Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

দেশের অর্থনীতি বদলে দিতে পারে কার্বন ক্রেডিট

Icon

নাজলি হুসাইন

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশের শিল্প খাত পরিবর্তনের পথে, কারণ এখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশগত দায়িত্ব নিয়েও চিন্তা করতে হচ্ছে। এর মধ্যে ইস্পাতশিল্প অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। একসময়ের অধিক দূষণকারী এ খাত এখন কার্বন ক্রেডিট বাণিজ্য গ্রহণ করে দূষণ কমাচ্ছে, একই সঙ্গে মুনাফা বাড়াচ্ছে। কার্বন ক্রেডিট হলো দূষণ কমানোর জন্য দেওয়া আর্থিক সুবিধা। যদি কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান সৌরশক্তির মতো পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহার করে এবং কার্বন নিঃসরণ কমায়, তাহলে তারা কার্বন ক্রেডিট পায়। যেসব কোম্পানি দূষণ ভারসাম্য করতে চায়, তাদের কাছেও এ ক্রেডিট বিক্রি করা যায়। এতে একদিকে পরিবেশের ক্ষতি কমানো যায়, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানগুলোও লাভবান হয়। একইভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সনদ (আরইসি) এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অবদানের স্বীকৃতি বিক্রি করতে পারে। এটি শিল্প খাতকে দূষণ কমাতে উৎসাহিত করে। এর সুফল হিসাবে ইস্পাত, সিমেন্ট কিংবা টেক্সটাইলের মতো জ্বালানিনির্ভর শিল্পগুলো পরিবেশের ক্ষতি কমিয়ে আরও সম্প্রসারিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এভাবে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর পুরোপুরি নির্ভর না করে, সৌরশক্তির মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ করে এবং কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আর্থিক সুবিধা লাভ করা সম্ভব। এতে পরিবেশ রক্ষা ও ব্যবসার লাভ দুই দিকই নিশ্চিত হয়। কার্বন ক্রেডিট বিনিয়োগে আগ্রহী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আকৃষ্ট করতে পারে। যেসব প্রতিষ্ঠান পরিবেশ, সামাজিক ও প্রশাসনিক (ইএসজি) নীতিতে এগিয়ে, তারা বৈশ্বিক বিনিয়োগ ও অংশীদারত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশি সুবিধা পাবে। কারণ, বিশ্ব এখন আরও বেশি পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগের দিকে এগোচ্ছে।

বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও জ্বালানি দক্ষতা প্রকল্পের প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (আইডিসিওএল)। ফলে দেশেও কার্বন ক্রেডিট উৎপাদন ও বিক্রয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আইডিসিওএল ২০০৬ সাল থেকে প্রায় ২.৫৩ মিলিয়ন কার্বন ক্রেডিট বিক্রয় করে ১৬.২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব আয় করেছে। কার্বন ক্রেডিট ট্রেডিংয়ের এটি প্রশংসনীয় সাফল্য হিসাবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। আশা করা যায়, দেশীয় কারখানাগুলো কার্বন-নিরপেক্ষতা লক্ষ্য অর্জন করলে এ সাফল্যের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে শুধু ইস্পাত শিল্পই নয়, দেশের তৈরি পোশাক খাতও অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। গর্বের সঙ্গে বলা যায়, দেশে এখন ২৩৩টি এলইইডি প্রত্যয়িত কারখানা রয়েছে, যারা মার্কিন গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) থেকে সাস্টেইনেবল প্র্যাক্টিস, যেমন-বিদ্যুৎ সাশ্রয়, জল সাশ্রয়, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নবায়নযোগ্য শক্তি বৃদ্ধি, জল সংরক্ষণ ও ব্যবহার, সবুজ উদ্ভিদ ইত্যাদির জন্য পুরস্কার লাভ করেছে। এছাড়া রুফটপ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে আরইসি বিক্রি করে অতিরিক্ত আয়ের উদাহরণও রয়েছে।

বাংলাদেশ যদি কার্বন ক্রেডিট বাণিজ্যের পূর্ণ সুবিধা নিতে চায়, তাহলে একটি শক্তিশালী নীতিমালা গড়ে তোলা জরুরি। ভালোভাবে নিয়ন্ত্রিত বাজারব্যবস্থা তৈরি, আরইসি নিবন্ধন সহজ করা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগের জন্য প্রণোদনা দেওয়া, শিল্প খাতকে আরও পরিবেশবান্ধব হতে উৎসাহিত করবে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব এ পরিবর্তনকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে, যা শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেই টেকসই অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ তৈরি হলে কোম্পানিগুলো যেমন লাভবান হবে, তেমনি জলবায়ু লক্ষ্য পূরণেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। এটি শুধু পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব নয়, বরং অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও, যা বাংলাদেশকে টেকসই শিল্প উন্নয়নের নেতৃত্বে নিয়ে যেতে পারে।

প্রকৌশলী, সিইও, প্র্যাক্সিস আর্কিটেক্টস

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম