দূরদেশে দ্রোহ
জুলাই বিপ্লবে জার্মানিতে বাংলাদেশি কমিউনিটির সংগঠিত প্রতিরোধ ও কূটনৈতিক কৌশল
প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৫, ০৯:১০ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাংলাদেশের কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তে দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এর প্রভাব জার্মানিতেও পড়েছিল। তখন জার্মানিতে বাংলাদেশ ডায়াসপারার মধ্যে ভারত বয়কট ক্যাম্পেইন চলছিলো বেশ জোরেশোরে, বিভিন্ন গ্রুপে প্রচার চলছিলো ভারতীয় দোকান এবং পন্য বয়কটের। জার্মানির ভারতীয় দোকান, হোটলগুলোতে বাংলাদেশিরা প্রায় যায়ই না। এমন পরিস্থিতিতে আসে কোটা পুনর্বহালের ঘোষণা, যা জার্মানিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও প্রবাসীদের আরও ক্ষুব্ধ করে তোলে।
এরপর দেশজুড়ে যখন কোটা সংস্কার আন্দোলন নতুন করে চাঙ্গা হতে থাকে, তখন জার্মানির বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজন শুরু করেন। আন্দোলন সংগঠিত করতে মূলত জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে ঘনিষ্ঠভাবে অংশ নেবার সুবাদে আন্দোলনের সামনের মুখ আসিফ, নাহিদ, আকরাম, সিফাত আর পেছনের মুখ সিবগাতুল্লাহ, সাদিক, জুনায়েদদের সাথে আমার কিছু যোগাযোগ ছিল। ১০ জুলাইয়ের পর যখন আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলা শুরু করে আমার দেশের আন্দোলনকারীদের সাথে যোগাযোগ হয়। আমাদের দুইটা চ্যাট গ্রুপ ছিল। কিভাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আন্দোলন ছড়ানো যায় এবং দেশে আন্দোলনকারীদের লিটারেচার তৈরিতে এই গ্রুপ দুইটি গুরুত্বপূর্ণ সাহায্য করে।
আন্দোলনের ছয়টি প্রধান ধাপ
এই সংকটে আমরা, জার্মানিতে অবস্থানরত কয়েকজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও গবেষক, সিদ্ধান্ত নিই যে, আমাদের প্রতিবাদ হতে হবে কৌশলী, বহুমাত্রিক এবং টেকসই। ফলে ছয়টি স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে আন্দোলন সংগঠিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করি:
এক- মানববন্ধন কর্মসূচি
জার্মানির পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়, যাতে বিষয়টি স্থানীয় রাজনীতিবিদ, গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর নজরে আসে।
১। প্রধান রেলস্টেশনগুলোতে: জনসমাগম বেশি হয় এমন জায়গায় মানববন্ধন আয়োজন করা হয় যেন সবাই বাংলাদেশে চলা জুলুম সম্পর্কে জানে।
২। জাতীয় ও প্রাদেশিক সংসদ ভবনের আশপাশে: যাতে আইনপ্রণেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়।
৩। সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ের সামনে: যাতে জার্মান ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করে।
৪। মানবাধিকার সংস্থার অফিসের সামনে: যাতে তারা বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়।
৫। জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অফিসের সামনে: যাতে আন্তর্জাতিক মহলে বিষয়টি আলোচিত হয় এবং বাংলাদেশ সরকারের ওপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা যায়।
প্রতিটি মানববন্ধনে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায় এবং এতে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়। বার্লিন, মিউনিখ, বন, ব্রেমেন, ফ্রাংকফুর্ট একাধিক বার মানববন্ধন হয়।

দুই- রাজনৈতিক যোগাযোগ
জার্মানির অভিবাসন-বান্ধব সিনেটর এবং সংসদ সদস্যদের কাছে চিঠি ও ই-মেইল পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে মূলত বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
তিন- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার
জার্মানিতে টুইটার (বর্তমানে এক্স) বেশ প্রভাবশালী। আমরা ইংরেজি এবং জার্মানে টুইট করা শুরু করি। ফেইবুক এবং হোয়াটআপে একাধিক গ্রুপ করা হয় টুইট করতে।
#QuotaReform
#SaveBangladeshiStudents
#StepDownHasina
#BangladeshBleeding
#BangladeshiStudentsareinDanger
এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে প্রচার চালানো হয়। আমরা একই সাথে রাজনীতিবিদ, খেলোয়াড়, মানবধিকার সংগঠনকে ট্যাগ করি।
চার- তুর্কি কমিউনিটির সঙ্গে সংযোগ
জার্মানিতে তুর্কি মুসলিম কমিউনিটি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত। তাদের জাতীয় ও প্রাদেশিক পর্যায়ে একাধিক সংসদ সদস্য রয়েছে। আমরা বিভিন্ন শহরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশের চলমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করি। তুর্কিদের সাথে এমনিতেই বাংলাদেশি প্রবাসীদের সম্পর্ক চমৎকার। তারা ইতোমধ্যে এই ব্যাপারে জানতো। তারা বেশ গুরুত্বের সাথে আমাদের কথা শোনেন এবং যতটা সম্ভব আর্থিক এবং কূটনৈতিক সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেন।
পাঁচ- মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে ই-মেইল ও পিটিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে চলমান দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে আন্দোলনকারীদের জার্মান বন্ধুদেরও এই প্রচেষ্টায় যুক্ত করা হয়, যাতে বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলে আরও গুরুত্ব পায়। নিচের নয়টি সংগঠনের সাথে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে যোগাযোগ করা হয়:
1. German Institute for Human Rights
2. Amnesty International Germany
3. PRO ASYL
4. Centre for Humanitarian Action
5. German Federal Ministry for Economic Cooperation and Development (BMZ)
6. GIZ (Deutsche Gesellschaft für Internationale Zusammenarbeit)
7. Human Rights and Humanitarian Aid Committee of the German Bundestag
8. Human Rights Watch (HRW)
9. Doctors Without Borders (Médecins Sans Frontières)
এবং কয়েকটি গণমাধ্যমে
1. ZEIT Online
2. Frankfurter Rundschau
3. Tagesspiegel
ছয়- সেলিব্রেটিদের সাথে যোগাযোগ
আমরা ফুটবল, ক্রিকেট, কিংবা এক্টিভিজমের সাথে জরিত বিভিন্ন গ্লোবাল সেলিব্রেটির কাছে মেইল, টুইটার, ফেইসবুকে যোগাযোগ শুরু করি। খুবই ইতিবাচক সারা পাই।
১। ড. জাকির নায়েক
২। এনজো ফার্নানদেস
৩। লামিন ইয়ামাল
৪। গাভি
৫। ড. ইয়াসির কাদি
৬। ড্যানিয়েল হাকিকাতজু
৭। ওমর সুলাইমান
৮। দাউদ কিম
৯। মুফতি তারেক মাসুদ
১০। টম ফ্যাকাইন
তারা বাংলাদেশ নিয়ে ফেইসবুক, টুইটার এবং ইন্সটাগ্রামে একাধিক পোস্ট করেন। ভিডিও ব্লগ করেন। তবে আমরা একক কৃতিত্ব দাবি করছি না। তাদের নিজস্ব মাধ্যম আছে এবং সারা দুনিয়া থেকে একাধিক ব্যক্তি তাদের সাথে যোগাযোগ করেন। তবে তার মধ্যে আমরাও ছিলাম।
আমাদের প্রতিটি কর্মসূচি বাংলাদেশ ডায়াসপারার মধ্যে সারা ফেলে। প্রতিটি শহরে প্রায় প্রতিদিন মানববন্ধন কর্মসূচি হতে থাকে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে জার্মানি, তুরস্ক, পাকিস্তান, সিরিয়ার শিক্ষার্থীরাও আমাদের মানববন্ধনে অংশ নেয়, তারাও ইমেইল এবং টুইট করার কার্যক্রমেও যুক্ত হয়। কথা প্রসঙ্গে একটা ঘটনা উল্লেখ করি, বন শহরের আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠক বন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফখরুল ইসলাম আমাকে ১৯ জুলাইয়ের একটা ঘটনা জানায়।
বন শহরের আন্দোলনকারীরা জাতিসংঘের ইউরোপীয় সদর দপ্তরের সামনে মানবন্ধন করার ঘোষণা দেয়। জাতিসংঘের ইউরোপীয় সদর দপ্তরের পাশেই জার্মানির প্রভাবশালী গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রধান কার্যালয়ের অবস্থিত। সে সময় ডয়েচে ভেলেতে একজন সুশীল স্টার সাংবাদিক কাজ করতেন। মানববন্ধন চলাকালীন সময় সেই সুশীল সাংবাদিক তার এক সহকর্মীসহ ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আন্দোলনকারীদের শ্লোগান এবং ব্যানার দেখে দ্রুত হাঁটার গতি বাড়িয়ে অফিসের দিকে এগোতে থাকেন।
তৎক্ষণাৎ উপস্থিত কয়েকজন ছাত্র তাকে থামিয়ে অনুরোধ করেন—‘ভাই, মাত্র দু’মিনিট আমাদের সঙ্গে দাঁড়ান, প্রতিবাদে অংশ নিন।’ কিন্তু তিনি ‘মিটিং আছে’, ‘আমার দেরি হয়ে যাবে’ ইত্যাদি নানা অজুহাতে সেখান থেকে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।
এর বাইরে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে মিউনিখে। সেখানে আয়োজিত মানববন্ধনে দুই-তিনজন অংশগ্রহণকারী ‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানের বিরুদ্ধে আপত্তি তোলে। তবে, উপস্থিত শিক্ষার্থীরা দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং তাদের যুক্তিগ্রাহ্য জবাব দেয়। প্রতিকূল পরিস্থিতি বুঝতে পেরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা শেষ পর্যন্ত স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
এই আন্দোলনকে সংগঠিত ও সফল করতে জার্মানিতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা আন্দোলনের পরিকল্পনা, সংগঠন, প্রচার এবং আর্থিক সহায়তায় অগ্রণী ভূমিকা রাখে। মিউনিখে মুস্তাফিজুর রহমান, রায়হান পাটোয়ারি, সাব্বির আহমেদ; ব্রেমেন খালিদ বিন মুসা, আব্দুল আলিম, বোরহান উদ্দিন; বনে ফখরুল ইসলাম; ফ্রাংকফুটে ইঞ্জিনিয়ার মোসাদ্দেক, খালিদ মুহাম্মদ; হামবুর্গে আদনান আব্দুল হাই, ডর্টমুন্ডে মাহবুব উল্লাহ খান মাসুম, হাম্মাদ সুজুল এই পুরো ক্যাম্পেইনে বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ পালন করেন।
প্রায় এক সপ্তাহ আমাদের এই সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল আসতে শুরু করে। দুইটা প্রতিষ্ঠান আমাদের মেইলের সরাসরি উত্তর দেয়
১। German Foreign Office এর Human Rights Policy and Humanitarian Aid
২। Centre for Humanitarian Action
তারা জানান, জার্মান সরকার এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সাথে পর্যবেক্ষণ করছে এবং জার্মানি ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার কমিশনে এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি—কারণ কেবল সামাজিক মাধ্যমে নয়, এবার কূটনৈতিক মহলেও বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আলোচনায় উঠে আসে।
এই চাপ প্রয়োগের প্রক্রিয়ায় তুর্কি বংশোদ্ভূত সংসদ সদস্যসহ জার্মানির একাধিক সংসদ সদস্য সরাসরি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা কেবল বিবৃতি দিয়েই থেমে থাকেননি বরং সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিআকর্ষণ করতে সচেষ্ট হন।
জার্মানির একাধিক এমপি ও মন্ত্রী বাংলাদেশ বিষয়ে টুইট করেন, যার মধ্যে মানবাধিকার ও অভিবাসন-বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত সংসদ সদস্যরাও ছিলেন। এই টুইটগুলো শুধু প্রতীকী প্রতিবাদ ছিল না—এগুলো আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক নথিপত্রে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
একাধিক প্রাদেশিক পার্লামেন্টে—বিশেষ করে ব্রেমেন, মিউনিখ এবং হামবুর্গে—বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আলোচিত হয়। এই আলোচনার সূত্র ধরে অনেক মানবাধিকার সংস্থা ও মিডিয়া সংস্থা বাংলাদেশের বিষয়ে নিবন্ধ ও রিপোর্ট প্রকাশে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
জার্মানির প্রভাবশালী মিডিয়া যেমন: ডয়েচে ভেলে, ভেজার কুরিয়ার, টাগেসপিগেল এবং ডি ভাল্ট—এই সব মিডিয়া বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন এবং এর বিরুদ্ধে সরকারের দমন-পীড়নের খবর গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করে। ফলস্বরূপ, আন্তর্জাতিক মহলের সচেতনতা বাড়ে এবং ইউরোপজুড়ে বিভিন্ন বুদ্ধিজীবী ও প্রবাসী গোষ্ঠীর মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়।
অর্থনৈতিক চাপ: রেমিট্যান্স শাটডাউন
এই পর্যায়ে এসে আমরা বুঝি, আন্তর্জাতিক বিবৃতি এবং টুইট প্রচার যতটা জরুরি, তথ্যনির্ভর চাপ এবং অর্থনৈতিক কৌশল আরও কার্যকর হতে পারে। তাই আমরা পরিকল্পনা করি একটি প্রতীকী অথচ বাস্তবমুখী পদক্ষেপ—রেমিট্যান্স শাটডাউন।
যদিও জার্মানি থেকে বাংলাদেশের মোট রেমিট্যান্স প্রবাহ তুলনামূলকভাবে বড় নয়, তারপরও এটি কৌশলগতভাবে ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি দুটি বার্তা দেয়:
১. বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা;
২. সারা বিশ্বের প্রবাসীদের জন্য একটি উদাহরণ তৈরি করা—রেমিট্যান্স হচ্ছে শক্তি, প্রয়োজনে তা বন্ধ করা যেতে পারে।
আমাদের ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে আমরা সচেতনভাবে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিই। অধিকাংশ প্রবাসী বিকল্প ও অনানুষ্ঠানিক মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে শুরু করেন। এর ফলে, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে একটি সামান্য কিন্তু প্রতীকী ধাক্কা লাগে।
৩৬ জুলাই: পরিবর্তনের দিন
আমাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত ছিল ৩৬ জুলাই পর্যন্ত—যেদিন হাসিনা সরকারের পতনের ঘোষণা আসে। এই ঐতিহাসিক ঘোষণার পরপরই জার্মানির বিভিন্ন শহরে শোকরানা নামাজ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের জন্য আর্থিক সাহায্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়। শুধুমাত্র রাজনৈতিক নয়, এই কার্যক্রম মানবিক সহযোগিতার দৃষ্টান্তও হয়ে দাঁড়ায়।
আন্তর্জাতিকীকরণে জার্মান প্রবাসীদের ভূমিকা
জার্মানিতে বাংলাদেশি প্রবাসীদের সম্মিলিত আন্দোলন কোটা সংস্কার আন্দোলনকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত করে তোলার পেছনে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে। এটি ছিল কেবল প্রতিবাদ নয়, বরং সংগঠিত এক সচেতনতার আন্দোলন—যা রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়ার মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়।
এই প্রচেষ্টা প্রমাণ করে—বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকেই ন্যায়সংগত দাবির পক্ষে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব। তথ্য, কৌশল, ঐক্য এবং সময়োচিত পদক্ষেপ—এই চারটি উপাদানই প্রবাসীদের আন্দোলনকে সফল করে তোলে।
জার্মান প্রবাসীরা দেখিয়ে দিয়েছে—বিদেশে থেকেও দেশের পরিস্থিতির ওপর গভীর ও কার্যকর প্রভাব ফেলা সম্ভব, যদি প্রবাসীরা সুসংগঠিত, ঐক্যবদ্ধ ও সক্রিয় থাকে।
মীর সালমান শামিল, গবেষক, ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মানি
ই-মেইল: sabbimir@hotmail.com

