Logo
Logo
×

বাতায়ন

বিশ্বে নতুন সংকট তৈরি করবে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’

Icon

লে. কর্নেল (অব.) ড. এ কে এম মাকসুদুল হক

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিশ্বে নতুন সংকট তৈরি করবে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’

ট্রাম্পের মধ্যস্ততায় হোয়াইট হাউসে ইসরাইল-আমিরাত-বাহরাইনের আব্রাহাম আকর্ডস চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ফাইল ছবি

গত ১৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইসরাইলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ চুক্তি হয়ে গেল। ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’ নামের এ চুক্তিকে পশ্চিমা বিশ্ব স্বাগত জানালেও মুসলিম বিশ্বে এর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। তবে চুক্তিটির কেন্দ্রবিন্দুতে যে পক্ষের অবস্থান তারা অর্থাৎ ফিলিস্তিনিরা পুরোপুরি অবহেলিতই রয়ে গেছে।

এর আগে গত ২৮ জানুয়ারিতেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘ইসরাইল-ফিলিস্তিন’ শান্তিচুক্তি পরিকল্পনা প্রকাশ করে সেটিকে ‘শতাব্দীর সেরা চুক্তি’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। যদিও সেই চুক্তি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল একতরফাভাবে, ফিলিস্তিনিদের সম্পূর্ণরূপে বাইরে রেখে। এবারও যাদের জন্য চুক্তি তাদের বাদ দিয়ে ইসরাইল ও অন্য আরব দেশগুলোর চুক্তি সম্পাদনসংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর ভূ-রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক লালসাকেই উন্মোচিত করেছে।

‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’ দ্বারা সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন এ দুটি আরব রাষ্ট্র ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। বিনিময়ে ইসরাইল পশ্চিমতীর ও গাজা উপত্যকায় তাদের সার্বভৌমত্ব স্থগিত করবে এবং সেখানে নতুনভাবে দখলিকরণ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখবে। আর তাদের সঙ্গে ইসরাইলের বিনিয়োগ, পর্যটন, সরাসরি ফ্লাইট, নিরাপত্তা, টেলিযোগাযোগ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতার চুক্তি সম্পাদন হবে। জানা যায়, এ আরব দেশ দুটি আগে থেকেই ইসরাইলের সঙ্গে গোপন বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। এ চুক্তির ফলে শুধু সেই সম্পর্কের প্রকাশ্য সংস্করণ ঘটবে। এ নিয়ে আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে মোট চারটি দেশ ইসরাইলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হল। এর আগে ১৯৭৯ সালে মিসর এবং ১৯৯৪ সালে জর্ডান ইসরাইলের সঙ্গে চুক্তি করেছিল। তবে ১৫ সেপ্টেম্বর চুক্তির পরপরই ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী তার পশ্চিমতীর ও গাজায় দখলদারিত্ব প্রক্রিয়া এবং সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। অর্থাৎ সদ্য সম্পন্ন চুক্তিকে দম্ভভরে নেতানিয়াহু বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছেন। ফলে ফিলিস্তিনিদের কোনো লাভ না হলেও সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন এ চুক্তির লাভের হিসাব পুরোটাই ঘরে তুলবে। সুতরাং ১৫ সেপ্টেম্বর সম্পাদিত চুক্তির নেপথ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এবং স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রগুলোর ভূ-রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক ও নিরাপত্তাজনিত উচ্চাভিলাষ সক্রিয় রয়েছে বলে গবেষকরা মনে করেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন যদিও বলতে চাচ্ছে, চুক্তির উদ্দেশ্য হল ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধ করা; কিন্তু সেটি নেতানিয়াহু চুক্তির পরপরই নাকচ করে দিয়েছেন। তবে ওই আরব রাষ্ট্র দুটি এ চুক্তি থেকে খুবই লাভবান হতে পারবে। এখন তারা প্রকাশ্যে স্বাধীনভাবে ইসরাইলের সঙ্গে নতুন নতুন বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালাতে পারবে। এ ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে বিনিয়োগ, আমদানি-রফতানি, তেল-গ্যাসের বাণিজ্য ইত্যাদি বিষয়ে আর কোনো বাধাই থাকল না। আর এ চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক অস্ত্র ক্রয়ের পথ অত্যন্ত সুগম হবে। ইসরাইলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক চুক্তির কারণে এবং এ দেশগুলোর সঙ্গে ইসরাইলের স্বাভাবিক সম্পর্ক না থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র তাদের কাছে বিক্রয়ে বাধা ছিল। বিশেষ করে আবুধাবী এ চুক্তির ফলে এফ-৩৫ জঙ্গিবিমান এবং স্টিলথ্ এয়ার ক্রাফ্ট ক্রয় করতে পারবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। আর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকাটা তাদের (ইউএই) রাজনৈতিক নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত জরুরি। কারণ, বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের ঢেউ অথবা আরব বসন্তের মতো গণতন্ত্রের জোয়ার যে কোনো সময় তাদের রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে। ইতোমধ্যে ইরান জুজুর ভয় তাদের মাঝে বেশ ক্রিয়াশীল রয়েছে। ইউএইতে মাত্র ১৫ শতাংশ শিয়া সম্প্রদায়ের নাগরিক থাকলেও বাহরাইনে মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশই শিয়া। কাজেই তাদের মাঝে ইরানভীতি অত্যন্ত প্রকট। তাছাড়া একদিকে সৌদির সঙ্গে তাদের বন্ধুত্ব এবং অন্যদিকে সৌদির সঙ্গে ইরানের চরম শত্রুতার সম্পর্কের জন্য তারা আরও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এ অবস্থায় নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ইসরাইলের সঙ্গে চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বলয়ে আশ্রয় নেয়াটা তাদের হুমকিমুক্ত করবে। আর এ চুক্তির ব্যাপারে সৌদি রাজতন্ত্র আগাগোড়া একেবারেই নীরব। অনুজপ্রতিম দেশ দুটোর এ ধরনের আরব স্বার্থবিরোধী চুক্তিতে মুরব্বি দেশের নীরব থাকাটা এক ধরনের সম্মতির লক্ষণ। এতে মনে হচ্ছে, এ চুক্তি ইরানবিরোধী শিবিরকে শক্তিশালী করবে বলে সৌদি রাজতান্ত্রিক নেতৃত্ব বরং খুশিই হয়েছে। আর বিভিন্ন খবরাদি থেকে বোঝা যায়, বর্তমান সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মো. বিন সালমান ইসরাইলের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক বজায় রেখে চলছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চাভিলাষী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ চুক্তি সম্পাদন সম্ভব হয়েছে। ক্ষমতায় আরোহণের পর থেকেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইসরাইলকেন্দ্রিক বিদেশনীতির ওপর ভর করে তার সব অযোগ্যতাকে আড়াল করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তার ইহুদি বংশোদ্ভূত জামাতা জারেড কুশনারকে উপদেষ্টা বানিয়ে তাকে ইসরাইলের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করাচ্ছেন। প্রথমে গত ২৮ জানুয়ারি তিনি ‘ইসরাইল-ফিলিস্তিন’ চুক্তির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন, যা আপাতদৃষ্টিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। যতই মার্কিন নির্বাচন এগিয়ে আসছে, ততই তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠছেন মধ্যপ্রাচ্যে কূটনৈতিক সফলতা মার্কিন জনগণকে দেখানোর জন্য। অর্থনীতি, করোনা মোকাবেলা, সুশাসন, কূটনীতি, ইরান মোকাবেলা ইত্যাদি সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে রিক্তহস্তে তিনি এখন দুটি আরব দেশকে কূটচালের মাধ্যমে দলছুট করে ইসরাইলের সঙ্গে চুক্তি করিয়ে বিশাল কূটনৈতিক সফলতার ঢোল বাজাতে চাচ্ছেন। এ সফলতা যুক্তরাষ্ট্রের আগামী ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে ইসরাইলপন্থী ভোটব্যাংকে ট্রাম্পের দিকে জোয়ার তুলতে সহায়তা করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশের ভেতরে নানা ব্যর্থতায় পর্যুদস্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মার্কিন নাগরিকদের মনোযোগ কাড়ার জন্য ইরানকে নিয়ে ভীষণরকম ব্যতিব্যস্ত আছেন। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানই একমাত্র তাদের নির্বিঘ্নে স্বার্থ হাসিলের পথে বাধা। কাজেই ইরানকে বাগে আনার জন্য আরব দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল অক্ষে আনার বিকল্প নেই। সহযোগিতার নামে মধ্যপ্রাচ্যের বিশাল তেলসম্পদ আহরণের উদ্দেশ্যে সেই এলাকায় মোতায়েনকৃত মার্কিন বাহিনীর নিরাপত্তার জন্য ইরানকে কোণঠাসা করে রাখা ট্রাম্পের অত্যন্ত প্রয়োজন। কাজেই ইরানের প্রতিবেশী দেশগুলোকে ছলে-বলে-কৌশলে ইসরাইল বলয়ে আনতে পারাটা যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় সফলতা হবে। তাছাড়া চীনকে মোকাবেলা করার জন্যও মধ্যপ্রাচ্যে ইরানবিরোধী ইসরাইল-আরব অক্ষ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে চীন প্রচুর বিনিয়োগ করেছে ইরানে। ইরানের ‘চাবাহার-জাহিদান’ রেলওয়ে ও বন্দর আব্বাসের কাছে নতুন টার্মিনাল স্থাপনের জন্য বিশাল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে চীন। এর অন্য পাশেই সংযুক্ত আরব আমিরাত অবস্থিত। চীনের এ তৎপরতা তাই ট্রাম্প প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে। আবার ইয়েমেনের দক্ষিণে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ‘সোকোতারা’ আরব সাগরের এডেন উপসাগর ও লোহিত সাগরের কাছে অবস্থিত। সেখানে ইসরাইল ও ইউএই যৌথভাবে গোয়েন্দা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র এবং সামরিক স্থাপনা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ দ্বীপ থেকে ইরান, পাকিস্তান ও চীনের গতি-প্রকৃতির ওপর নজরদারি করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে ব্যক্তিগতভাবে একজন ব্যবসায়ী হিসেবেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য হাসিলের প্রয়াস পেয়েছেন এ চুক্তির মাধ্যমে। চুক্তির ফলে অত্যাধুনিক মার্কিন যুদ্ধসরঞ্জাম ইউএই ও বাহরাইনের কাছে বিক্রির বাজার খুলে যাবে।

হোয়াইট হাউসের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাবেষ্টনীর মাঝে ট্রাম্পের চোখের সামনে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী এবং ইউএই ও বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয় এ আলোচিত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়নের জায়গা সেই মধ্যপ্রাচ্য এত নিরাপদ নয়। এ অঞ্চল আরও অনিরাপদ হয়ে উঠবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। এমনকি এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব বৈশ্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর আঘাত হানতে পারে। চুক্তির ফলে ইসরাইল আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। তাদের ফিলিস্তিনি উচ্ছেদের মতো গর্হিত অপরাধ বেড়েই চলবে। আর এ প্রক্রিয়ায় ফিলিস্তিনিদের জাতিগতভাবে উগ্রবাদের দিকে ঠেলে দেয়া হবে। ইতোমধ্যে তারা আরব রাষ্ট্র দুটিকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে আখ্যায়িত করেছে এবং ব্যাপক চুক্তিবিরোধী বিক্ষোভ করেছে। হামাস, আল-ফাতাহ, ইসলামী জিহাদ এবং অন্য দলগুলো এরই মধ্যে একত্রে বৈঠক করে ঐক্যের আলামত প্রদর্শন করেছে। ফলে উগ্রবাদী চেতনা সাধারণ ফিলিস্তিনিদের মাঝে দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে এবং প্রতিশোধের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বা তার বাইরেও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুগুলোয় আঘাত হানতে পারে। শোনা যাচ্ছে, আরেক আরব রাষ্ট্র ওমান এ চুক্তির সিরিয়ালে রয়েছে। তবে সব আরব রাষ্ট্রই এ চুক্তিকে মেনে নেবে না। ফলে আরব লীগ বা আরব রাষ্ট্রগুলোর ঐক্যের মধ্যে এক বিশাল ফাটল দেখা দেবে, যার সুযোগ পুরোটাই ব্যবহার করবে ইসরাইল। ফিলিস্তিনি-আরবদের ওপর তাদের নির্যাতনের মাত্রা এতে দিন দিন বাড়তেই থাকবে। দুটি আরব রাষ্ট্রের এ চুক্তির প্রভাব মুসলিম বিশ্বেও পড়তে বাধ্য। পুরো মুসলিম বিশ্ব দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়বে। বিশেষ করে সুন্নি মুসলমানরা তুরস্ক ও সৌদি আরব এ দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে ইসরাইল প্রশ্নে সুন্নি মুসলিম সম্প্রদায় সৌদি আরবের চেয়ে ইরানকেই সমর্থন জোগাতে পারে। ফলে ওআইসি আরও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়তে পারে।

তথাকথিত আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির বাজার আরও সম্প্রসারিত হতে যাচ্ছে। নতুন নতুন অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র গালফের চারপাশের আরব দেশগুলো সংগ্রহ করবে। এ প্রক্রিয়া ইরানকে আতঙ্কিত করে তুলবে। ফলে চীনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার আওতায় ইরান চীনের অত্যাধুনিক অস্ত্র সংগ্রহ করার প্রয়াস পাবে। এতে নতুন এক অস্ত্র প্রতিযোগিতায় গোটা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল ভয়ানক বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। এ পরিস্থিতি পুরো বিশ্বকে নতুন এক শীতল যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল এবং বিপরীত দিকে চীন-ইরান নামক দুটি অক্ষের আবির্ভাব হতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। অন্যদিকে আরব দেশগুলোর ইসরাইল ঘনিষ্ঠতা উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসকে ছড়িয়ে দিতে পারে। ফিলিস্তিনিদের আবেগকে পুঁজি করে বিলুপ্তপ্রায় আইএসের পুনরুত্থান ঘটতে পারে। অথবা নতুন কোনো উগ্রবাদী প্ল্যাটফরম বা গোষ্ঠীর উত্থান হতে পারে। এছাড়া আইএস স্তিমিত হয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতির প্রাসঙ্গিকতা বা যৌক্তিকতা প্রমাণের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে নতুন একটি জঙ্গিগোষ্ঠীকে দাঁড় করানো দরকার, যে কাজটি তারা ‘আল কায়দা’ ও ‘আইএস’ সৃষ্টির মাধ্যমে সিদ্ধহস্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হস্তক্ষেপে ইসরাইল-সংযুক্ত আরব আমিরাত-বাহরাইন যে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’ নামক চুক্তি সম্পাদন করেছে, তাতে ফিলিস্তিন মুখ্য বিষয় থাকলেও ফিলিস্তিনিরা তা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং মুসলিম বিশ্বে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এ চুক্তি শুধু ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চুক্তিবদ্ধ দেশগুলোকেই লাভবান করবে। কিন্তু ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্নকে। সেই সঙ্গে ভয়ংকর হয়ে উঠবে মধ্যপ্রাচ্য তথা সারাবিশ্বের নিরাপত্তা পরিস্থিতি।

লে. কর্নেল (অব.) ড. এ কে এম মাকসুদুল হক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক

maksud2648@yahoo.com

 

বিশ্বে নতুন সংকট তৈরি আব্রাহাম অ্যাকর্ডস

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম