আমাদের কেমন পুলিশ দরকার
মোহাম্মদ আবদুল মাননান
প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ভারতের প্রয়াত বিচারপতি কৃষ্ণ আয়ার বলেছিলেন, ‘সরকারি উর্দির আড়ালে পুলিশ এক সংগঠিত গুন্ডাবাহিনী।’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘তাদের (পুলিশের) লালায় বিষ থাকে।’ কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘অবশেষে পুলিশও গাহিল রবীন্দ্রসংগীত (যেন পুলিশ সচরাচর রবীন্দ্রসংগীত গাইবার অধিকার রাখে না)। আমি বলি, দলে দলে মানুষ পুলিশ হয়, কিন্তু একজন পুলিশও মানুষ হয় না।’ পুলিশ নিয়ে ঋণাত্মক উদ্ধৃতি আরও আছে, সেটি একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তির। মানছি, পুলিশ নিয়ে ভালো মন্তব্যেরও অনটন নেই। এ-ও মানছি, পুলিশ একটি রাষ্ট্রের অপরিহার্য অঙ্গ এবং এ সংগঠনকে বাদ দিয়ে সরকারব্যবস্থার কথা চিন্তাও করা চলে না।
উপরের তিনজন প্রয়াত ও বিশিষ্ট ব্যক্তির পুলিশ নিয়ে এমন মনোভাব কেন? কিংবা এ সময়ের জনসাধারণ্যে পুলিশ নিয়ে ধারণাটি কী অথবা পুলিশের সেবায় নাগরিকদের কতজন সন্তুষ্ট? ‘তিনজন মানুষের সঙ্গে একজন পুলিশও মারা গেছে’-এভাবে কেন বলা হয়! এসব গভীরভাবে অধ্যয়ন না করলে সরকার গঠিত পুলিশ সংস্কার কমিশন ঠিকমতো সুপারিশ করতে পারবে না, এটা বিশ্বাস করার কারণ আছে। সংস্কার কমিশনকে মাথায় রাখতে হবে, পুলিশের সব সদস্য এ সমাজেরই মানুষ; কেউ চেনা, কেউ অচেনা। পুলিশে যোগদানের পূর্বদিনেও তারা আমাদের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়, সহপাঠী কিংবা নিকটজন ছিল। তাহলে পুলিশে গিয়েই তারা বিচ্ছিন্ন প্রাণীতে রূপান্তিত হয় কি? সমস্যা কোথায়? সমস্যা কি পুলিশ নামের সংগঠনটির-পুলিশের অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ বা কর্মপরিবেশ কি খুব দোষের কিছু? নাকি অন্য কোনো কারণ? দুদিন আগের কমিটেড-প্রমিজিং ছাত্র কিংবা বেকার যুবকটি ওখানে পৌঁছেই মানুষ থেকে রাতারাতি কেনই বা ‘পুলিশ’ বনে যায়? পুলিশি অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা বা একজন ব্যক্তি কি এর জন্য দায়ী, নাকি দেশের রাজনীতি ও সরকারব্যবস্থার এতে দায় আছে-এ পাঠ গ্রহণ ছাড়া পুলিশের সংস্কার প্রস্তাব প্রস্তুত করা সম্পূর্ণ হবে না।
শাহ আবদুল হান্নান তখন দুর্নীতি দমন ব্যুরোর মহাপরিচালক। একটি প্রশিক্ষণে বলতে শুনেছি, ‘কাস্টমসে বেশ কিছুসংখ্যক ইন্সপেক্টর নিয়োগ দিয়েছি এবং আমি নিশ্চিত করেছি, একজনকেও চাকরি পেতে টাকা দিতে হয়নি। কিন্তু চাকরিতে এসেই ৩ মাসের মধ্যে ঘুস নেওয়া শুরু করেছে। সমস্যাটি তো বুঝলাম না।’ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুস-দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোর গলায় আওয়াজ তোলা ছেলেমেয়েটি কেন চাকরিতে ঢুকেই অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে (সব সার্ভিসের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য), তা পুলিশ-দুদক-জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন যথার্থভাবে অনুধাবনে ব্যর্থ হলে এই ত্রি-কমিশন থেকে ভালো সুপারিশ পাওয়া যাবে না। পুলিশ সংস্কার কমিশনকে মর্ম উদ্ধার করতে হবে ডাকাতির মামলা রুজুতে পুলিশের অনীহা কেন? জানতে হবে, এ রাজধানীতে ছিনতাই ঘটনার পঞ্চাশ শতাংশ থানায় রিপোর্ট হয় না, বরং মানুষ থানা-পুলিশকে সেবার বদলে হয়রানির জায়গা মনে করে। কিন্তু কেন? আর কেনই বা এ কেস নিয়ে থানায় গেলে এজাহারের বদলে জিডি করতে উৎসাহিত করা হয়? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজলেই সংস্কার কমিশন বুঝতে পারবে মানুষ কী রকমের পুলিশ চায় কিংবা পুলিশ থেকে কী পেতে চায়।
ফৌজদারি কার্যবিধি পুলিশি ক্ষমতার আকরগ্রন্থ। গ্রেফতার, বলপ্রয়োগ, লাঠিচার্জ, রিমান্ড, জিজ্ঞাসাবাদ, সাক্ষ্যগ্রহণ, তদন্ত, চার্জশিট ও মামলা পরিচালনায় পুলিশি ভূমিকা সবটাই এ বই বা আইনে বর্ণিত আছে। পরিপালন হয় না কেন? গ্রেফতারের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে কি হাজির করা হচ্ছে? রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক নির্যাতনের কথা কি ফৌজদারি কার্যবিধিতে আছে? এখানে একটি মৌলিক প্রশ্ন, মাঝেমধ্যে পুলিশি হেফাজতে যে নির্যাতনের খানিক বিবরণ মিডিয়ায় আসে-বলুন, ওই পুলিশকে মানুষ বলতে পারবেন? ওই লোকটি এমন অমানুষিক নির্যাতন করে ঘরে গিয়ে ঘুমাতে পারে তো? ক্রসফায়ারে একজনকে ‘নাই’ করে দেওয়ার পর সংশ্লিষ্টরা বাসায় ফিরে স্বীয় বাচ্চাদের দিকে তাকায় কী করে? বলবেন, উপরের নির্দেশে এসব করতে হয়। ঊর্ধ্বতনদের বেআইনি নির্দেশ পালনীয় নয়; এ কথাটি উচ্চারণের শক্তিও কেন একজনের হারিয়ে যায়-এসব খুঁজতেই হবে। আর রাজনৈতিক সরকার পুলিশকে কেন ব্যবহার করে এ বেআইনি কাজ করায়? এ অপব্যবহার রোধে সুস্পষ্ট সুপারিশ ছাড়া তো কমিশনের রিপোর্ট আমজনতা খাবে না। পুলিশের রাজনৈতিক অপব্যবহার রোধ করতে না পারলে আগামীতেও ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি চলবে। মনে করে দেখুন, ১৯৭০ সালের আগে নানা আন্দোলনে পুলিশ কি নির্বাচারে গুলি করেছিল? তাহলে স্বাধীন দেশে পুলিশকে এত গুলি করতে হয় কেন? সত্য-মিথ্যা দিয়ে মামলার পাহাড় রচনা করতে হয় কেন? একটি বাসে কী করে দুই হাজার মানুষ আগুন ধরিয়ে দিতে পারে? এসব প্রশ্ন তো আসবে। কীভাবে পুলিশে বেনজীর-হারুনরা সৃষ্টি হয়-সমস্যাটি কোথায়; এ পাঠ ধরে ধরেই কমিশনকে এগোতে হবে।
পুলিশকে স্বাধীন করে দিলে বিপদ আছে। আবার রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে রাখলেও বিরোধী দমনে পারঙ্গম হয়ে ওঠে। ফলে কমিশনকে এ দুইয়ের মাঝামাঝি নিয়ন্ত্রণ-অনিয়ন্ত্রণের কথা ভাবতে হবে। অধিকাংশ পুলিশের বিরুদ্ধে ‘হার্মাদ’ হয়ে ওঠার অভিযোগ ওঠে। ক্ষমতার দাপট, বন্দুকের দাপট এবং এসবের নেপথ্যে আছে হয়রানি করার মোক্ষম পন্থা। পুলিশ কর্তৃক অযথা হয়রানির সব দরজা বন্ধ করা দরকার। অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আর ভালো মানুষকে রক্ষার মহান ব্রতে পুলিশকে ফেরাতে হবে। অপরাধী পুলিশকে ভয় পাবে, কিন্তু নির্যাতিত নির্দ্বিধায় পুলিশের কাছে পৌঁছে যাবে, বন্ধু ভাববে; থাকবে না মধ্য পথে কোনো দেওয়াল-এটাই সাধারণ মানুষের চাওয়া। মামলা করার পর আসামি ধরার জন্য একবার, তদন্ত রিপোর্টের জন্য আরও একবার অর্থ দিতে হবে কেন? কমিশনের বিজ্ঞ সদস্যরা এসব জানেন না, এমন কিন্তু নয়।
উচ্চ আদালতও মানতে চায় না পুলিশ। ৫৪ ধারায় গ্রেফতার, রিমান্ড ও জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে নানা সময়ে প্রদত্ত উচ্চ আদালতের আদেশ প্রতিপালন হচ্ছে না। গ্রেফতারকালে কাস্টডি মেমোর ব্যবহার আজও শুরু হয়নি। পুলিশের কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর হচ্ছে পুলিশ। উপরের দিকে সবাই প্রজাতন্ত্রের সিভিল সার্ভেন্ট-এদের বিরুদ্ধে গুম-আয়নাঘরের অভিযোগ উঠলে পুরো ব্যবস্থা নিয়ে ভেবে দেখার সময় হয়েছে।
পুলিশের এখতিয়ার ও ক্ষমতা প্রসঙ্গে সিআরপিসি পরিবর্তনের বিশেষ দরকার হবে কি? তেমন মনে হয় না। বরং সিআরপিসির বিধানগুলো কীভাবে কার্যকর হয়, সেটা নিয়ে ভাবার আছে। হ্যাঁ, পিআরবি সেই বহু আগে প্রবর্তিত হয়েছে। পিআরবির বহু কিছু তুলে দেওয়া যেমন দরকার, তেমনি আধুনিক পুলিশের জন্য নতুন কিছু সংযোজন করার দরকার আছে। শহুরে পুলিশের জন্য প্রণীত আইন নিয়ে কিছুটা সময় দেওয়ার অবকাশ আছে। তবে আইনের চেয়ে আইনের প্রয়োগেই সমস্যা। একই আইনে পুলিশ কমিশনার একটি রাজনৈতিক দলকে একদিন আগেই সমাবেশের অনুমতি দিয়ে দেয়, আবার একই আইনে অন্য একটি রাজনৈতিক দল সাত দিন আগে চেয়েও অনুমতি পায় না। আইন নয়, আইন প্রয়োগকারীর সমস্যা। দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হলে এ অবস্থার উন্নতি হবে কীভাবে? এ প্রশ্নের জবাবই কমিশনের সুপারিশে দেখতে চাই।
পুলিশের সংখ্যা বেশ বেড়েছে। একটি থানায় তিনজন সাব-ইন্সপেক্টরকে সামলাতে দেখেছি; এখন কোনো কোনো থানায় পঞ্চাশের বেশি এসআই কাজ করছেন। রাজধানীসহ সব মেট্রোপলিটনে থানার সংখ্যা বেড়েছে। বরিশাল, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর, সিলেট শহরে একজন ওসি সব সামলাক তো। এখন কমিশনার থেকে শুরু করে কতগুলো পদ হয়েছে-তা হোক; কিন্তু সেবার মান একজন ওসির সময়ে যা ছিল, তারও নিচে নেমেছে; মানুষের দুশ্চিন্তা এখানটায়। কোথাও পুলিশের কথা উঠলেই, পুলিশ বৃদ্ধির (বিশেষত যানজটে ঢাকার মোড়ে মোড়ে) কথা উঠলেই পুলিশের বড়রা পুলিশ স্বল্পতার কথা তোলে। কিন্তু রাজনৈতিক দলকে ঠেঙাতে আজ অবধি পুলিশের কমতি পড়েনি। পুলিশের বাসায় ঘরদোর-বাগানের কাজে পুলিশের একদমই স্বল্পতা নেই। তারপরও উপরের তুলনায় নিচের দিকে পদ-পদবি কমই বৃদ্ধি পেয়েছে। এসবও কমিশন দেখুক। বিগত বছরগুলোতে সবচেয়ে বেশি গাড়ি কেনা হয়েছে পুলিশের জন্য; শুধু মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা। চাই এ কমিশন পুলিশের জন্য আরও বেশি সুবিধা প্রদানের সুপারিশ করুক; কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সেবা নিশ্চিত করার সুপারিশও থাকতে হবে।
মানুষ পুলিশকে পুলিশের দেওয়া স্লোগানেই দেখতে চায়-‘পুলিশ জনমানুষের বন্ধু’। ওই যে POLICE ভেঙে লেখা হয় পোলাইট, ওবিডিয়েন্ট, লয়াল, ইন্টেলিজেন্ট, কারেজিয়াস, এনার্জেটিক (মতান্তরে এফিসিয়েন্ট); ঠিক এমনটাই জনপ্রত্যাশা। তবে এ পোলাইট, লয়াল, ওবিডিয়েন্টটা সেবাপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে হওয়া চাই। একটি রাষ্ট্রের পুলিশের বিরুদ্ধে খুন, গুম, হয়রানি, সর্বোপরি নৈশ নির্বাচনের দায় আসবে কেন? যাতে না আসে, সেভাবেই পুলিশ ব্যবহৃত হবে-এমন সুপারিশই জনআকাঙ্ক্ষা। পুলিশ তো চায় জনগণের বন্ধু হতে। মানুষও সেটা চায়। পুলিশের বিরুদ্ধে জনারণ্যে অভিযোগের পাহাড় থাকলেও ব্যবস্থা গ্রহণের নজির কম। এই যে বহু ঊর্ধ্বতন পুলিশের বিরুদ্ধে শতকোটি টাকা অর্জনের অভিযোগ উঠেছে, তাদের সদর দপ্তরে এসব দেখার জন্য একটি গোয়েন্দা সেল আছে, কই কিছুই তো দেখল না সেই সেল! বরং পুলিশের সৎ অফিসাররা হয়রানির শিকার বলে অভিযোগ আছে। পুলিশকে রাজনৈতিক মেরুকরণ থেকে দূরে রাখার বিকল্প নেই। অন্যদিকে ছাত্রজীবনের পরিচয় দিয়ে চাকরিতে দাপট দেখানো থেকে সুবিধা গ্রহণের পথ রুদ্ধ করা চাই। সংস্কার কমিশন পারবে তো?
আগেই বলেছি, অবৈধভাবে ক্ষমতার প্রয়োগে রাশ টানতেই হবে। থানায় এজাহার না দিলে আদালতে যাওয়ার বিধান আছে। সে পথ কি খুব মসৃণ? ফলে সংস্কার কমিশন সিভিল সোসাইটির সমন্বয়ে গঠিত মধ্যপথে একটি সেলের কথা ভাবতেই পারে। কমিশন ভাবতেই পারে, কেবল জেলা-থানা আইজির ওপর রেখে সিআইডি, এসবি, নৌ-পর্যটন-হাইওয়ে-শিল্প-মেট্রোপলিটন পুলিশের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ডিজি করে সরাসরি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করলে কেমন হবে। এক আইজির পক্ষে বিশাল সংগঠন সামলানো বাস্তবেই সম্ভব নয়। পুলিশের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ দেখার জন্যও আলাদা কমিশন থাকতে হবে; এ সুপারিশও করুক সংস্কার কমিশন। পুরোনো দিনের পুলিশ দিয়ে এ সময়ের সমস্যার সমাধান কিংবা সেবা নিশ্চিত করা মোটেই সম্ভব নয়। ফলে পুলিশের সেবার মানসিকতা, সেবার ধরন, তদন্ত পদ্ধতিসহ সবকিছুর আধুনিকায়ন দরকার হবে আর সেসবের বিস্তারিত সুপারিশই করুক গঠিত কমিশন। একটি সরকার বদলের পর পুলিশ যেন থানা ছেড়ে পালিয়ে না যায়। সরকার বদল হবে, সরকারি চাকুরেরা নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকবে-এমন পুলিশই চাই।
জনবান্ধব পুলিশ চাই-কথায় নয়, কাজে। নিরপরাধদের হয়রানি করবে না, এমন পুলিশ চাই। বিপদে দ্রুত কাছে পাওয়া যাবে, এমন পুলিশ দরকার। সৎ ও যোগ্য পুলিশ চাই। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মীরা সৎ হলে বহু সেক্টরের দুর্নীতি এমনিতেই হ্রাস পাবে। পুলিশ নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করলে বহু অপরাধ সংঘটিতই হবে না। তবে পুলিশকে চাকরির নিরাপত্তা দেওয়ার বিকল্প নেই। কী সেটা? ঊর্ধ্বতন বা রাজনৈতিক নেতাদের অন্যায়-অবৈধ আদেশ পালনে ‘না’ বলার জন্য হিম্মত দেখাতে হলে চাকরির গ্যারান্টি চাইই-চাই। একজন ম্যাজিস্ট্রেট উপরের কথায় জামিন না দিলে চাকরি যায় না, পদোন্নতি আটকে থাকে না-বড়জোর একটা বদলি। এমনটি প্রশাসন ও পুলিশের ক্ষেত্রেও নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। ম্যাজিস্ট্রেটের মাথার উপর হাইকোর্ট হচ্ছে রক্ষাকবচ। প্রশাসন-পুলিশের জন্য হতে পারে একটি স্বাধীন ও শক্তিধর কমিশন। এ কমিশন ছাড়া অন্যায় আদেশ পালনে ‘না’ বলার জন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ থাকবে না। আর এতেই পুলিশকে দিয়ে নৈশ নির্বাচন, মিথ্যা মামলা দায়ের, অকারণে হয়রানি বন্ধ হতে পারে। এজন্য দরকার হলে আইন, নিয়োগ প্রক্রিয়া, প্রশিক্ষণ সব পালটে যাক-বদলে যাক পুলিশের খোলনলচে। নাগরিকরা তাতে মোটেই আপত্তি করবে না। আমরা পুলিশ সংস্কার কমিশনের দিকে তাকিয়ে আছি। কমিশনের প্রধান সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব, যিনি পুলিশের ভালো আর মন্দ দুটোই কাছ থেকে দেখেছেন। কমিশনে আরও আছেন অবসরপ্রাপ্ত প্রশাসনিক-পুলিশ আমলা এবং মানবাধিকার কর্মী ও আইনের অধ্যাপক। কমিশনের কার্যপরিধি নির্দিষ্ট নয় বলে বিস্তৃত পরিসরে সুপারিশের সুযোগ থাকছেই।
(পাদটীকা : বাবা-মায়ের পিঠাপিঠি দুই ছেলে। বাবার দৃষ্টিতে ভালোটি পেয়েছে পুলিশের চাকরি। বখাটেটা অন্য চাকরি। এখন বাবাকে এতদিন বখাটে বলে চিহ্নিত ছেলের কাছ থেকে প্রতিদিন শুনতে হচ্ছে, তোমার বড়টা আর মানুষ নেই। পুলিশ সংস্কার কমিশন এ বাবাকে কি একটু স্বস্তি দিতে পারবে?)
মোহাম্মদ আবদুল মাননান : প্রাবন্ধিক, কথাসাহিত্যিক
