Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

বজ্রপাতে সতর্কতা জরুরি

Icon

এমদাদুর রহমান উদয়

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে বজ্রপাত সম্প্রতি প্রাণঘাতী বিপর্যয় হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে বজ্রপাতের প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পায়, ফলে প্রতিবছর বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে, আহত হন অনেকে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বজ্রপাতজনিত কারণে সারা দেশে তিন শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, আহতের সংখ্যাও কম নয়। চলতি বছরে এর মাত্রা আরও বেড়েছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর জানিয়েছে, সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যবর্তী সময়ে বজ্রপাতের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে। এ সময় কৃষক, দিনমজুর, শিক্ষার্থী এবং খোলা আকাশের নিচে অবস্থানরত ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতের ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বজ্রপাতের ঘনত্ব ও তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগাম সতর্কতা ছাড়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ সরকার বজ্রপাতকে ২০১৬ সালে ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ হিসাবে স্বীকৃতি দিলেও জনসাধারণের মাঝে সচেতনতার অভাব এখনো পরিলক্ষিত হচ্ছে। অধিকাংশ মানুষ বজ্রপাতের সময় কী করণীয়, তা জানেন না কিংবা জানলেও তা অনুসরণ করেন না। ফলে প্রাণহানির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বজ্রপাতের সময় নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এ সময় খোলা মাঠে অবস্থান না করে ঘরের ভেতরে অথবা কংক্রিট নির্মিত ভবনে অবস্থান করা উচিত। বজ্রপাত চলাকালীন মোবাইল ফোন, টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর কিংবা অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করাই উত্তম। গাছের নিচে আশ্রয় নেওয়াও বিপজ্জনক হতে পারে। তাই স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কৃষিকাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের জন্য বজ্রপাতের সময় কাজ বন্ধ রাখা এবং আশ্রয় নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন। আমাদের দেশে বজ্রপাতজনিত মৃত্যুর ঘটনার সিংহভাগই সাধারণ কৃষক ও খেটে খাওয়া মানুষ। বজ্রপাতের সময় ছাতা ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও সাবধান থাকা জরুরি। ছাতার ধাতব অংশের সংস্পর্শে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

বজ্রপাতজনিত প্রাণহানি রোধে সরকার অবশ্য বেশকিছু কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো-‘স্মার্ট অ্যালার্ট সিস্টেম’ চালু করা, যার মাধ্যমে মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠিয়ে মানুষকে আগাম সতর্ক করা হচ্ছে। এ ছাড়া স্থানীয় প্রশাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ বজ্রপাতপ্রবণ এলাকাগুলোতে সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালু করেছে। স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের মাঝে লিফলেট বিতরণ, পোস্টার প্রদর্শন এবং প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজনের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সচেতন করে তোলা হচ্ছে। তবে বজ্রপাত রোধে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থাও গড়ে তোলা জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় তাল, খেজুর, নারিকেল ও বটগাছের মতো উঁচু বৃক্ষরোপণ বজ্রপাত নিরোধক হিসাবে কাজ করতে পারে। অতীতে বিভিন্ন অঞ্চলে এ ধরনের বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম শুরু হলেও তা ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায়নি। পরিবেশবাদীরা বলছেন, সরকারিভাবে একটি সমন্বিত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় গাছ লাগানো হলে দীর্ঘমেয়াদে সুফল পাওয়া যাবে। এছাড়া জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় মসজিদ, বিদ্যালয় এবং সামাজিক সংগঠনগুলোও সচেতনতা গড়ে তোলার কাজে এগিয়ে আসতে হবে। বজ্রপাতে সতর্কতা অবলম্বনের বিষয়টি শুধু প্রচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করাই আমাদের সবার দায়িত্ব।’

শিক্ষার্থী, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম