এক টুকরো সবুজের মেলা
মাজহারুল ইসলাম শামীম
প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গ্রীষ্মের প্রখর সূর্যের তাপ থেকে শুরু করে মানুষের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন অক্সিজেন পর্যন্ত সব কিছুর জন্যই গাছপালার গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শহরগুলো থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গাছপালা। এতে পরিবেশ ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। সে জায়গায় স্থান পাচ্ছে কৃত্রিম সবুজ রঙের গাছগাছালি। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার হারিয়ে যাওয়া সবুজ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রতি বছর বৃক্ষমেলার আয়োজন করে থাকে। তেমনই প্রতিবারের মতো এবারও আয়োজন করা হয়েছে বৃক্ষমেলার। এবারের বৃক্ষমেলার মূল স্লোগান হলো : ‘পরিকল্পিত বনায়ন করি, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি’। এ মেলার বাহারি রকমের গাছ একদিকে ক্রেতাদের মনের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে অন্যদিকে মেলার নান্দনিকতা ফুটিয়ে তুলছে। এ মেলা প্রদর্শনের পর যে কারও মনের অনুভূতি হতে পারে, এ যেন ইট-পাথরের শহরে এক সবুজ রাজ্যের সূচনা। এ মেলায় বৃক্ষপ্রেমীরা ছুটে আসছেন দেশের নানা প্রান্ত থেকে। একইসঙ্গে ব্যস্ত সময় পার করছেন নার্সারির মালিকরাও। প্রতি বছর যদিও বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসাবে ৫ জুন শুরু হয় মেলা। কিন্তু এবার ঈদের ছুটির কারণে মেলা ২৪ জুন থেকে শুরু হয়েছে এবং চলবে ২৪ জুলাই পর্যন্ত। প্রতি দিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলা এ মেলায় রয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতার ঢল। ছুটির দিনগুলোতে মানুষের সমারোহ বেশি থাকে। মেলা থেকে যে যার পছন্দমতো গাছ সংগ্রহ করে নিতে পারেন। বৃক্ষমেলায় বিভিন্ন ধরনের ফুল, ফল, কাঠ, ঔষধি গাছসহ দেশি-বিদেশি ইনডোর প্ল্যান্ট ইত্যাদি পাওয়া যায়।
উল্লেখযোগ্য ফল গাছ : উচ্চফলনশীল আম, করমচা, হরেক রকমের কাঁঠাল, ডালিম, আপেল, কমলা, ড্রাগন ফল গাছ, বরই, বেল, কাজুবাদাম, ডুমুর, স্ট্রবেরি, কিউই ফল, চেরি ফল, আদা, জামির, আতা এবং জাম্বুরাসহ বিভিন্ন ধরনের ফল। বিভিন্ন নার্সারির মধ্যে দেখা উল্লেখযোগ্য ফুলগাছ হাসনুহানা, পলাশ, মালতি, নয়নতারা, কনকচাঁপা, জবা, গোলাপ, রজনীগন্ধা, চেরি ফুল গাছসহ অনেক রকমের নাম না জানা গাছ। এ ছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ইনডোর প্ল্যান্ট : থাই ক্যানসুলেশন, টেরেরিয়াম, পেপারোমিয়া, মানিপ্ল্যান্ট, ক্যাকটাসসহ শতেক ইনডোর প্ল্যান্ট। তাই পরিবারের সবাই ঘুরে আসতে পারেন এ মেলা থেকে। এতে করে ছোটরাও বিভিন্ন ধরনের গাছপালা সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে পারবে।
ব্র্যাক নার্সারি
নান্দনিকতা আর বিস্ময়কর সব গাছের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করল এ স্টলটি। মহূর্তে যে কারও আর্কষণ হতে বাধ্য হবে স্টলের সারি সারি গাছের প্রতি। তাদের স্টলে ক্যাকটাস, পেপারোমিয়া, মানিপ্ল্যান্ট, সিলভার কুইন ফুলের গাছগুলো এতটা নজর কাড়ছে, যা ক্রেতাদের ক্রয়ে আগ্রহ সৃষ্টি করছে অনেকগুণ। এ ছাড়া তাদের স্টলের ক্রেতাদের চাহিদা অনুসারে বিভিন্ন ফল এবং ফুলের গাছ রয়েছে। তাদের স্টলের ডেকোরেশনটিও অন্য স্টলের চেয়ে একক পরিচয় বহন করছে।
ফয়সাল নার্সারি
দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থের দিক থেকে অন্যতম এক বৃহত্তম নার্সারি। এর স্বত্বাধিকারী মো. ফয়সাল আহমেদ বলেছেন, তার স্টলে রয়েছে হাজারো রকমের ফুল, ফল, ঔষধি এবং ইনডোর প্ল্যান্ট। তথ্যমতে, গড়ে প্রতিনিয়ত ৫০০-৬০০ বিভিন্ন ধরনের গাছ বিক্রি হয় তার স্টল থেকে। রয়েছে সার্বক্ষণিক দর্শনার্থী এবং ক্রেতার ভিড়। তিনি আরও বলেন, তার স্টলে সর্বোচ্চ দামের ইনডোর প্ল্যান্ট হলো থাই ক্যানসুলেশন। যার দাম ৩৫০০০ টাকা। সর্বনিম্ন মানিপ্ল্যান্ট ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ঔষধি গাছ এবং ফল গাছ ১০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে। তিনি ক্রেতা থেকে অর্ডার নিয়ে থাকেন। যা পরে পৌঁছে দেন ক্রেতাকে ঠিকানা অনুসারে। তার স্টলের গাছের সমারোহ এক অনন্য সৌন্দর্য ফুটে তুলেছে।
তমাল হিজল নার্সারি
এ স্টলে গিয়ে পাওয়া যাবে ইনডোর প্ল্যান্টের জন্য নান্দনিক রঙের নুড়িপাথর, বিভিন্ন গাছের জন্য টব, গ্রামীণ ঐতিহ্যের পরিচয় বহনকারী বিভিন্ন ঝুড়ি। এ ছাড়া তাদের স্টলের সামনে সারি সারি সাজানো বিভিন্ন ফুল, ফলের গাছ। যা দেখতে দর্শনার্থীসহ ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছে। তথ্য অনুসারে, তার স্টলের গাছ বিক্রির সংখ্যা প্রায় ৩০০-৪০০ এবং বিভিন্ন টব এবং হাতের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র মিলে ভালোই বিক্রি হয় প্রতিনিয়ত।
ছবি তুলেছেন মনির আহমেদ
