Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

কেমন হবে আগামী অর্থবছরের বাজেট

অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ্ চৌধুরী

অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ্ চৌধুরী

প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কেমন হবে আগামী অর্থবছরের বাজেট

আগামী অর্থবছরের (২০২৫-২০২৬) জন্য জাতীয় বাজেট প্রণয়নের প্রাথমিক কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে জুনের প্রথম সপ্তাহে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। বর্তমানে যেহেতু জাতীয় সংসদ কার্যকর নেই, তাই আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের কাছে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সামরিক শাসনামল এবং ২০০৭-২০০৮ ও ২০০৮-২০০৯ অর্থবছর ছাড়া প্রতিবছরই বাজেট জাতীয় সংসদের মাধ্যমে অনুমোদিত হয়েছে। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট নানা কারণেই ভিন্নতর হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। রাজনৈতিক সরকারের আমলে বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধা থাকে। সেখানে দলীয় নেতাদের তোষণ করার জন্য এমন কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, বাস্তবে যার কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। আবার সামরিক শাসনামলে মহলবিশেষকে খুশি করার জন্য বাজেটে নানা আয়োজন থাকে।

কিন্তু এবারের সরকারের চরিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। কাজেই অন্তর্বর্তী সরকার যদি আন্তরিক হয় এবং ব্যক্তিস্বার্থের চেয়ে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়, তাহলে একটি সুষম বাজেট প্রণয়ন করা সম্ভব হতে পারে। রাজনৈতিক সংস্কার এবং জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে, কীভাবে সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। ফলে এবার জাতীয় বাজেট নিয়ে তারা খুব একটা আলোচনায় অংশগ্রহণ করছেন না। অথচ অন্যান্য বছর অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক শুরু হলেই বাজেট আলোচনা আলোর মুখ দেখে।

বিগত সরকারের নানা ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে। এ বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী অর্থবছরের জন্য বিশাল অঙ্কের বাজেট প্রণয়ন সম্ভব হবে না। বরং বাজেটকে যতটা সম্ভব যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মতভাবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা থাকবে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, আগামী অর্থবছরের জন্য প্রণীত বাজেটের আর্থিক আকার বাড়বে না। কারণ, বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বাজেটের আকার বাড়ানো হলে অর্থায়নের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। উল্লেখ্য, বাজেট অর্থায়নের জন্য স্থানীয় সূত্র থেকে অর্থ সংগ্রহের ওপর বেশি মাত্রায় নির্ভর করতে হয়। কিন্তু ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউর (এনবিআর) পারফরম্যান্স খুব একটা সুবিধাজনক পর্যায়ে নেই। জুলাই-আগস্টের গণ-আন্দোলন এবং আন্দোলন-পরবর্তী সামাজিক অস্থিরতার কারণে রাজস্ব আদায় বিঘ্নিত হয়। ফলে চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার কোনোই সম্ভাবনা নেই। এনবিআরের একশ্রেণির কর্মকর্তার ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতি এবং অভ্যন্তরীণ সুশাসনের অভাবে রাজস্ব আদায় যেভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার কথা তা হচ্ছে না।

বর্তমানে বাংলাদেশের ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও হচ্ছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। অর্থাৎ জিডিপির আকার যদি হয় ১০০ টাকা, তাহলে ট্যাক্স আদায় হচ্ছে ৭ টাকা ৫০ পয়সা। এটা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। শ্রীলংকার ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও বাংলাদেশের চেয়ে সামান্য কম। শ্রীলংকার ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও হচ্ছে ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। আগামী বাজেটে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরোপিত ট্যাক্সের হার কমিয়ে ট্যাক্স নেটওয়ার্ক বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। আর এনবিআরকে সুশাসনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। উচ্চ মাত্রায় ট্যাক্স নির্ধারণ করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা বাড়ে। অনেকেই আছেন যারা তুলনামূলক কম ট্যাক্স আরোপ করা হলে নিয়মিত ট্যাক্স প্রদান করবেন। যেসব ক্ষেত্রে ট্যাক্স হলিডে প্রদান হয়েছে, সেগুলোর আবশ্যকতা আছে কি না, তা ভালোভাবে যাচাই-বাছাইপূর্বক নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে। ট্যাক্স হলিডে প্রদান অথবা তুলনামূলক কম শুল্ক আরোপের উদ্দেশ্য হচ্ছে সেই পণ্যটি যাতে বেশি পরিমাণে উৎপাদিত হয় এবং ভোক্তা শ্রেণি তুলনামূলক কম মূল্যে পণ্যটি পেতে পারে। কিন্তু এ উদ্দেশ্য যদি সাধিত না হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে ট্যাক্স হলিডে বা তুলনামূলক কম ট্যাক্স আরোপের কোনো কারণ থাকতে পারে না।

একদিকে অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে অর্থ সংগ্রহে ব্যর্থতা, অন্যদিকে বিদেশি সংস্থার কাছ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ আর্থিক সহায়তা না পাওয়ার কারণে আগামী বছরের জন্য বড় আকারের বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে না। এ অবস্থায় বাজেটের আকার বাড়ানো হলে বিদেশি ঋণের মাধ্যমে অর্থ সংকুলান করতে হবে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ঢালাওভাবে বিদেশি ঋণ গ্রহণের পক্ষপাতী নয়। এছাড়া বিদেশি ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রেও কোনো নিশ্চয়তা নেই। ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ডের (আইএমএফ) তথ্যমতে, বৈশ্বিক ঋণের স্থিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের গৃহীত বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ১০ হাজার কোটি ডলার অতিক্রম করে গেছে। সরকার এ অবস্থায় বৈদেশিক ঋণের স্থিতি আর বাড়াতে চাচ্ছে না। তাই আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার নিয়েও সরকারকে ভাবতে হবে।

চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২০২৫) মূল বাজেট বরাদ্দ ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধন করে সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকায় সীমিত রাখা হচ্ছে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের মূল বাজেট বরাদ্দ ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা পরবর্তীকালে ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছিল। একটি সূত্রমতে, আগামী অর্থবছরের (২০২৫-২০২৬) বাজেটের আকার হতে পারে ৮ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত আছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ, যা আগামী বাজেটে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হতে পারে। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় বরাদ্দ আছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, আগামী অর্থবছরে এটা সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। বেতন-ভাতা বাবদ বর্তমান বছরের বাজেটে বরাদ্দ আছে ৮২ হাজার কোটি টাকা, যা আগামী বছর ৯০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হতে পারে। বৈদেশিক ঋণের সুদ বাবদ চলতি অর্থবছরে পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত আছে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরের জন্য এ খাতে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। মূল্যস্ফীতির হার চলতি অর্থবছরের জন্য ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারিত ছিল। আগামী অর্থবছরের জন্য এটা ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে।

আগামী অর্থবছরের জন্য জাতীয় বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে বেশকিছু জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। প্রথমেই বিবেচনা করতে হবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির হার কীভাবে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা যায়। বিগত প্রায় তিন বছর ধরে মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান মোতাবেক, মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ৩২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। তবে আগামী দিনে মূল্যস্ফীতি কোন পর্যায়ে যাবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

রাজনৈতিক সরকারের আমলে দলীয় বিবেচনায় অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করা হতো। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনার পরিবর্তে বাস্তবতার নিরিখে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রতিবছর দেখা যায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হয় তার বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয় এবং ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এ প্রবণতা রোধ করা দরকার। কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যদি নির্দিষ্ট সময়ে প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তার দায়ভার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকেই বহন করতে হবে। জনগণ কেন তার দায়ভার বহন করবে? প্রকল্প বিলম্বিত হওয়া এবং ব্যয়বৃদ্ধির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জরিমানা আকারে আদায় করা যেতে পারে।

বাজেটে শেয়ারবাজার ও ব্যাংক খাত নিয়ে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ দুটি খাত বর্তমানে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত রেমিট্যান্স আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধির প্রবণতা প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। এতদিন বাংলাদেশের মোট রেমিট্যান্সের সবচেয়ে বেশি অংশ আসত মধ্যপ্রাচ্যের ৬টি মুসলিম দেশ থেকে। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরব থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসত। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, একক বৃহত্তম রেমিট্যান্স প্রেরণকারী দেশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র সবার শীর্ষে উঠে এসেছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর জন্য বর্তমানে যেভাবে নগদ আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি কার্যকর পদ্ধতি হতে পারে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সম্পূর্ণরূপে বাজারভিত্তিক করা। এতে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের তৎপরতা কমে আসবে। ফলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ ২০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সম্পূর্ণ বাজারভিত্তিক করা হলে রিজার্ভ স্ফীত হবে।

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতিবছরই বাজেটে শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে। শিক্ষা খাতের সঙ্গে আরও দু-একটি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করে ব্যয় বরাদ্দ দেখানো হয়। আর শিক্ষা খাতে যে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়, তার বড় অংশই অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যয়িত হয়। ফলে শিক্ষা গবেষণা খাতের জন্য অর্থ সংকুলান করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ইউনেস্কোর মতে, একটি দেশের মোট জিডিপির অন্তত ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশে প্রতিবছর বাজেটে শিক্ষা খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তার পরিমাণ জিডিপির ২ শতাংশের কম। বেশিরভাগ অর্থ অবকাঠামোগত খাতে ব্যবহৃত হওয়ার ফলে শিক্ষা গবেষণায় অর্থ ব্যয় হয় খুবই সামান্য। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যাতে গবেষণা কাজে বেশি অর্থ বরাদ্দ করা হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষায়িত অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেখানে সাধারণ বিষয়ও পড়ানো হচ্ছে। এতে শিক্ষার মানের অবনতি ঘটছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ বিষয়ে শিক্ষাদান বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছে। দেশে বর্তমানে ৫৫টি পাবলিক এবং ১১৬টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এগুলোর পড়াশোনার মান নিয়ে আমাদের ভারতে হবে। স্বাধীনতার পর থেকেই আমাদের শিক্ষার মানের অবনতি ঘটতে শুরু করে। এখন তা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বিগত সরকারের আমলে শিক্ষার মানোন্নয়নের চেয়ে শিক্ষিতের হার বেশি দেখানোর প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। প্রয়োজনীয়তা যাচাই না করেই ব্যক্তিমালিকানায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনেকের ধারণা, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করার জন্য শিক্ষার মানের অবনতি ঘটানো হচ্ছে। বর্তমানে যারা উচ্চশিক্ষা অর্জন করছেন, তারা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে গুণগত মান নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। একটি কমিশন গঠনের মাধ্যমে শিক্ষা খাতে বাস্তব অবস্থা ও সংকট চিহ্নিত করে তা নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। শিক্ষা খাতে প্রতিবছর যে বাজেট বরাদ্দ, এর কত অংশ গবেষণা খাতে ব্যয় করতে হবে, এটা নির্দিষ্ট করে দেওয়া যেতে পারে।

বর্তমানে যেসব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তাদের অধিকাংশেরই নিজস্ব শিক্ষক নেই। তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এতে প্রাইভেট ও পাবলিক উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। এ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করছেন, তাদের অনেকের মাঝেই শিক্ষা বিস্তারের চেয়ে ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হওয়ার প্রবণতা কাজ করে থাকে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়কে সাধারণ ব্যবসার মতো বিবেচনা করে থাকেন। কেউ যাতে বিশ্ববিদ্যালয়কে সাধারণ আলু-পটোলের ব্যবসার মতো মনে করতে না পারেন, সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখতে হবে।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ হয়তো একবারে জিডিপির ৬ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব হবে না। তবে প্রতিবছরই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাজেট বরাদ্দ বাড়িয়ে আমাদের আন্তর্জাতিক মাত্রায় পৌঁছাতে হবে। উল্লেখ্য, শিক্ষা হচ্ছে একটি জাতির সবচেয়ে মূল্যবান ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ। শিক্ষা খাতের ওপর যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে অধীত শিক্ষার মানোন্নয়ন ঘটানো না গেলে কোনোদিনই টেকসই উন্নয়ন অর্জন করা সম্ভব হবে না।

অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ্ চৌধুরী : সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; বাহরাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত

ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম