Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

নারী নির্যাতন থামাতে এখনই চাই সামাজিক প্রতিরোধ

আনিসুর বুলবুল

আনিসুর বুলবুল

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৫, ০৮:০৫ পিএম

নারী নির্যাতন থামাতে এখনই চাই সামাজিক প্রতিরোধ

চলতি বছরে পারিবারিক সহিংসতার ভয়াবহ চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে নানা পরিসংখ্যানে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে জুলাইএই সাত মাসে দেশে পারিবারিক সহিংসতার ৩৬৩টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩২২ জন মানুষ। তাদের মধ্যে নারী ও শিশু মিলিয়ে নিহত হয়েছেন ২০৮ জন। আবার কেউ কেউ নির্যাতনের জালে আটকে গিয়ে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন, সংখ্যা ১১৪।

পরিসংখ্যান আরও বলে, স্বামীর হাতে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। শুধু স্বামীর নির্যাতনেই নিহত হয়েছেন ১৩৩ জন নারী। আবার স্বামীর পরিবারের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন ৪২ জন। এমনকি নিজের পরিবারের সদস্যদের হাতেও খুন হয়েছেন ৩৩ জন নারী।

একেকটি ঘটনা একেকভাবে ভয়াবহ। কখনো স্বামী এক যুগ সংসার করার পর স্ত্রীর শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন, কখনো লাশ ফেলে দেওয়া হয়েছে পুকুরে। আবার কোথাও মাদকাসক্ত স্বামী সামান্য কলহের কারণে তার স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা করছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের নানা জায়গায় এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে।

অন্যদিকে, সহিংসতার শিকার নারীরা নানাভাবে সাহায্যের জন্য ছুটছেন। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হেল্পলাইন ‘১০৯’-এ জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সহায়তা চেয়ে ফোন এসেছে ৪৮ হাজার ৭৪৫টি। শুধু জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’-এই জানুয়ারি থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত নারী নির্যাতনের ঘটনায় কল এসেছে ১৭ হাজার ৩৪১টি। এর মধ্যে পারিবারিক নির্যাতনের অভিযোগই প্রায় দশ হাজার, আর শুধুমাত্র স্বামীর বিরুদ্ধে এসেছে ৯ হাজার ৩৯৪টি কল। সংখ্যাগুলো স্পষ্ট করে দিচ্ছে, পারিবারিক সহিংসতা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং সমাজের গভীরে প্রোথিত এক দুঃসহ বাস্তবতা।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, যেসব নারীর পড়াশোনা কম কিংবা যাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা দুর্বল, তারাই বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অর্থনৈতিক অসহায়ত্ব এবং শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকার কারণে নারীরা সহজেই নির্যাতনকারী সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দুর্বলতা অপরাধীদের আরও বেপরোয়া করে তুলছে। যখন অপরাধী জানে শাস্তি এড়ানো সম্ভব, তখন তার হাতে সহিংসতা বেড়ে যায়।

এই বাস্তবতায় পরিবর্তনের দাবি আজ জরুরি হয়ে পড়েছে। নারীদের অবশ্যই নির্যাতনমূলক সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার সাহস জোগাতে হবে। সমাজ ও পরিবারকে পাশে দাঁড়াতে হবে, সহিংসতার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা আরও কঠোর ও কার্যকর হতে হবে। অপরাধী যদি শাস্তি পায় এবং সেই দৃষ্টান্ত সমাজে ছড়িয়ে পড়ে, তবে নির্যাতন কমবে।

নারী শুধু পরিবার নয়, গোটা সমাজের শক্তি। সেই শক্তিকে দমিয়ে রাখার মানে হলো জাতিকে পিছিয়ে দেওয়া। তাই নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিটি মানুষকে সচেতন হতে হবে, প্রতিটি পরিবারকে দায়িত্ব নিতে হবে। সহিংসতার কাছে হার মানা নয়, বরং প্রতিরোধ গড়ে তোলাই এখন সময়ের দাবি।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম