জিনিস খেতে হবে না, ব্যবসায়ীদের থেকে প্রতারিত হতে হবে না। কালোবাজারি, মজুতদারি, সিন্ডিকেটের হাত থেকে মানুষ রক্ষা পাবে। মৌলভী-মওলানাদের আরও বলতে হবে, ধর্মকে পেশা বানানো ঠিক নয়; প্রত্যেক মুসলমানেরই ধর্মের পাশাপাশি একটি কর্মের পেশা থাকা জরুরি।

কাউন্সিলররা প্রতিটি মসজিদের ইমামকে অনুরোধ করতে পারেন-নামাজের দিন খুতবা দেওয়ার আগে বাংলায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় মুসলমানের বৈশিষ্ট্য কী হওয়া উচিত; প্রতিহিংসার পরিণতি, অজ্ঞতার পরিণতি, স্বাস্থ্যশিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান শেখার গুরুত্ব, পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব, মানুষের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য, প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব, গরিব-দুঃখীকে দানের সওয়াব, সমাজসেবা সম্বন্ধে কুরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যা, সমাজসেবকের ইহকাল ও পরোকালের প্রাপ্তি, দুনিয়ার সব ন্যায় কাজ ও পেশাগত সব কাজও ইবাদতের অংশ ইত্যাদি বিষয়ে হৃদয়গ্রাহী করে বক্তৃতা দিতে। মসজিদের ইমামকেও সমাজসেবার জন্য কাউন্সিলর হিসাবে সঙ্গে নিতে পারেন।

‘শিক্ষা-সেবা সমাজ’ মাঝেমধ্যেই প্রশিক্ষণের আয়োজন করে সমাজের প্রত্যেক মানুষকে স্বাস্থ্যশিক্ষা দেবে। স্বাস্থ্যসচেতন করে তুলবে। স্বাস্থ্যসেবা দেবে। এলাকায় শিক্ষা-সেবা ক্লিনিক ও কমিউনিটি পাঠাগার তৈরি করবে। স্বাস্থ্যশিক্ষার জন্য সেমিনার, হাতে-কলমে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করবে। সার্বিক বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সাহায্য-সহযোগিতা নেবে। কাউন্সিলররা উপজেলা বা জেলার কোনো মানবহিতৈষী এক বা একাধিক ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, যিনি বা যারা সপ্তাহে একেক দিন ক্লিনিকে এসে বিনা ফিতে বা নামমাত্র ফিতে রোগী দেখবেন। এতে সাধারণ মানুষ যারপরনাই উপকৃত হবে।

‘শিক্ষা-সেবা সমাজে’র প্রত্যেক সদস্য এককভাবে দেশের প্রচলিত আইনের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। অভিজ্ঞতা থেকে বলতে গেলে, সমাজে একশ্রেণির লোক আছে, যাদের পুরো মগজটাই কুটিল বুদ্ধি ও বিকৃত চিন্তায় ভরা। এরা সমাজের ভালো কাজের উদ্দেশ্য বোঝে না বা বুঝতে চায় না, অথচ মাতব্বরি করতে চায়। গ্রুপিং, অন্তঃকলহ, দলবাজি, আত্মস্বার্থে মত্ত থাকে। ‘শিক্ষা-সেবা সমাজ’ গঠনে এদের এড়িয়ে যাওয়া ভালো। সমাজে এ শ্রেণি ছাড়া সহজ-সরল, ভালো মানুষের সংখ্যাই বেশি। সমাজের উন্নত চিন্তার অধিকারী, দানশীল, মানবহিতৈষী, উদার মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে ‘শিক্ষা-সেবা সমাজ’ গঠন করতে হবে।

‘শিক্ষা-সেবা সমাজ’ তাদের অফিসিয়াল কাজকর্ম পরিচালনার জন্য এবং নিয়মিত সকাল-সন্ধ্যায় কাউন্সিলর ও সাধারণ সদস্যদের বসার জন্য সমাজের আওতাধীন কোনো একটা সুবিধাজনক জায়গায় অফিস রুম তৈরি করে নিতে পারে।

দেশব্যাপী ‘শিক্ষা-সেবা সমাজ’ পরিচালনা ও নীতিনির্ধারণের জন্য একটি কেন্দ্রীয় প্লাটফরম থাকবে। এ প্লাটফরম স্বীয় প্রচেষ্টার মাধ্যমে শুধু জনগোষ্ঠীর প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক শিক্ষা, জনসেবা এবং সমাজ উন্নয়নের আদর্শকে কাজে ও কর্মে ধারণ করে প্ল্যাটফরমের নীতিমালা নির্ধারণ করবে, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহায়তা নেবে, অর্থ সংস্থানের ব্যবস্থা করবে এবং সেই মতো কর্মসূচি গ্রহণ করবে। এ প্ল্যাটফরম শিক্ষা ও সেবা কার্যক্রমকে একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেবে।

‘শিক্ষা সেবা সমাজে’র পুরো কর্মকাণ্ড হবে ব্যষ্টিক উন্নয়নের মডেল আকারে এবং সামাজিক উন্নয়নে মানবসম্পদ তৈরির প্রক্রিয়া হিসাবে। মানবসম্পদ উন্নয়ন তথা জনগোষ্ঠীর শিক্ষা ও মানসিকতার উন্নয়নও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুগামী একটা সহায়ক উপাদান।

ড. হাসনান আহমেদ : প্রফেসর, ইউআইইউ; প্রাবন্ধিক ও গবেষক

 

শিক্ষা সেবা ছায়াবীথিতলে

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম