দূষণ রোধে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জরুরি
ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী
প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভারের ভাষায়, আমাদের জৈব দেহটাই আমরা এবং আমাদের জৈব দেহের বাইরের বিষয়টাই পরিবেশ। প্রাকৃতিক বা ভৌগোলিক এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবেশের সমন্বিত উপাদান আমাদের সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াকে শুধু প্রভাবিত করে না; প্রকৃত মানবসন্তান হিসাবে আমাদের সব ধরনের ভূমিকাকে উদ্ভাসিত করে।
দেশবাসী সম্যক অবগত আছেন, দেশ-স্থান-কালভেদে পরিবেশ দূষণ রোধে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ভূমিকা অপরিসীম। সঠিক উপায় নির্ধারণে ব্যত্যয় ঘটলে কালক্রমে পরিবেশ অসহনীয় পর্যায়ে নিপতিত হয়। উন্নত বিশ্বের তুলনায় উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতে অপর্যাপ্ত অর্থ-প্রযুক্তি-লোকবলের জোগান বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে অতিশয় দুর্বল-বিপর্যস্ত করে তোলে। নগর-শহর-প্রান্তিক পর্যায়ে যথার্থ অর্থে বর্জ্য সংগ্রহ-অপসারণ-সংরক্ষণ এবং যথোপযুক্ত পুনঃচক্রায়নের পদক্ষেপ গ্রহণে যে কোনো শিথিলতা পুরো রাষ্ট্রে দূষণবলয় নির্মাণ করে।
জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির কারণে বর্জ্য ও ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দেশে একটি মারাত্মক সমস্যারূপে চিহ্নিত। দ্রুত নগরায়ণ, বিক্ষিপ্ত শিল্পায়ন, বিপুলসংখ্যক জনসংখ্যাসহ বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশে বহু ধরনের বর্জ্যরে উন্মুক্ত আশ্রয়স্থল হয় সরকারি বা বেসরকারি খোলা জায়গা, রাস্তার দু’পাশ অথবা নদী-নালা-জলাশয়-খাল-বিল ইত্যাদি। ফলে দেশজুড়ে নিম্নাঞ্চল, জলাভূমি ও পয়ঃপ্রণালি ব্যবস্থা চরম অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতির সম্মুখীন।
গবেষণার ফলাফল অনুসারে, বাংলাদেশে শহরাঞ্চলে ১৯৯১ ও ২০০৪ সালে প্রতিদিন বর্জ্য উৎপাদিত হতো যথাক্রমে ৯ হাজার ৮৭৩ ও ১৬ হাজার ৩৮২ টন এবং মাথাপিছু বর্জ্য সৃষ্টির পরিমাণ ছিল ১৫০ টন। এই হারে বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ বাড়তে থাকলে ২০২৫ সালে তা দাঁড়াবে প্রতিদিন ৪৭ হাজার ৬৪ টন এবং মাথাপিছু উৎপাদন হবে ২২০ টন।
জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক থেকে রাজধানী ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ মহানগরীগুলোর একটি। জীবন-জীবিকার তাগিদে গ্রামের মানুষ শহরমুখী হওয়ায় ঢাকার জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানবসৃষ্ট আবর্জনা। সমীক্ষায় জানা যায়, দেশের মোট বর্জ্যরে ৩৭ শতাংশই উৎপাদিত হয় রাজধানী ঢাকায়। ইউএনএফপিএ’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্বের অন্যতম প্রধান দূষিত শহর এবং শহুরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এর একটি বড় সমস্যা।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গনাইজেশনের গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, করোনার কারণে সাধারণ ছুটি ঘোষণার এক মাস পর উৎপাদিত হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য। এর মধ্যে শুধু ঢাকায় প্রায় ৩ হাজার ৭৬ টন এবং চট্টগ্রামে প্রায় ১ হাজার ৯ টন। বর্জ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে সার্জিক্যাল মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, স্যানিটাইজারের বোতলসহ ত্রাণ বিতরণে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ব্যাগ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে পলিথিন ব্যাগের বর্জ্য ৫ হাজার ৭৯৬, পলিথিন হ্যান্ডগ্লাভস ৩ হাজার ৩৯, সার্জিক্যাল হ্যান্ডগ্লাভস ২ হাজার ৮৩৮, সার্জিক্যাল মাস্ক ১ হাজার ৫৯২ এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বোতল থেকে ৯০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীতে পলিথিন হ্যান্ডগ্লাভস ৬০২, সার্জিক্যাল মাস্ক ৪৪৭, পলিথিন ব্যাগ ৪৪৩ এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বোতল থেকে ২৭০ টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়েছে।
দেশের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল শহর বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামেও অপরিকল্পিত নগরায়ণে বিক্ষিপ্তভাবে শিল্পকারখানা-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ি গড়ে ওঠার সঙ্গে বেড়েছে বর্জ্যরে আধিক্য। সমীক্ষা অনুসারে দেশের মোট বর্জ্যরে প্রায় ২১ শতাংশ উৎপাদিত হয় চট্টগ্রামে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা না থাকায় অধিকসংখ্যক মানুষের গৃহস্থালির বর্জ্য প্রতিদিন যত্রতত্র ফেলে স্তূপ করে রাখা হয় এবং তা পচে-গলে চারপাশের পরিবেশকে দুঃসহ দূষণে পর্যুদস্ত করে। বর্ষাকালে ডাস্টবিন উপচে বর্জ্যগুলো ড্রেনে পড়ে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ পুরো ড্রেনেজ প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার রূপ পরিগ্রহ করে।
২০১৯-২০ সালে চট্টগ্রামের সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামে প্রতিদিন ৩ হাজার টন উৎপাদিত বর্জ্যরে ২ হাজার টন সিটি করপোরেশন সংগ্রহ করলেও বাকি ১ হাজার টন বর্জ্য নালা-নর্দমা, খাল-বিল, নদী ও উন্মুক্ত স্থানে পড়ে থাকে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিবর্তে পরিচ্ছন্নতা বিভাগের মাধ্যমে চট্টগ্রাম নগরের বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণের কাজ চললেও পরিবহণ ও অপসারণের কাজ পরিবেশসম্মত নয় বলে তাদের দাবি।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, নগরের ৫০ লাখ মানুষ প্রতিদিন ৬০০ গ্রাম করে বর্জ্য উৎপাদন করে, যার মধ্যে ১ হাজার ৮৩০ টন গৃহস্থালি, ৫১০ টন সড়ক ও অবকাঠামোগত এবং ৬৬০ টন মেডিকেল বর্জ্য। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের এলাকা নিয়ে পরিকল্পনা হলেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নিয়ে এ ধরনের পরিকল্পনা পরিলক্ষিত হয়নি।
দেশে প্রতিবছর লাখ লাখ মেবাইল ফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন, এয়ারকন্ডিশনার, ফটোকপি মেশিনসহ নানা ইলেকট্রনিক সামগ্রী নষ্ট হয়। কিন্তু ইলেকট্রনিক সরঞ্জামের পরিবেশসম্মত ও আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় সেগুলো অন্যান্য গৃহস্থালি ময়লা-আবর্জনার সঙ্গে ডাস্টবিনে নিক্ষিপ্ত হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইলেকট্রনিক সরঞ্জামের মধ্যে সিসা, সিলিকন, টিন, ক্যাডমিয়াম, পারদ, দস্তা, ক্রোমিয়াম, নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি রাসায়নিক থাকে, যেগুলো দেশের মাটি ও পানিকে দূষিত করছে। বিভিন্নভাবে তা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে নানা রোগের জন্ম দিচ্ছে, বিশেষ করে গর্ভবতী মা ও শিশুদের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান গণমাধ্যমকে জানান, ই-বর্জ্যরে কারণে অপরিণত শিশুর জন্ম নেওয়া, ওজন কম হওয়া এবং মৃত শিশু জন্মের ঘটনাও ঘটছে। ই-বর্জ্যরে সিসা নবজাতকের স্নায়ুতন্ত্রে মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে। শিশু বড় হলে শ্বাসতন্ত্র, থাইরয়েড জটিলতা, ক্যান্সার ও হৃদরোগের মতো বড় রোগের জটিলতাও দেখা দিতে পারে।
ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী ই-বর্জ্য অতিমাত্রায় উদ্বেগের কারণ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। বৈশ্বিক ই-বর্জ্য জোট গ্লোবাল ই-ওয়েস্ট স্ট্যাটিসটিকস পার্টনারশিপের (জিইএসপি) জরিপ মতে, বিশ্বে প্রতি পাঁচ বছরে ই-বর্জ্য ২১ শতাংশ হারে বাড়ছে। ২০১৯ সালে সারা বিশ্বে ৫ হাজার ৩৬০ কোটি কেজি ই-বর্জ্য জমা হয়। সে বছর মোট উৎপাদিত ই-বর্জ্যরে মাত্র ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা হয়েছে। সংস্থাটির মতে, ই-বর্জ্য সবচেয়ে বেশি জমা হচ্ছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে।
১৫ জুন ২০২১ প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক প্রতিবেদনে ই-বর্জ্যরে অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ শিশু, কিশোর-কিশোরী এবং গর্ভবতী মায়েদের কার্যকর ও বাধ্যতামূলকভাবে রক্ষা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালককে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, পৃথিবীজুড়ে ‘ই-বর্জ্যরে সুনামি’ চলছে।
মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়ছে। একইসঙ্গে প্লাস্টিক ও মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের বিপরীতে সমুদ্র ও তার জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সারা বিশ্ব সরব। ই-বর্জ্যরে ক্রমবর্ধমান হুমকি থেকে মূল্যবান সম্পদ ও শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা করতে হবে। সংস্থাটির হিসাবে বিশ্বের ১ কোটি ২৯ লাখ নারী অপ্রাতিষ্ঠানিক বর্জ্য খাতে নিয়োজিত। এ সংখ্যক নারী ও তাদের অনাগত সন্তানদের বিষাক্ত ই-বর্জ্য দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি অন্তত ১ কোটি ৮০ লাখ শিশু-কিশোরের একটা বড় অংশের বয়স পাঁচ বছরের নিচে, যারা সক্রিয়ভাবে অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্প খাতের সঙ্গে জড়িত।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও দেশের অন্যান্য শহরে এখনো প্রায় সনাতন পদ্ধতিতেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ১৫ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করে।
২০১৯ সালে এর খসড়া অনুমোদন দিয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো হলেও এর কোনো মতামত এখনো পাওয়া যায়নি। গত ২ জানুয়ারি গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে প্রয়োজনীয়তা-আবশ্যকতা বিবেচনায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন আকারে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০২১ জারি করেছে।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, ড্রেন বা পানিতে বর্জ্য ফেললে বা খোলা জায়গায় বর্জ্য পোড়ালে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড প্রদান করা যাবে। প্রবিধিতে কঠিন বর্জ্যরে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে বর্জ্য সৃজনকারী ও ব্যবহারকারীর দায়িত্ব, পণ্য প্রস্তুতকারক বা আমদানিকারকদের দায়িত্ব, স্থানীয় সরকার পৌর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
বর্জ্য সৃজনকারী ও ব্যবহারকারীর দায়িত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় বসবাসরত বর্জ্য সৃজনকারী ও ব্যবহারকারীকে জৈবিকভাবে পচনশীল-অপচনশীল এবং গৃহস্থালির ঝুঁকিপূর্ণ কঠিন বর্জ্য আলাদা করে তিনটি ঢাকনাযুক্ত পাত্রে সংরক্ষণপূর্বক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। অবকাঠামো নির্মাণ ও ভাঙন থেকে সৃষ্ট বর্জ্য হস্তান্তরের আগে পর্যন্ত পৃথকভাবে রাখতে হবে, যাতে ধুলাবালি বাতাসে ছড়াতে বা বৃষ্টির মাধ্যমে ড্রেনে পড়তে না পারে।
উল্লেখিত বিধিতে ‘প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব’ অংশে রয়েছে-দোকান-রেস্টুরেন্ট, হোটেল, মার্কেট, কমিউনিটি সেন্টার এবং অন্যান্য আবাসিক-বাণিজ্যিক-শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিদিনের ময়লা জমা করে রাস্তায় বা ড্রেনে না ফেলে নির্ধারিত জায়গার ফেলা নিশ্চিত করতে হবে। ‘পণ্য প্রস্তুতকরণ ও আমদানিকারকদের দায়িত্বে’র আওতায় রয়েছে-জৈবিকভাবে অপচনশীল ডিসপোজেবল পণ্যের প্রস্তুতকারি বা আমদানিকারক টিন, গ্লাস, সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক, পলিথিন, মাল্টিলেয়ার প্যাকেজিং বা মোড়ক, বোতল, ক্যান ইত্যাদি গ্রাহক থেকে সংগ্রহ করে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পুনঃচক্রায়ন।
প্রজ্ঞাপনে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষের ২৮টি দায়িত্বের উল্লেখ করা হয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো-বর্জ্য হ্রাস-পুনর্ব্যবহার ও পুনঃচক্রায়নসহ কঠির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জাতীয় কৌশল ও নির্দেশনা অনুসরণ, কঠিন বর্জ্য পৃথকভাবে সংগ্রহপূর্বক যথাযথভাবে আবৃত করে সরাসরি চূড়ান্ত পরিশোধন স্থলে পৌঁছানোর ব্যবস্থা গ্রহণ, চিকিৎসা বর্জ্য বিধিমালা ২০০৮-এর বিধান অনুসরণ এবং পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে বর্জ্যকে জ্বালানিতে রূপান্তরিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি।
এ ছাড়াও বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ সাইটে গন্ধ ও অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি কমাতে পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, পুনঃচক্রায়নযোগ্য কিন্তু উচ্চ ক্যালোরিফিক বর্জ্য আলাদা করে ওয়েন্ট টু এনার্জি প্ল্যান্ট বা সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে কো-প্রসেসিং বা তাপভিত্তিক বিদ্যুৎ ব্যবহার, স্যানিটারি ল্যান্ডফিল্ড করা এবং এর পরিবেশ দূষণে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণে ৮টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বহুকাল ধরে এ বিষয়ে নানা নির্দেশনা প্রচার করে এলেও তা শুধু বাচনিক আলাপ-আলোচনায় সীমাবদ্ধ। প্রায়োগিক কর্মকৌশলে এর প্রতিফলন কতটুকু দৃশ্যমান, তা গভীর বিশ্লেষণের দাবি রাখে। জাপানের মডেল অনুসরণে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ পচনশীল বর্জ্যকে ভস্মীভূত করার চুল্লি-দাহন যন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে এসব বর্জ্য থেকে প্রক্রিয়াজাত উপাদান পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজের প্রভূত উপকার সাধন করছে। যদিও এ ধরনের চুল্লি বা ভস্মীকরণ প্রক্রিয়া স্থাপন অতি ব্যয়বহুল, তবুও ঢাকা-চট্টগ্রাম-খুলনায় এ ধরনের ব্যবস্থা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন মাত্রা এনে দেবে। আগামীতে দূষণমুক্ত সোনার বাংলা বিনির্মাণে পরিকল্পিত কর্মযজ্ঞ গ্রহণের এখনই উপযুক্ত সময়।
ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী : শিক্ষাবিদ; সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
