Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

গ্রাউন্ড ব্রেকিং বৈঠক!

Icon

মোবায়েদুর রহমান

প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গ্রাউন্ড ব্রেকিং বৈঠক!

ফাইল ছবি

আজ ঠিক করেছিলাম জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে ড. ইউনূস যা বলেছেন, সেটি নিয়ে আলোচনা করব। কিন্তু এর মধ্যে একটি সংবাদ সবকিছুকে ছাপিয়ে সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সেটি হলো, আপনারা এ লেখাটি যখন পড়বেন, সেদিন অর্থাৎ ১৩ জুন শুক্রবার লন্ডন সময় সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে একটি বৈঠক হবে। লন্ডন সময় সকাল ৯টার অর্থ হলো বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টা। আর লন্ডন সময় ১১টা হলো বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টা। এ মিটিং হবে লন্ডনের বিখ্যাত ডরচেস্টার হোটেলে। চার দিনের সফরে ড. ইউনূস এ হোটেলেই থাকবেন। ১৪ জুন শনিবার তিনি ঢাকা ফিরবেন। বুধবার ১১ জানুয়ারি যখন এ কলামটি লিখছি, তখন বাংলাদেশের প্রায় সব পত্রিকায় অত্যন্ত ফলাও করে এ সংবাদ ছাপা হয়েছে। আর হবেই না বা কেন। দীর্ঘ ৯ মাস ড. ইউনূসের সরকার এবং দেশের বৃহত্তম দল বিএনপির মধ্যে রীতিমতো স্নায়বিক যুদ্ধের পর একেবারে সর্বোচ্চ পর্যায়ে দুই নেতার বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কী হবে এ বৈঠকের ফলাফল? এ বৈঠক কি ব্যর্থ হবে? নাকি এ বৈঠক সফল হবে?

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার চোখের চিকিৎসার জন্য মাসাধিককাল ব্যাংককে অবস্থান করছিলেন। তার অনুপস্থিতিতে জনাব সালাহউদ্দিনকেই বিএনপির মুখপাত্র বলে মনে হচ্ছিল। এই এক মাস সালাহউদ্দিন সাহেব ড. ইউনূস এবং তার সরকারের বিরুদ্ধে অত্যন্ত গরম গরম কথা বলেছেন। আমরা বলব না, এগুলো সালাহউদ্দিন সাহেবের ব্যক্তিগত কথা। সংগতভাবে ধারণা করা হয়, সর্বোচ্চ নেতা এবং বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির মনোভাব এবং অবস্থানই তার কঠোর বক্তব্যের মাধ্যমে প্রতিফলিত হচ্ছিল। তবে তার ভাষা অত্যন্ত কঠোর হওয়ায় সাধারণ মানুষ ধারণা করেছিলেন, বিএনপির সঙ্গে ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্ক দিনের পর দিন তিক্ত হচ্ছে এবং তাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে। এর মধ্যে গত ৪-৫ দিন আগে মির্জা ফখরুল ব্যাংকক থেকে সুস্থ হয়ে ঢাকায় ফিরেছেন।

২.

তিনি আসার পর নির্বাচনের সময়সীমা এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে হবে বলে ড. ইউনূসের ভাষণে যা বলা হয়েছে, সে ব্যাপারে দলের অবস্থান অনুযায়ী দ্বিমত পোষণ করলেও মির্জা ফখরুলের ভাষাকে তুলনামূলকভাবে কিছুটা নমনীয় মনে হয়েছে। তিনি এ বৈঠক সম্পর্কে এতদূরও বলেছেন, এ বৈঠক হতে পারে একটি টার্নিং পয়েন্ট। তারপর আবার বলেছেন, এ বৈঠক বাংলাদেশের রাজনীতিতে হতে পারে একটি মাইলস্টোন বা মাইলফলক। কেন তিনি এমন আশাবাদী কথা বললেন?

এ ধরনের শীর্ষ বৈঠক একদিক দিয়ে অত্যন্ত রিস্কি। কারণ বৈঠক যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে বিবদমান পক্ষগুলোর জন্য সেটি হয়ে ওঠে পয়েন্ট অয নো রিটার্ন। অর্থাৎ সংঘাত থেকে ফেরার আর কোনো পথ থাকে না। তবে যদি সফল হয়, তাহলে কোনো তৃতীয় পক্ষ এর মধ্যে ঢুকে সেই সফলতাকে বানচাল করার কোনো সুযোগ পায় না। আমরা মির্জা ফখরুলের মন্তব্যকে ইতিবাচকভাবেই দেখছি। কেন দেখছি, সেটি একটু পরেই বলছি। তার আগে ড. ইউনূসের ঈদ ভাষণ এবং অনুষ্ঠেয় বৈঠকের ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে দুটো কথা।

ঈদের আগের রাতে অর্থাৎ ৬ জুন সন্ধ্যা ৭টায় ড. ইউনূস ৪ হাজার ৫২৪ শব্দের এক সুদীর্ঘ ভাষণ দেন। এ ভাষণটি আমি স্ক্যান করে দেখেছি, সেখানে ২২টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট পাওয়া যায়। এসব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের মধ্যে রয়েছে সরকারের সাফল্যের বর্ণনা। যেমন কোনো কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য কিছুটা হ্রাস, ভারতসহ বিদেশিরা জ্বালানি বাবদ যে বকেয়া পাচ্ছিল, সেটি শোধ করা, ১ হাজার অবকাঠামো এবং প্রতিষ্ঠানের নাম শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা, বেগম ফজিলাতুন্নেছাসহ শেখ পরিবারের নামে করা হয়েছিল, সেসব অবকাঠামো ও প্রতিষ্ঠানের নাম বদলে ফেলা, জাপান কর্তৃক ১ লাখ বাংলাদেশি কর্মী গ্রহণ করা, ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবর্তনের ওয়াদা আদায় ইত্যাদি। আরও বলেছেন, গুম, খুন ও জুলাই হত্যার বিচার শুরুর কথা। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে যে অংশটি শোনার জন্য সারা দেশের মানুষ উদগ্রীব ছিলেন, সেটি বলেছেন তিনি একেবারে শেষে। ঘোষণা করেছেন, বহুপ্রতীক্ষিত নির্বাচন আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে হবে।

প্রধান উপদেষ্টার এ অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে নির্বাচনি সময়সীমা সম্পর্কে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। জামায়াতে ইসলামী, চরমোনাইয়ের হুজুরের ইসলামী আন্দোলন, মওলানা মামুনুল হকের হেফাজতে ইসলাম নির্বাচনি সময়সীমা ঘোষণার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান। এনসিপিও এ ভাষণের প্রশংসা করেছে। তবে তারা বলেছে, জুলাই চার্টার ঘোষিত হওয়ার পর যদি নির্বাচনি সময়ের ঘোষণা আসত, তাহলে ভালো হতো।

৩.

বিএনপি এপ্রিলে নির্বাচন হওয়ার ঘোষণাকে সমর্থন করতে পারেনি। ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে তারা অনড়। জনাব সালাহউদ্দিন হুমকি দিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই দাবি আদায়ের জন্য তারা রাজপথের কর্মসূচির চিন্তা-ভাবনা করছেন। ঈদের পর বিএনপির মিত্রদের সঙ্গে অর্থাৎ সমমনাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য বিএনপি বসবে এবং যুগপৎ কর্মসূচি গ্রহণ করে রাজপথে নামবে। তবে আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে সেটি হবে ‘সফট পেডাল’ মুভমেন্ট। এতেও যদি দাবি আদায় না হয়, তাহলে তারা হার্ডলাইনে যাবে।

এমন একটি পটভূমিকায় ড. ইউনূস গত ৯ জুন লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন এবং ১০ জুন সকালে লন্ডন পৌঁছেন। বস্তুত ড. ইউনূসের লন্ডন গমনের কর্মসূচি পূর্বনির্ধারিত ছিল। ১৫ দিন আগেই জানা যায়, তিনি ব্রিটেনের রাজা চার্লসের কাছ থেকে একটি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করার জন্য ব্রিটেন যাবেন। অবশ্য যুক্তরাজ্য এ সফরকে স্টেট ভিজিট হিসাবে গ্রহণ করেছে।

ড. ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফরের খবরটি জানাজানি হওয়ার পর পর্দার অন্তরালে সরকার পক্ষে তৎপরতা শুরু হয়। উপদেষ্টা পরিষদে যেসব পলিটিক্যাল এলিমেন্ট রয়েছেন, তারা বেশ কিছুদিন থেকেই বিএনপি এবং সরকারের মধ্যে ক্রমবর্ধমান দূরত্বে উদ্বিগ্ন হচ্ছিলেন। তারা চাচ্ছিলেন, যেভাবেই হোক ড. ইউনূসের সঙ্গে দূরত্ব ঘুচিয়ে ফেলা হোক। কিন্তু নির্বাচনের সময় নিয়ে বিএনপির অনড় অবস্থানের কারণে তারা সে কথা ড. ইউনূসকে বলতে পারছিলেন না। অবশেষে ড. ইউনূসের ব্রিটেন সফরের সংবাদ তাদের সেই সুযোগ এনে দেয়। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানাচ্ছেন, সরকারের তরফ থেকে বিএনপিকে বার্তা দেওয়া হয়, ড. ইউনূস লন্ডন সফরকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করতে ইচ্ছুক। বিএনপি এ বার্তা পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে কোনো জবাব না দিয়ে নিরুত্তর থাকে। এর মধ্যে বিএনপির দাবি যতদূর সম্ভব মেটানোর জন্য ঈদের ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা আগামী এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচনের ঘোষণা দেন। এ ঘোষণা বিএনপির ঢাকার নেতাদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি।

লন্ডনে বসবাসকারী যুগান্তরের এ কলামিস্টের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তারা এ বৈঠক অনুষ্ঠানের জন্য লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেন। হাইকমিশনও তারেক রহমানকে তাদের বার্তা পৌঁছে দেন। তারেক রহমান তাৎক্ষণিকভাবে এ অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেননি। এ বিষয়ে ঢাকার সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করলে স্ট্যান্ডিং কমিটির অন্তত তিনজন সদস্য এর ঘোরতর বিরোধিতা করেন। এ কারণেই তারেক রহমান সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব করছিলেন।

৪.

এর মধ্যে পবিত্র ঈদ এসে যায়। ঈদের দিন বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটি বেগম জিয়ার সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য তার সঙ্গে দেখা করেন। সাধারণ কুশলাদি বিনিময়ের পর বেগম জিয়া নাকি তাদের প্রশ্ন করেন, ড. ইউনূসের সঙ্গে এ তিক্ততা ও দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে কেন? তিনি সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য বলেন। পরদিন বেগম জিয়া লন্ডনে তার পুত্রের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। তিনি নাকি স্পষ্ট তাকে বলেন, ইন্টারিম সরকারের সঙ্গে বিএনপি যদি সংঘাতে লিপ্ত হয়, তাহলে তার সুযোগ গ্রহণ করবে পতিত ফ্যাসিবাদ এবং তার বাইরের মিত্র।

বেগম জিয়ার অ্যাটিচুড বুঝতে পেরে পরদিনই তারেক রহমান বিএনপি স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিং ডাকেন। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ৬ জুন ড. ইউনূসের ঈদের ভাষণ শেষ হওয়ার পর বিএনপি স্ট্যান্ডিং কমিটি জরুরি বৈঠকে মিলিত হয়। ওই বৈঠক রাত ১২টা পর্যন্ত চলে। বৈঠকের পরদিন বিএনপি যে প্রেস রিলিজ দেয়, তাতে বলা হয়, ড. ইউনূস নাকি তার ভাষণে সভ্যতা ও ভব্যতার সীমা ছাড়িয়ে গেছেন। প্রেস রিলিজের এ অংশটি নাকি বেগম জিয়ার পছন্দ হয়নি। তাই তিনি ঈদের দিন স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে তার মনোভাব প্রকাশ করেন, যেটি স্ট্যান্ডিং কমিটির অবস্থানের সঙ্গে খাপ খায় না। পরদিন স্ট্যান্ডিং কমিটির আবারও বৈঠক হলে বেগম জিয়ার নির্দেশনা মোতাবেক বৈঠকের জন্য ড. ইউনূসের অনুরোধে বিএনপি সম্মতি জানায়।

এই হলো আজ ১৩ জুন শুক্রবার সরকার ও বিএনপির শীর্ষ দুই নেতার মধ্যে অনুষ্ঠেয় বৈঠকের পটভূমি। এ বৈঠক নিয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল এটিকে টার্নিং পয়েন্ট এবং মাইলস্টোন বলে যে মন্তব্য করেছেন সেটি সঠিক।

সব রাজনৈতিক দল এবং বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ গভীর আগ্রহ নিয়ে এ শীর্ষ বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছেন। সবাই এ বৈঠকের ইতিবাচক ফলাফল চান। অভিজ্ঞ রাজনৈতিক মহল এটি ভেবে বিস্মিত হচ্ছেন, পতিত আওয়ামী স্বৈরাচার এবং ভারতীয় প্রভুত্ব সম্পর্কে বিএনপি এবং ইন্টারিম সরকার একই সমতলে অবস্থান করছে। বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের হাতে বিএনপি চরম নির্যাতিত হয়েছে। আবার বিগত ১০ মাসে এ সরকার ভারতের প্রভুত্বের চিহ্নগুলো মুছে ফেলায় নিরন্তর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এ সরকার শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সব শীর্ষ নেতাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। এ সরকার আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। যে শেখ মুজিবকে পুঁজি করে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করেছে এবং বিএনপিসহ বিরোধী দলের ওপর জুলুম-নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছে ১৫ বছর, সেই শেখ মুজিবের ইমেজ ধ্বংস হয়েছে জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে। শেখ মুজিব এবং তার গোত্র তথা গোষ্ঠীর অন্তত ১ হাজার ম্যুরাল ও মূর্তি ধ্বংস করা হয়েছে।

ভারত এ বিপ্লবকে মেনে নেয়নি। এখনো তারা এ বিপ্লবকে সন্ত্রাসীদের সুসংগঠিত অপরাধ বলে মনে করে। ড. ইউনূস তাদের চক্ষুশূল। তারা অতীতে বেগম জিয়া, তারেক রহমান এবং বিএনপিকে মেনে নিতে পারেনি। তারা শেখ হাসিনাসহ দেড় লাখ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে ভারতে আশ্রয় দিয়েছে। ভারত কোনোদিন বাংলাদেশকে কবজা করতে পারবে না, যদি বিএনপি এবং ইন্টারিম সরকারের মধ্যে সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। আজ বিকালের বৈঠক হোক সেই সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠার বৈঠক।

আজকের বৈঠক হবে এ জাতির জীবনে একটি গ্রাউন্ড ব্রেকিং বৈঠক।

মোবায়েদুর রহমান : সিনিয়র সাংবাদিক

journalist15@gmail.com

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম