Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

কন্যাসন্তান গ্লানি নয়, শ্রেষ্ঠ নেয়ামত

আনিসুর বুলবুল

আনিসুর বুলবুল

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৫, ০৯:০০ পিএম

কন্যাসন্তান গ্লানি নয়, শ্রেষ্ঠ নেয়ামত

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে ঘটে গেছে এক বেদনাদায়ক ও লজ্জাজনক ঘটনা। কন্যাসন্তান জন্ম নেওয়ায় শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে মিষ্টির বদলে উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছে মাটি ও ইটের গুঁড়ার কার্টন। এই অবমাননাকর আচরণ করেছেন শিশুটির বাবা। ঘটনাটি শুনলে মনে হয়, এ যেন কোনো বর্বর যুগের গল্প! অথচ এটি ঘটেছে আজ, এই সময়েই। স্থানীয় মানুষজন ঘটনাটিকে নারীর প্রতি অবজ্ঞা, সহিংসতা ও লিঙ্গভিত্তিক বিদ্বেষের ভয়াবহ উদাহরণ হিসেবে দেখছেন।

দুঃখজনক হলেও সত্য, এই ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ব্যতিক্রম নয়। গত বছর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় পরপর তিন কন্যা জন্ম নেওয়ায় এক পিতা নিজের সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। তারও আগে বরিশালের আগৈলঝাড়ায় কন্যাসন্তান জন্ম হওয়ায় এক মা নিজের নবজাতককে গলায় রশি পেঁচিয়ে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেফতার হন। এরও আগে রংপুরের বদরগঞ্জে কন্যাসন্তান জন্মের পর মা-বাবা শিশুটিকে হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে গিয়েছিলেন। এসব ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সমাজের একটা অংশ আজও কন্যাসন্তানকে গ্রহণ করতে অপারগ, অযোগ্য ও অমানবিক রয়ে গেছে।

কিন্তু ইসলাম কী বলে? রাসুলুল্লাহ (সা.) কন্যাসন্তানকে আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ নেয়ামত হিসেবে ঘোষণা করেছেন। হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি কন্যাসন্তানদের লালন-পালন করে, তাদের প্রতি সদয় থাকে এবং ভালোবাসা দেখায়—সে জান্নাতের নিশ্চয়তা পায়। কন্যাসন্তানকে অশুভ বা অকল্যাণকর মনে করা জাহেলি যুগের কুসংস্কার। এই প্রবণতা খাঁটি মুমিনের আচরণ হতে পারে না। বরং এটি একটি গর্হিত, অবমাননাকর মনোবৃত্তি; যা ইসলাম ঘৃণার চোখে দেখে।

ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির বাইরেও আছে বিজ্ঞানের স্পষ্ট বার্তা। পোল্যান্ডের এক গবেষণায় দেখা গেছে, কন্যাসন্তান বাবার আয়ু বাড়ায়। এক একটি কন্যাসন্তান বাবার গড় আয়ু বাড়ায় প্রায় এক বছর পাঁচ মাস দুই সপ্তাহ করে। যার যত কন্যা, তার আয়ুও তত বেশি—এমনটাই জানায় গবেষণা। শুধু দীর্ঘায়ুই নয়, মেয়ের বাবারা সাধারণত মানসিকভাবে আরও সংবেদনশীল, সংহত ও দায়িত্বশীল হয়ে ওঠেন।

তাহলে প্রশ্ন জাগে, কেন এই সমাজ এখনো কন্যাসন্তানকে বোঝা ভাবে? কেন জন্মের সঙ্গে সঙ্গে একজন নিষ্পাপ শিশুকে ‘অপয়া’ তকমা দিয়ে ঘৃণার পাত্র বানানো হয়? এর পেছনে আছে যুগ যুগ ধরে চলে আসা বিকৃত মানসিকতা, অপসংস্কৃতি ও লিঙ্গবৈষম্যের বিষ। আর এই বিষের প্রতিষেধক হলো সচেতনতা, সহানুভূতি এবং ধর্মীয়-মানবিক মূল্যবোধের চর্চা।

কন্যাসন্তান বোঝা নয় বরং আশীর্বাদ। তাকে অবজ্ঞা নয়, ভালোবাসা দিতে হবে। কারণ সে-ই ভবিষ্যতের মা, শিক্ষক, চিকিৎসক, উদ্যোক্তা, নেতা—সে-ই আগামী পৃথিবীর নির্মাতা। কন্যাসন্তানকে ভালোবাসা মানে এক মানবিক সমাজের ভিত্তি গড়ে তোলা। আসুন, সেই সমাজটিই গড়ি।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম