Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যেভাবে ইসলাম ছড়িয়ে দেন চীনা নাবিক ঝেং হে

জিহাদী ইহসান

জিহাদী ইহসান

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৫, ০৭:১১ পিএম

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যেভাবে ইসলাম ছড়িয়ে দেন চীনা নাবিক ঝেং হে

চীনের মুসলিম নাবিক ঝেং হে। প্রতীকী ছবি

চীনের মুসলিম নাবিক ঝেং হে চীনের মিং সাম্রাজ্যের (Ming Dynasty) একজন বিখ্যাত নৌ-অভিযাত্রী এবং সামরিক নেতা ও কূটনীতিক ছিলেন। তিনি মিং সাম্রাজ্যের নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল (Admiral) হিসেবে কাজ করেছিলেন এবং সাম্রাজ্যের সমুদ্র অভিযানের নেতৃত্ব দিতেন। সাতটি বিখ্যাত সমুদ্র অভিযান পরিচালনা করেন। যেখানে জাহাজ নোঙর করতেন সেখানেই তিনি ইসলাম প্রচার করতেন। মা হে সমুদ্র অভিযানের সময় মুসলিম আলেমদের সঙ্গে নিয়ে যেতেন। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কায় ইসলাম প্রচারে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন তিনি। কলিকট, কচি বন্দরে গিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশের নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করেন। চোশন রাজ্য দক্ষিণ কোরিয়া ইসলাম প্রচার করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত চোশন রাজ্যে মিং সাম্রাজ্যের প্রভাব বিস্তার করেন। এছাড়াও হরমুজ (ইরান), আদেন (ইয়েমেন), হেজাজে বাণিজ্যিক ও কূটনীতিক সম্পর্ক তৈরি করেন। হজ যাত্রীদের সহযোগিতা করতেন, চীনের নৌবাহিনী আরবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। চীনের বিখ্যাত মুসলিম নৌ-অভিযাত্রী ঝেং হে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ছড়িয়ে দেন ইসলাম। 

আফ্রিকার অনেকে দেশে ইসলাম প্রচার করেন মা হে। পূর্ব আফ্রিকার মোগাদিশু (সোমালিয়া), কিলওয়া (তানজানিয়া), মম্বাসা, মালিন্ডি  (কেনিয়া) তার সবশেষ সপ্তম অভিযান ছিল (১৪৩১-১৪৩৩) সালে চট্টগ্রাম বন্দরে। সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের সময় বাংলা সালতানাতের পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচুর্যপূর্ণ সমৃদ্ধশীল সাম্রাজ্যের একটি ছিল। এ সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর ছিল পৃথিবীর একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র; যা মালয়েশিয়া, ভারত, আরব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করতে সাহায্য করে। মা হে ১৪৩৩ সালে সমুদ্র অভিযান শেষে তৎকালীন চীনের মিং রাজবংশের রাজধানী নানজিংয়ে মারা যান। হংভংয়ে তার সমাধি আছে। আজকাল, চীন তাকে কেবল একজন সামরিক নাবিক হিসেবে নয় বরং একজন কূটনীতিক এবং সাংস্কৃতিক দূত হিসেবেও দেখেন। তিনি বিশ্বজুড়ে শান্তি, বাণিজ্য এবং সহযোগিতার বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তার অবদান চীনা জনগণের মধ্যে গর্বের অনুভূতি সৃষ্টি করে এবং তিনি প্রাচীন চীনের সামুদ্রিক শক্তি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অগ্রদূত হিসেবে স্মরণীয়। বর্তমানে চীন তার অতীত সমুদ্র অভিযাত্রীদের কাজের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে এবং তাদের থেকে শিক্ষা নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপথে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। তার বিখ্যাত সাতটি সমুদ্র অভিযান নিয়ে চীনা সমুদ্র ইতিহাস, নৌ-প্রযুক্তি এবং জিওপলিটিক্স বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। 

গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ চীনা সম্রাট ইয়োংলের (Yongle Emperor) সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন এবং তার রাজ দরবারে ১৪১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে  উপহারস্বরূপ একটি জিরাফ পাঠিয়েছিলেন; যা ছিল মিং রাজবংশের সময় অত্যন্ত চমকপ্রদ ও বিরল প্রাণী। ওই জিরাফ উপহার দেওয়ার ঘটনা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস। চীনা মুসলিম পর্যটক মা হুয়ান (ঝেং হে’র সহকারী) তার বই ‘দ্য ওভারঅল সার্ভে অব দ্য ওশান’স শোরস’ এক ঐতিহাসিক দলিল; যা চীনের ইতিহাস গ্রন্থ মিং শিতে’ উল্লেখ আছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো- চীনের ইতিহাস, কূটনীতিক, রাজনীতি নিয়ে পড়তে গেলে মুসলমানদের বাদ দিয়ে ইতিহাস পাঠ করা যায় না। 

মা হে চীনা মুসলিম সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেন তার সমুদ্র অভিযানের মধ্য দিয়ে। তিনি শুধু একজন নৌঅভিযাত্রীই ছিলেন না, ছিলেন ইসলামের শান্তিপূর্ণ সৌন্দর্যের বার্তাবাহক। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ভারত মহাসাগর, আরব উপদ্বীপ এবং পূর্ব আফ্রিকায় তার যাত্রা চীনের সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক এবং ইসলামী প্রভাব বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। 

তার আসল নাম ছিল মা হে (মোহাম্মদ)। চীনে ‘মা’ নামটি সাধারণত হুই মুসলিম পরিবারে ব্যবহৃত হতো, মাহে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর নামের সংক্ষিপ্ত রূপ হিসেবে পরিচিত ছিল। ঝেং হে’র জন্ম ১৩৭১ সালে চীনের ইউনান (Yunnan) প্রদেশে হুই মুসলিম পরিবারে। মিং সাম্রাজ্যের রাজধানী নানজিংয়ে ১৪৩৩ সালে মারা যান তিনি। 

লেখক: কবি ও সহকারী সদস্য সচিব, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ

শিক্ষার্থী: গুইলিন ইউনিভার্সিটি অব ইলেকট্রনিক টেকনোলজি, চীন

ইমেইল: zehadiehsan@gmail.com

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম