Logo
Logo
×

বাতায়ন

বাংলাদেশের ওষুধশিল্প : সমস্যা ও সম্ভাবনা

Icon

ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে ওষুধ শিল্পের দিক থেকে বাংলাদেশ একটি ভালো অবস্থানে রয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশের অন্তর্ভুক্ত বলে বাংলাদেশ প্রথমে ২০১৬ সাল পর্যন্ত যে কোনো পেটেন্টপ্রাপ্ত ওষুধ জেনেরিক ফর্মে উৎপাদন করার সুযোগ পেয়েছিল। একটু পেছনে ফিরে যাই। ২০০১ সালের নভেম্বরে দোহায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে ট্রিপস চুক্তি এবং ওষুধের সহজলভ্যতার প্রশ্নে এক ঘোষণা দেওয়া হয়। দোহা ঘোষণায় ৪৯টি স্বল্পোন্নত দেশকে ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত পেটেন্টপ্রাপ্ত যে কোনো ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করার অধিকার দেওয়া হয়েছিল। ট্রিপস চুক্তির আওতায় কোনো প্রতিষ্ঠান নতুন ওষুধ আবিষ্কার করে বাজারজাত করলে সেই ওষুধ পেটেন্টপ্রাপ্ত হয়। প্রডাক্ট পেটেন্টপ্রাপ্তির যোগ্যতা বলে সেই কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানকে সরকার তার দেশে ২০ বছরের জন্য একচেটিয়া ব্যবসা করার সুযোগ প্রদান করতে বাধ্য। ২০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার আগে পেটেন্টপ্রাপ্ত ওষুধ অন্য কোনো কোম্পানি প্রস্তুত ও বাজারজাত করার অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকে। এ সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে যে কোনো কোম্পানি জেনেরিক নামে ওষুধটি উৎপাদন ও বাজারজাত করার অধিকার অর্জন করে। জেনেরিক নামে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে ওষুধ প্রস্তুত ও বাজারজাত হলে ওষুধের দাম তীব্রভাবে হ্রাস পায় এবং এর ফলে সাধারণ মানুষ সস্তায় ওষুধ কিনতে পেরে উপকৃত হয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রথমে ১ জানুয়ারি ১৯৯৫ থেকে দশ বছরের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন মঞ্জুর করা হয়েছিল নিজ নিজ দেশে প্রডাক্ট এবং প্রসেস পেটেন্ট অধিকার সম্পূর্ণ প্রয়োগ এবং বাস্তবায়নসহ আনুষঙ্গিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য। ৪৯টি স্বল্পোন্নত দেশের জন্য এ মেয়াদ ২০১৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এ সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার আগেই ট্রিপস চুক্তি বাস্তবায়নের কারণে আরও ১৭ বছর সময় পাওয়া গেল।

২০৩৩ সাল পর্যন্ত মেধাস্বত্ব ছাড় পাওয়ায় আমাদের খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার কারণ দেখি না। কারণ মেধাস্বত্ব ছাড়ের এত বড় সুযোগ পেয়েও বাংলাদেশ তেমন কিছু করতে পারেনি। এ সময়ে বাংলাদেশের ওষুধশিল্প সম্প্রসারিত হয়েছে সত্যি; গড়ে উঠেছে নতুন নতুন আধুনিক কারখানা, প্রস্তুত হচ্ছে বিভিন্ন ডোসেজ ফর্ম ও ওষুধের মাত্রাভেদে প্রায় ৩৬ হাজার ৫০০ ব্র্যান্ডের ওষুধ। বাংলাদেশের ওষুধশিল্পের একটি মূল সমস্যা কাঁচামালের অপ্রতুলতা। উৎপাদিত ওষুধের জন্য স্থানীয় ওষুধ কোম্পানিগুলোকে এখনো কাঁচামাল আমদানির ওপর বহুলাংশে নির্ভর করতে হয়। ওষুধ কোম্পানিগুলোর সূত্রমতে, বাংলাদেশ এখনো প্রায় ৯৮ শতাংশ কাঁচামাল মূলত চীন, ভারত, জাপান ও জার্মানি থেকে আমদানি করে থাকে। কিছু কাঁচামাল বাংলাদেশে উৎপাদিত হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অতিনগণ্য। কাঁচামালের আমদানির কারণে রপ্তানি আয়ের একটা বিরাট অংশ আমাদের হারাতে হচ্ছে। এ কারণে ওষুধশিল্প খাতে জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজনের হার তেমন পাচ্ছে না। এসব কাঁচামাল দেশে উৎপাদন করা গেলে আমদানি খাতে বিপুল অঙ্কের টাকা বাঁচানো যেত। অন্যদিকে উদ্বৃত্ত কাঁচামাল রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যেত। স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে বাংলাদেশ হতে পারে কাঁচামাল উৎপাদনের উৎকৃষ্ট স্থান। এত বছরেও সেই সম্ভাবনা আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় এপিআই বা অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টস পার্কটি সম্পন্ন হলে কাঁচামাল উৎপাদনে উন্নত দেশগুলোর কারিগরি সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। বেশ কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানোর পরও কাজের কাজ কিছুই হলো না। ওষুধশিল্পের জন্য যে সম্ভাবনার দুয়ার উন্মুক্ত হয়েছিল ১৮ বছর আগে, তা কাজে লাগাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে সরকার ও ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। সস্তায় ওষুধ উৎপাদন ও বিদেশে রপ্তানি করতে হলে দেশে কাঁচামাল উৎপাদনের কোনো বিকল্প নেই। এখন মনে হচ্ছে, সে আশা আর পূর্ণ হওয়ার নয়। দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ কোম্পানির মালিক ও ওষুধশিল্প সমিতির কর্মকর্তারা অবলীলায় স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশের ১৫টি ওষুধ কোম্পানি বর্তমানে মোট চাহিদার মাত্র ১০-১৫ শতাংশ কাঁচামাল উৎপাদন করে, যেখানে ভারতে এ উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ৮০ শতাংশ। বিদেশ থেকে আমদানি করা কাঁচামাল অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেশে উৎপাদিত কাঁচামালের চেয়ে দামে সস্তা। তাই কোম্পানিগুলো প্রস্তুত ওষুধের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার কথা ভেবে দেশে উৎপাদিত কাঁচামালের চেয়ে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত কাঁচামাল দিয়ে ওষুধ উৎপাদনে আগ্রহী বেশি। এ কারণেই বাংলাদেশে এপিআই বা অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টস উৎপাদনে কোনো আগ্রহ বা গতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

তবে ওষুধ কোম্পানিগুলো বলছে ভিন্ন কথা। তাদের মতে, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ এখনো চালু না হওয়ার কারণে তারা এপিআই পার্কে কাঁচামাল উৎপাদন শুরু করতে পারছে না। কিন্তু বাংলাদেশ তার বিশাল ওষুধের বাজারের জন্য আর কতকাল কাঁচামাল আমদানির ওপর নির্ভর করে থাকবে? ট্রিপস চুক্তি বাস্তবায়িত হলে, পেটেন্টপ্রাপ্ত ওষুধ ও কাঁচামাল সুলভ মূল্যে আমদানি সহজ নাও হতে পারে। বাংলাদেশের জেনেরিক মার্কেট প্রসারিত হলে বহির্বিশ্বে রপ্তানি ঠেকাতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য ভারত বা চীন আমাদের আর কাঁচামাল আমদানি করতে নাও দিতে পারে, সে কথাটিও আমাদের মনে রাখা দরকার। বর্তমানে বাংলাদেশ ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ জেনেরিক এবং ৫ থেকে ১০ শতাংশ পেটেন্ট ড্রাগ উৎপাদন করে থাকে। ভারত ও চীনে ওষুধ উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ কম খরচে ওষুধ উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করার সুযোগটি কাজে লাগাতে পারত।

বছর কয়েক আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক বৈঠকে বাংলাদেশ, ভারত এবং নাইজেরিয়াকে নকল ও ভেজাল ওষুধ তৈরির দেশ বলে আখ্যায়িত করেছিল। মানুষের আস্থা অর্জন ও রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে নকল, ভেজাল, ক্ষতিকর ও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণ প্রতিরোধ করতে হবে। বিদেশে রপ্তানির জন্য সব ওষুধের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য কোম্পানিগুলোর ওপর সরকারের চাপ বাড়াতে হবে এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে আরও সক্রিয় করে তুলতে হবে। অভিজ্ঞ লোকবল বাড়াতে হবে। ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবগুলোকে আধুনিকীকরণসহ অভিজ্ঞ লোকবল বৃদ্ধি করতে হবে। দেশে উৎপাদিত সিংহভাগ ওষুধের গুণগত মান নির্ণয় হয় না। উন্নত বিশ্বে রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রত্যেকটি জেনেরিক ড্রাগের বায়োইকুইভ্যালেন্স পরীক্ষা সম্পন্ন করা আবশ্যক। এ পরীক্ষাটি বিদেশে করতে গেলে প্রচুর পয়সা খরচ হয়। অনেক কোম্পানির সেই সামর্থ্যও নেই। দেশে বায়োইকুইভ্যালেন্স টেস্ট সম্পন্ন করার সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি না হলে, ওষুধের গুণগত মান নিয়ে দেশে-বিদেশে সব সময়ই প্রশ্ন থেকে যাবে, রপ্তানিও সহজ হবে না। সব ওষুধের গুণগত মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যাপ্ত মানসম্পন্ন পরীক্ষাগার স্থাপনের ওপরও গুরুত্ব দেওয়াটা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে।

নকল, ভেজাল, ক্ষতিকর ও নিম্নমানের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ এবং এসব ওষুধ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও বিক্রয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করা ও শাস্তি প্রদান করার দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসনের। কিন্তু তারা এ ক্ষেত্রে কোনো উল্লেখযোগ্য নজির স্থাপন করতে পারেনি। সে কারণেই হয়তো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের দেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে এখনো পুরোপুরি স্বীকৃতি দেয় না। তবে বিশ্বের ৫৫টি ল্যাবরেটরির মতো বাংলাদেশের ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিকে প্রাক-যোগ্যতাসম্পন্ন ল্যাবরেটরি হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমরা মনে করি, ঔষধ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে আরও কঠোর করতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের আদলে গড়ে তুলতে হবে। তা না হলে মেধাস্বত্ব ছাড়ের সযোগ সুযোগই থেকে যাবে, ওষুধ রপ্তানিও আর বাড়ানো যাবে না। বর্তমানে বাংলাদেশ ১৫০টি দেশে ২০০ মিলিয়ন ডলারের (প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা) ওষুধ রপ্তানি করে। এত বড় ওষুধের বাজার সৃষ্টির পরও রপ্তানির পরিমাণ তেমন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি।

১৯৮২ সালে যখন যুগান্তকারী ওষুধনীতি প্রণীত ও বাস্তবায়িত হয়, তখন বাংলাদেশের ওষুধের বাজার ছিল ১৭৩ কোটি টাকার। বর্তমানে এ দেশে ওষুধের বাজার দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৮ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকায়। বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো বিভিন্ন ডোসেজ ফর্ম ও ওষুধের মাত্রাভেদে প্রায় ৩৬ হাজার ৫০০ ব্র্যান্ডের ওষুধ উৎপাদন করলেও কোনো ওষুধের মেধাস্বত্ব নেই। মেধাস্বত্ব ছাড়ের সুযোগ নিয়ে উন্নত বিশ্বে উদ্ভাবিত পেটেন্টপ্রাপ্ত ওষুধ কপি করে এ দেশে বাজারজাত ও বিক্রয় করা হচ্ছে। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, ওষুধের গুণগত মানও বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ কোনো প্রতিষ্ঠানেরই পেটেন্টপ্রাপ্ত ওষুধ নেই কেন, তা নিয়ে সরকারও কোনোদিন প্রশ্ন তোলেনি। নতুন ওষুধ উদ্ভাবনে বিনিয়োগের দরকার। বাংলাদেশের অনেক কোম্পানির সেই সামর্থ্যও রয়েছে; কিন্তু এসব কোম্পানি গবেষণা ও উন্নয়ন খাতকে বিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে, নতুন ওষুধ উদ্ভাবন ও পেটেন্টপ্রাপ্তির দিকে মনোযোগ না দিয়ে, বছরের পর বছর উন্নত বিশ্বের পেছনে ছুটতে ও মেধাস্বত্ব ছাড়ের আবদার নিয়ে দরকষাকষিতে বেশি সময় ব্যয় করছে। এভাবে কত বছর ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে আমরা দুয়ারে দুয়ারে ঘুরব? নিজস্ব কাঁচামাল দিয়ে নিজের ওষুধ নিজে তৈরি করে বাজারজাত ও বিক্রয় করব? ওষুধ রপ্তানি করে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করব-এ ধরনের দৃঢ় মনোভাবের মধ্যে আত্মতৃপ্তি আছে, সম্মান আছে। এ কথাটি এখন থেকে ভাবতে শুরু করলে, সামনের দিনগুলোতে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনতে পারবে ওষুধ কোম্পানিগুলো।

তবে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত নতুন করে মেধাস্বত্ব ছাড় পাওয়া গেছে বলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার কিছু নেই। কারণ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত বাংলাদেশ ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার কথা। ইতোমধ্যে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের এক সভায় বাংলাদেশকে তিন বছরের জন্য প্রস্তুতিমূলক বাড়তি সময় অনুমোদন করেছে বলে জানা যায়। বাড়তি সময় পাওয়া গেলেও ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বরের পর মেধাস্বত্ব ব্যবহারের সুযোগ আর থাকবে কিনা, তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। আমাদের ধারণা, মেধাস্বত্ব ব্যবহারের সুযোগ না থাকলে উচ্চমূল্যে মেধাস্বত্ব কিনে এনে ওষুধ প্রস্তুত ও বাজারজাত করতে হবে। এতে ওষুধের দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, যেহেতু বাংলাদেশ মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ পেটেন্ট ড্রাগ উৎপাদন করে, তাতে করে মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাজারে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে মেধাস্বত্ব ব্যবহারের সুযোগ ব্যবহার না করা গেলে এবং ভর্তুকি বন্ধ হয়ে গেলে, রপ্তানি আয় ৬.৯ শতাংশ অর্থাৎ ১০ থেকে ১২ মিলিয়ন ডলার কমে যেতে পারে। তবে সময়ই বলে দেবে, ২০২৬ সালের নভেম্বর মাসের পর ওষুধের দাম বাড়বে কী বাড়বে না।

এত সময় পাওয়ার পরও ওষুধ কোম্পানিগুলো কী করছে বা কী করা যেত, এমন প্রশ্ন এতদিনে সামনে চলে আসার দরকার ছিল। কারণ এর উত্তর দেওয়া কঠিন নয়। ২০০১ সালের পর থেকে আমরা ওষুধের কাঁচামালের জেনেরিক ভার্সন তৈরির চেষ্টা করতে পারতাম। অন্ততপক্ষে ওষুধের কাঁচামালের জেনেরিক ভার্সন তৈরির কাজটি সহজে করা যেত বলে আমরা মনে করি।

বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ কোম্পানি ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সম্পাদিত গবেষণা কার্যক্রম এ দেশের উন্নয়নে কাজে লাগছে না। অধিকাংশ গবেষক শুধু গবেষণা প্রবন্ধের সংখ্যা বাড়ানো ও পদোন্নতির জন্য শত শত কোটি টাকা খরচ করে গবেষণা করেন। অনেক ক্ষেত্রে সেসব গবেষণায় দেশের স্বার্থ প্রতিফলিত হয় না। দেশে ফার্মেসি শিক্ষা ও গবেষণার প্রসার ঘটেছে। এ পেশায় বহু খ্যাতিমান গবেষক রয়েছেন; কিন্তু ওষুধ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে এসব গবেষক বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কোনো যোগসূত্র নেই। ওষুধ কোম্পানিগুলোতে যেসব ফার্মাসিস্ট কর্মরত আছেন, তারাও উন্নয়নমূলক গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তাহলে নতুন ওষুধ আসবে কোত্থেকে বা পেটেন্ট প্রাপ্তিই বা কীভাবে সম্ভব হবে, তা বোধগম্য নয়। আমি মনে করি, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ ও এর কাঁচামাল সংশ্লেষণ এবং উদ্ভাবনে ওষুধ কোম্পানি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর যৌথ উদ্যোগে কাজ করাকে প্রাধান্য দিতে হবে। তাহলে হয়তো আমরা আগামী বছরগুলোতে অন্তত কিছু ওষুধ উদ্ভাবন ও বাজারজাত করার সুযোগ পাব। ট্রিপস চুক্তি চালু বা কার্যকর হওয়ার বেশ আগে থেকেই অনেক উন্নয়নশীল দেশ নতুন কার্যকর ওষুধের জেনেরিক ভার্সন তৈরি করে পেটেন্ট সুবিধা লাভ করেছে। এখানে তৈরি ওষুধকে পেটেন্ট সুবিধা দেওয়া হয়নি, দেওয়া হয়েছে ওষুধ বা প্রডাক্ট প্রস্তুত প্রণালিকে। সেক্ষেত্রে আমরাও সেই একই কাজটি বাংলাদেশে করতে পারি। এ প্রক্রিয়ায় ওষুধের প্রাপ্তি সহজলভ্য হয়, দামও সস্তা থাকে।

ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ : প্রফেসর, ফার্মেসি বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

drmuniruddin@gmail.com

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম