Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

দেশের জনসংখ্যা আশীর্বাদ, না অভিশাপ

Icon

মোহাম্মদ আবদুল মান্নান

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বর্তমান বিশ্বের জনসংখ্যা ৮০০ কোটি। সব দেশেই জনসংখ্যা কমবেশি বাড়ছে। অনেক দেশ আয়তনে বড় হলেও জনসংখ্যা অনেক কম। ফলে প্রশস্ত জায়গায় আরাম-আয়েশে সুখে শান্তিতে বসবাস করার মতো যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা তাদের রয়েছে। সেসব দেশে জনসংখ্যা কম; কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তিগত কাজের পরিমাণ অনেক বেশি। তাই তারা কাজের পরিধি ও পরিকল্পনার প্রয়োজনে অন্য দেশ থেকে জনবল এনে চাহিদা পূরণ করে। তবে আজকাল যেভাবে কৃত্রিম রোবটিক কলাকৌশল দ্বারা কার্যাদি সম্পন্ন করা হচ্ছে, হয়তো এমন দিন আসবে, যেদিন মানুষের জনবল চাহিদা রোবটের মাধ্যমেই অনেকটা পূরণ হবে। তবে রোবটকে চালানোর জন্য অবশ্যই বুদ্ধিমান মানুষের দরকার পড়বে। আজকাল অনেক দেশে বাড়িঘর, কলকারখানা, হোটেল ইত্যাদিতে রোবট দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে দেখা যাচ্ছে। আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক প্রযুক্তির প্রসারের ফলে এভাবে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা চলতেই থাকবে।

আমাদের দেশের কথাই ধরা যাক। এদেশের আয়তন কমবেশি ৫৫ হাজার বর্গমাইল। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর আমরা ১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ করি, তখন আমাদের লোকসংখ্যা ছিল সাড়ে ৭ কোটি। গত ৫৩ বছরে আমাদের দেশে জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটিতে। অনেকে বলেন, ২০ কোটি। আমাদের দেশে মৃত্যুর তুলনায় জন্মহার অনেক বেশি, তাই ছোট দেশে লোকবসতিও ঘন। কিন্তু কর্মসংস্থান একেবারেই কম। তাই বেকার ও শিক্ষিত বেকার সমস্যা বেড়েই চলেছে। প্রতিবছর স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী পাশ করে বের হয়, যাদের ৮০-৯০ শতাংশই শিক্ষিত বেকার থেকে যায়। কর্মসংস্থান না থাকায় তারা বেকার অবস্থায় থাকে। এক সময় তারা হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে, নয়তো চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, লুটপাট, দুর্নীতি ইত্যাদি অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। ফলে দেশে অশান্তি, অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা, নানা রকম অরাজকতার সৃষ্টি হয়।

এমতাবস্থায়, হতাশাগ্রস্ত বেকারদের কিছু অংশ দেশে কাজ না পেয়ে অতি কষ্টে অর্থ জোগাড় করে বিদেশে যেতে চায়। কাজের সন্ধানে ব্যাকুল এসব মানুষ বিদেশে কর্মসংস্থানের বিষয়ে অজ্ঞানতার কারণে দালালের শরণাপন্ন হয়। ফলে প্রতারণার ফাঁদে পড়ে অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি দিতে গিয়ে যাত্রাপথেই মৃত্যুর মুখে পতিত হয়, কেউ আবার অথৈ সাগরের পানিতে ডুবে মারা যায়। বিদেশে কর্মসংস্থান করে দেওয়ার মতো আমাদের দেশে সৎ রিক্রুটিং এজেন্সি এবং অন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা না থাকাই এর কারণ। দালালরা প্রায়ই সুযোগ পেলে শ্রমিকদের টাকা মেরে দিয়ে বিদেশ-বিভুঁইয়ে মারাত্মক বিপদে ফেলে দেয়। দেশের স্বজনরা ভিটাবাড়ি বিক্রি করে তার জন্য টাকা পাঠিয়ে দেউলিয়া হয়ে যায়। আবার যারা জীবন বাজি রেখে বিদেশে যেতে সক্ষম হয়, দালালদের প্রতারণার কারণে সেখানে চাকরির জন্য তাদের হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়। যদিওবা কাজ মেলে, অবৈধ অভিবাসী হওয়ার কারণে মাঝেমধ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযানে আটক হতে হয়। ফলে বিনা অপরাধেই করতে হয় হাজতবাস, কাউকে আবার গরু-ছাগলের মতো কোমরে দড়ি বেঁধে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নিঃস্ব অবস্থায় দেশে ফিরে কোনো কাজ না পেয়ে তারা আবার হতাশায় ভুগতে থাকে। এমন বাস্তবতায় দেশের কম করে হলেও ৪ কোটি বেকার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান কীভাবে হবে, সরকারকে তা গভীরভাবে চিন্তা করে দেখতে হবে। কোনো দেশই অদক্ষ শ্রমিক নিতে চায় না। এদিকে দেশে আধুনিক কারিগরি জ্ঞানলাভের পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় অনেকে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তা লাভ করতে পারে না। আমাদের তাই কারিগরি শিক্ষাদানের প্রসারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। বেসরকারি পর্যায়ে কারিগরি শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রেও সরকারকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

আমাদের দেশে বৈদেশিক আয়ের উৎসগুলোর মধ্যে রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে একে শুধু আয়ের উৎস হিসাবে দেখলেই হবে না, দেশের এ বিপুলসংখ্যক মানুষকে জনসম্পদে পরিণত করতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। জনসংখ্যার একটি অংশকে যদি কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তোলা যায়, তাহলে আরও বেশিসংখ্যক মানুষকে বিদেশে পাঠানো সম্ভব হবে। এতে বেকারত্বের হার কমবে, দেশ পাবে আরও রেমিট্যান্স। বেকার তরুণ-তরুণীদের একটি বড় অংশকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন এ কারণে রয়েছে যে, জনআধিক্য ও বাড়ি-ঘর, কল-কারখানা, রাস্তা-ঘাটের মতো স্থাপনা বৃদ্ধির কারণে দেশে ফসলি জমির পরিমাণ কমে আসছে। এমন অবস্থায় দেশের দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য আমাদের একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য সুব্যবস্থা করতে হবে, তেমনি জনসংখ্যার আধিক্য রোধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

প্রকৌশলী ও মুক্তিযোদ্ধা, কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম