বিধবা পুত্রবধূকে পড়ালেখা শিখিয়ে বিয়ে দিলেন শাশুড়ি!
অনলাইন ডেস্ক
২৮ জানুয়ারি ২০২২, ১৫:১৬:৫৬ | অনলাইন সংস্করণ
স্নেহ, কর্তব্য, দায়িত্বপালনে গর্ভধারিণী মাকেও টেক্কা দিলেন ভারতের এক শাশুড়ি।
তার সন্তানের মৃত্যু হয়েছিল বিয়ে হওয়ার ছয় মাসের মাথায়। পুত্রশোকাতুর মা এই পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়তে পারতেন।
দুঃখের প্রকাশ করতে পারতেন সদ্য বিধবা পুত্রবধূর ওপর রাগ দেখিয়ে। যেমন অনেকেই করে থাকেন; কিন্তু তিনি তা করেননি। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
বিয়ের ছয় মাসের মাথায় স্বামী মারা গেলে ভারতীয় সমাজে সদ্য বিধবার কপালে নানা ‘দুঃখ’ লেখা থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে তেমনটি হয়নি।
২০১৬ সালের মে মাসে রাজস্থানে শিকরের কমলাদেবীর কনিষ্ঠপুত্র শুভমের সঙ্গে বিয়ে হয় সুনীতার। বিয়ের পরই স্বামী এমবিবিএস পড়তে চলে যান কিরগিজস্তানে। ওই বছরই নভেম্বর মাসে ব্রেনস্ট্রোকে মৃত্যু হয় শুভমের।
সুনীতা তখন রাজস্থানে, শ্বশুরবাড়িতে। তার সঙ্গী এবং অভিভাবক বলতে শাশুড়ি কমলা দেবীই। সদ্য বিধবা তরুণীকে ভালো রাখার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন কমলা।
সরকারি স্কুলের শিক্ষিকা কমলা। পুত্রশোক সামলে পুত্রবধূর ভালোমন্দে মন দেন। সুনীতাকে তার পড়াশোনা সম্পূর্ণ করতে বলেন।
শাশুড়ির উৎসাহেই সুনীতা তার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পূর্ণ করেন। পরে পুত্রবধূকে বিএড পড়ার জন্যও উৎসাহিত করেন কমলা। স্বামীকে হারানোর চার বছরের মধ্যে শিক্ষিকার চাকরিও পেয়ে যান সুনীতা। রাজস্থানেরই একটি স্কুলে তিনি ইতিহাসের শিক্ষিকা।
প্রতিবেশীরা বলেন, সুনীতাকে প্রথম দিন থেকেই ঘরের লক্ষ্মী বলে ডাকতেন তার শাশুড়ি। ছেলের থেকেও বেশি ভালোবাসতেন বউমাকে। তবে মুখে বলা এবং কাজে করে দেখানোর মধ্যে এক কথা নয়; সহজও নয়। কমলা সেই কঠিন কাজ করে দেখিয়েছেন।
কমলা পাঁচ বছর তার ‘গৃহলক্ষ্মী’র খেয়াল রেখেছেন। আত্মজার মতো তার যত্নআত্তি করেছেন। তার পর তাকে বাড়ি থেকে ‘বিদায়’ও করেছেন রীতি মেনে। মেয়েকে লালন-পালন করার পর বাবা-মা যেমন করে থাকেন।
কমলা সম্প্রতি পুত্রবধূর বিয়ে দিয়েছেন। ভোপালের মুকেশ নামে এক সরকারি হিসাবরক্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেন।
স্বাবলম্বী সুনীতার জন্য পাত্র পছন্দ করেছেন কমলা নিজেই। সাজিয়ে গুছিয়ে আত্মীয়স্বজনকে ডেকে বিয়েও দিয়েছেন। শ্বশুরবাড়িতেই বসেছে সুনীতার বিয়ের আসর। কন্যাদান করেছেন শাশুড়ি কমলা।
কাণ্ড দেখে অবাক কমলার পরিচিতরা। শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়েছে অনেকেরই। তাদের বক্তব্য বউমাকে লক্ষ্মী বলে ঘরে সব শাশুড়িই আনেন। কিন্তু সেই বলার দায় নেন কজন! কমলা তার লক্ষ্মীকে শুধু ঘরে বসাননি, তাকে স্বাবলম্বী করে প্রাণে ধরে বিদায়ও জানিয়েছেন।
ভারতীয় সিনেমা, মেগা ধারাবাহিকে পারিবারিক নাটকে খলনায়িকা হয়ে ওঠেন শাশুড়িরাই।সেই ধারার উল্টোপথে হেঁটে কমলা-সুনীতার কাহিনি হয়তো পর্দায় ঠাঁই পাবে না।
তবে এই অন্যরকম মা-মেয়ের গল্প যারা চোখের সামনে দেখেছেন বা জেনেছেন- তারা কিন্তু ভুলবেন না।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বিধবা পুত্রবধূকে পড়ালেখা শিখিয়ে বিয়ে দিলেন শাশুড়ি!
স্নেহ, কর্তব্য, দায়িত্বপালনে গর্ভধারিণী মাকেও টেক্কা দিলেন ভারতের এক শাশুড়ি।
তার সন্তানের মৃত্যু হয়েছিল বিয়ে হওয়ার ছয় মাসের মাথায়। পুত্রশোকাতুর মা এই পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়তে পারতেন।
দুঃখের প্রকাশ করতে পারতেন সদ্য বিধবা পুত্রবধূর ওপর রাগ দেখিয়ে। যেমন অনেকেই করে থাকেন; কিন্তু তিনি তা করেননি। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
বিয়ের ছয় মাসের মাথায় স্বামী মারা গেলে ভারতীয় সমাজে সদ্য বিধবার কপালে নানা ‘দুঃখ’ লেখা থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে তেমনটি হয়নি।
২০১৬ সালের মে মাসে রাজস্থানে শিকরের কমলাদেবীর কনিষ্ঠপুত্র শুভমের সঙ্গে বিয়ে হয় সুনীতার। বিয়ের পরই স্বামী এমবিবিএস পড়তে চলে যান কিরগিজস্তানে। ওই বছরই নভেম্বর মাসে ব্রেনস্ট্রোকে মৃত্যু হয় শুভমের।
সুনীতা তখন রাজস্থানে, শ্বশুরবাড়িতে। তার সঙ্গী এবং অভিভাবক বলতে শাশুড়ি কমলা দেবীই। সদ্য বিধবা তরুণীকে ভালো রাখার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন কমলা।
সরকারি স্কুলের শিক্ষিকা কমলা। পুত্রশোক সামলে পুত্রবধূর ভালোমন্দে মন দেন। সুনীতাকে তার পড়াশোনা সম্পূর্ণ করতে বলেন।
শাশুড়ির উৎসাহেই সুনীতা তার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পূর্ণ করেন। পরে পুত্রবধূকে বিএড পড়ার জন্যও উৎসাহিত করেন কমলা। স্বামীকে হারানোর চার বছরের মধ্যে শিক্ষিকার চাকরিও পেয়ে যান সুনীতা। রাজস্থানেরই একটি স্কুলে তিনি ইতিহাসের শিক্ষিকা।
প্রতিবেশীরা বলেন, সুনীতাকে প্রথম দিন থেকেই ঘরের লক্ষ্মী বলে ডাকতেন তার শাশুড়ি। ছেলের থেকেও বেশি ভালোবাসতেন বউমাকে। তবে মুখে বলা এবং কাজে করে দেখানোর মধ্যে এক কথা নয়; সহজও নয়। কমলা সেই কঠিন কাজ করে দেখিয়েছেন।
কমলা পাঁচ বছর তার ‘গৃহলক্ষ্মী’র খেয়াল রেখেছেন। আত্মজার মতো তার যত্নআত্তি করেছেন। তার পর তাকে বাড়ি থেকে ‘বিদায়’ও করেছেন রীতি মেনে। মেয়েকে লালন-পালন করার পর বাবা-মা যেমন করে থাকেন।
কমলা সম্প্রতি পুত্রবধূর বিয়ে দিয়েছেন। ভোপালের মুকেশ নামে এক সরকারি হিসাবরক্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেন।
স্বাবলম্বী সুনীতার জন্য পাত্র পছন্দ করেছেন কমলা নিজেই। সাজিয়ে গুছিয়ে আত্মীয়স্বজনকে ডেকে বিয়েও দিয়েছেন। শ্বশুরবাড়িতেই বসেছে সুনীতার বিয়ের আসর। কন্যাদান করেছেন শাশুড়ি কমলা।
কাণ্ড দেখে অবাক কমলার পরিচিতরা। শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়েছে অনেকেরই। তাদের বক্তব্য বউমাকে লক্ষ্মী বলে ঘরে সব শাশুড়িই আনেন। কিন্তু সেই বলার দায় নেন কজন! কমলা তার লক্ষ্মীকে শুধু ঘরে বসাননি, তাকে স্বাবলম্বী করে প্রাণে ধরে বিদায়ও জানিয়েছেন।
ভারতীয় সিনেমা, মেগা ধারাবাহিকে পারিবারিক নাটকে খলনায়িকা হয়ে ওঠেন শাশুড়িরাই।সেই ধারার উল্টোপথে হেঁটে কমলা-সুনীতার কাহিনি হয়তো পর্দায় ঠাঁই পাবে না।
তবে এই অন্যরকম মা-মেয়ের গল্প যারা চোখের সামনে দেখেছেন বা জেনেছেন- তারা কিন্তু ভুলবেন না।