Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

ভ্রমণ

পাঁচগাঁওয়ের পাহাড়ি সৌন্দর্য

Icon

সেলিম আল রাজ

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পাঁচগাঁওয়ের পাহাড়ি সৌন্দর্য

সীমান্তঘেঁষা পাহাড়ের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ইচ্ছা করে নীল আকাশে ডানা মেলে উড়তে। নিচ থেকে ওপর, ওপর থেকে নিচ, কী মনোহর দৃশ্যাবলি। পাহাড় যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে ভ্রমণপিয়াসীদের। এবার মোটরসাইকেলযোগে যাত্রা। প্রায় ৭০ কিলোমিটারের পথ, সকাল ৮টায় রওয়ানা হই। গৌরীপুর থেকে শ্যামগঞ্জ হয়ে নেত্রকোণা যাওয়া যায়, কিন্তু আমরা গেলাম শাহগঞ্জ হয়ে। নেত্রকোণা-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের নতুন বাইপাস সংযোগপথ। শাহগঞ্জ থেকে নেত্রকোণা পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার পথ নিমিষেই চলে গেলাম।

নদীমাতৃক আমাদের দেশের চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নদ-নদী, খাল-বিল, হাওড়-বাঁওড়। কলমাকান্দা যাওয়ার পথে নানা নামে বেশ কয়েকটি ব্রিজ চোখে পড়ে। ব্রিজের নামগুলো কত বিচিত্র ধরনের। হাওড়ের বুকে পাকা সড়ক। রাস্তার দুপাশে বিস্তীর্ণ ফসলের খেত। সবুজ প্রকৃতির হাওয়ার দোল খেতে খেতে কলমাকান্দা পৌঁছে যাই সকাল ১০টায়।

গ্রামীণ জনপদের কলমাকান্দা বাজার। হোটেলে নাশতা সেরে চললাম পাঁচগাঁওয়ের দিকে। আট কিলোমিটারের পথ। ভাঙাচোরা পথ ধরেই এগিয়ে যাই আমরা। রাস্তায় দেখা মেলে স্থানীয়দের সঙ্গে, কর্মব্যস্ত মানুষ। গরুর গাড়ি দিয়ে অনেকেই মালামাল পরিবহণ করে। রংছাতি ইউনিয়নের বাজার পেরিয়ে জিরো পয়েন্ট। আমরা জিরো পয়েন্টের বাম দিকে এগোচ্ছিলাম। সীমান্তবর্তী পাকা রাস্তা। একপাশে পাহাড়, অন্যপাশে লোকালয়। কিছুদূর যেতেই মনে হচ্ছিল আমরা নির্দিষ্ট পথে নেই। স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞেস করে বুঝতে পারলাম, আমরা উলটো পথে আছি। বাইক ঘোরালাম। বিজিবি গার্ড পয়েন্ট খানিক দূরে। এখান থেকেই স্থানীয় লোকজনের চলাচলের পথ ধরে এগিয়ে গেলাম। পাকা সড়ক থেকে ভাঙা ব্রিজের ওপর দিয়ে আমি একা হেঁটে পাহাড়ের দিকে এগোচ্ছিলাম। পাহাড়ের পাদদেশে কয়েকটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বাড়িঘর। তাদের সঙ্গে কয়েক মিনিট কথা বলে গন্তব্যের পথে রওয়ানা দেই।

দূর থেকে চোখে পড়ে পাঁচগাঁওয়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের দৃশ্যাবলি। কথিত আছে, শত শত বছর আগে চাঁদ সওদাগরের সপ্তডিঙ্গা ডুবে গিয়েছিল পাঁচগাঁওয়ের পাহাড়ে। সেই কারণেই অনেকে মনে করেন, এ পাহাড়টি নৌকা আকৃতির। তাই পাহাড়টির নামকরণ করা হয়েছে চন্দ্রডিঙ্গা। বর্ষাকালে নৌকা আকৃতি পাহাড়ের বুক বেয়ে নামে পানির ঢল। পাহাড়ের নিচে নালার মতো পথ বেয়ে নেমে যায় জলের স্রোত। চন্দ্রডিঙ্গার পাদদেশে বিশাল আকৃতির পুরোনো বটগাছ। বিস্তীর্ণ জায়গাজুড়ে তার শাখা-প্রশাখা। এখানে ঘুরতে আসা ভ্রমণপিয়াসীরা বটগাছের শীতল ছায়ায় প্রশান্তি নেন। বাটগাছ থেকে প্রায় এক কিলোমিটারের মতো পাহাড়ি পথ বেয়ে একটা মন্দির। আরেকটু এগোলেই পাঁচগাঁওয়ের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য। এখান থেকে পাঁচগাঁওয়ের চন্দ্রডিঙ্গা পাহাড় দেখতে অনেকটা কাশ্মীরের মতো সৌন্দর্য অনুভব করা যায়।

নয়নাভিরাম পাহাড়ি দৃশ্য, ঝরনাধারা ও পানিনামা পথ দেখতে দেখতে বিজিবি গেটের কাছে ফিরে আসি। সীমান্ত এলাকা স্বাভাবিক থাকলে বিজিবির অনুমতি নিয়ে ভেতরে যাওয়া যায়। দুই দেশের মধ্যে পরিস্থিতি উত্তেজনা বিরাজমান থাকলে গেট থেকেই ফিরতে হয়। এরই মধ্যে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে ঘুরতে আসছেন ভ্রমণপিয়াসীরা। পাঁচগাঁও বিজিবি গেটের পাশে গড়ে উঠেছে দোকানপাট। ঘুরতে আসা পর্যটক সাবান, শ্যাম্পু, ক্রিম, চকোলেটজাতীয় পণ্যগুলো সচরাচর এখান থেকে বেশি কেনাকাটা করে থাকে। আমরাও কয়েকটি বিপণিবিতানে গেলাম।

ছায়াঘেরা সবুজ পাহাড়ি পাঁচগাঁও থেকে আবার কলমাকান্দায় ফিরে আসি। এখান থেকে প্রায় বিশ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে লেংগুরা বাজার। বাজার থেকে সোজা রাস্তা ধরে এগোলেই সাত শহীদের মাজার। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এ জায়গায় সাতজন শহীদকে সমাহিত করা হয়। তাদের স্মরণে এখানে নির্মাণ করা সাত শহীদের মাজার। মাজারের আশপাশে বিভিন্ন গাছগাছালিতে আচ্ছাদিত লেংগুরা টিলা। এককথায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা নির্জন জায়গা। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে গণেশ্বরী নদী। স্থানীয় লোকজন নদী থেকে পাথর, কয়লা, বালু তোলায় ব্যস্ত সময় পার করার দৃশ্য লক্ষ করলাম। চারপাশের দৃশ্যাবলি নজরকাড়া। ভারত সীমান্তবর্তী লেংগুরা টিলাটি প্রকৃতির গড়ে ওঠা চমৎকার এক ছোট্ট পর্যটন স্পট। চমৎকার পাহাড়ি সৌন্দর্যের পাশাপাশি মেঘালয় রাজ্যের মনোহর চিত্রাবলী উপভোগ করা যায়। ক্রমেই দর্শনীয় স্থান হিসাবে লেংগুরা টিলার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে পর্যটকদের কাছে।

লেংগুরা থেকে কলমাকান্দা হয়ে ফেরা যায় কিংবা লেংগুরা থেকে বিরিশিরি হয়ে পূর্বাধলা দিয়ে আসা যায়। আমরা লেংগুরার সীমান্তবর্তী পাকা সড়ক ধরে বিরিশিরির দিকে এগোলাম। চোখধাঁধানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেঘেরা পাঁচগাঁও ও লেংগুরা টিলার মনোমুগ্ধকর স্মৃতি নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি।

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বাসে সরাসরি যেতে পারেন নেত্রকোণার কলমাকান্দা। ময়মনসিংহ থেকেও কলমাকান্দাগামী বাস যাতায়াত করে। কলমাকান্দা থেকে বাইক কিংবা সিএনজি অটোরিকশাযোগে পাঁচগাঁওয়ের চন্দ্রডিঙ্গা ও লেংগুরা টিলায় যেতে পারেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম