শি’র অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বেসরকারি খাতকে অনিশ্চয়তায় ফেলবে
তিয়ানলেই হুয়াং ও নিকোলাস ভেরন
যুগান্তর ডেস্ক
১৬ নভেম্বর ২০২২, ১৮:৪১:০১ | অনলাইন সংস্করণ
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং অর্থনৈতিক সংস্কারকে এগিয়ে নেওয়ার সামান্যতম ইচ্ছাও দেখাননি। এমনকি যারা এসব নিয়ে উদ্বিগ্ন তাদেরকে তিনি কার্যত অক্ষম বা অবসরে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া অবাধে চীনা শেয়ার বিক্রি করায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারী সম্প্রদায়।
এই নতুন বিকাশ স্টক মার্কেটের দুর্দশাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে যা ২০২১ সালের গ্রীষ্মে বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রক কোম্পানিগুলোর আকস্মিক দরপতনের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। আর এই অবস্থা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল শূন্য-কোভিড নীতির কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে।
শি জিন পিংয়ের ক্ষমতার প্রথম দশকটি ছিল প্রচলিত মতবিরোধী। আর এ কারণে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ রয়েছে। একদিকে তিনি অর্থনীতির ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ কঠোর করেছেন এবং প্রায়ই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের জন্য তার পছন্দ অনুযায়ী "শক্তিশালী, ভাল এবং বড়" উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের গুরুতর সংস্কার থেকে বিরত ছিলেন। আর এর মাধ্যমে তিনি প্রবৃদ্ধিকে টেনে ধরেছেন।
অন্যদিকে, চীনা উদ্যোক্তা এবং শ্রমিকদের কাজের গতিশীলতার জন্য গত এক দশকে বেসরকারি খাত চীনা অর্থনীতিতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছে। তবে আমরা এখন একটি টার্নিং পয়েন্টে থাকতে পারি যদি আগের গতিশীলতা আরও প্রভাবশালী হয়ে ওঠে।
২০২০ সালের শেষ নাগাদ চীনের সবচেয়ে বড় কোম্পানির রাজস্ব যেটি ফরচুন গ্লোবাল ৫০০ র্যাং কিং করেছে এবং সবচেয়ে মূল্যবান ১০০টি চীনা তালিকাভুক্ত কোম্পানির বাজারমূল্য প্রায় ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে।
বৃহৎ বেসরকারি-খাতের কোম্পানিগুলি এখন ই-কমার্স এবং হাই-টেক ম্যানুফ্যাকচারিংসহ পেট্রোকেমিক্যালস, যন্ত্রপাতি, টেক্সটাইল এবং অটোর মতো সেক্টরও বিস্তৃত পরিসরে বিদ্যমান রয়েছে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলির দিকে লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, শি জিন পিং ক্ষমতায় আসার পর থেকে এসব কোম্পানি উল্লেখযোগ্যভাবে ভালো অবস্থানে গিয়েছে। ২০১০ সালের শেষ থেকে ২০২১ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত শীর্ষ ১০০টি তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর মোট বাজার মূল্য ২০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে রাষ্ট্রীয় খাতের মোট মূল্য মাত্র ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
একই সময়ে, শীর্ষ ১০০ তালিকাভুক্ত চীনা কোম্পানির সামগ্রিক বেসরকারি খাতের শেয়ার বাজার মূল্য ৮ শতাংশ থেকে ৫৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা চীনের কর্পোরেট জগতের জন্য একটি বিস্ময়কর রূপান্তর।
কিন্তু ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে বেসরকারি-খাতের মূল্য আগের অবস্থার সম্পূর্ণ বিপরীতে চলে গেছে। তখন এবং সাম্প্রতিক ত্রৈমাসিক পর্যবেক্ষণে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে চীনের শীর্ষ ১০০টি বেসরকারি তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো তাদের বাজার মূল্যের অর্ধেকেরও বেশি হারিয়েছে। আর এর প্রধান কারণ হিসেবে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়াকে দায়ী করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় খাতেও সেই মূল্য হ্রাস পেয়েছে। তবে সেই পরিমাণটি অনেক কম। শীর্ষ ১০০ তালিকাভুক্ত চীনা কোম্পানির মধ্যে বেসরকারি খাতের বাজার-মূল্যের শেয়ারও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে ৫৫ শতাংশ থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে ৪১ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই হিসাবে চীনের শীর্ষস্থানীয় তালিকাভুক্ত কর্পোরেশনগুলোর মধ্যে বেসরকারি খাতের অবস্থান ২০১৯ সালের শেষের দিকে যেমন ছিল ঠিক তেমন অবস্থায় ফিরে গেছে।
ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্ম কোম্পানিগুলি সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত তালিকাভুক্ত বেসরকারি কোম্পানির মোট মূল্যের মাত্র ৪৪ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করেছে, যা ২০১৬ সালের শেষের দিকে ৭৩ শতাংশ ছিল।
সামগ্রিকভাবে ওপরের এই অনুসন্ধানগুলোতে ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে বেসরকারি খাতের বিপরীতমুখিতার বিষয় তুলে আনা হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক বেসরকারি-খাতের এ ধরণের পিছিয়ে পড়া অস্থায়ী বা স্থায়ী কিনা তা দেখার জন্য আরও অপেক্ষার প্রয়োজন।
নিবন্ধ লেখক: তিয়ানলেই হুয়াং পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক্স (পিআইআইই) এর গবেষণা ফেলো, নিকোলাস ভেরন (পিআইআইই এবং ব্রুগেলের সিনিয়র ফেলো।
তথ্যসূত্র: সাউথ চীনা মর্নিং পোস্ট
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
তিয়ানলেই হুয়াং ও নিকোলাস ভেরন
শি’র অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বেসরকারি খাতকে অনিশ্চয়তায় ফেলবে
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং অর্থনৈতিক সংস্কারকে এগিয়ে নেওয়ার সামান্যতম ইচ্ছাও দেখাননি। এমনকি যারা এসব নিয়ে উদ্বিগ্ন তাদেরকে তিনি কার্যত অক্ষম বা অবসরে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া অবাধে চীনা শেয়ার বিক্রি করায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারী সম্প্রদায়।
এই নতুন বিকাশ স্টক মার্কেটের দুর্দশাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে যা ২০২১ সালের গ্রীষ্মে বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রক কোম্পানিগুলোর আকস্মিক দরপতনের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। আর এই অবস্থা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল শূন্য-কোভিড নীতির কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে।
শি জিন পিংয়ের ক্ষমতার প্রথম দশকটি ছিল প্রচলিত মতবিরোধী। আর এ কারণে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ রয়েছে। একদিকে তিনি অর্থনীতির ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ কঠোর করেছেন এবং প্রায়ই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের জন্য তার পছন্দ অনুযায়ী "শক্তিশালী, ভাল এবং বড়" উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের গুরুতর সংস্কার থেকে বিরত ছিলেন। আর এর মাধ্যমে তিনি প্রবৃদ্ধিকে টেনে ধরেছেন।
অন্যদিকে, চীনা উদ্যোক্তা এবং শ্রমিকদের কাজের গতিশীলতার জন্য গত এক দশকে বেসরকারি খাত চীনা অর্থনীতিতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছে। তবে আমরা এখন একটি টার্নিং পয়েন্টে থাকতে পারি যদি আগের গতিশীলতা আরও প্রভাবশালী হয়ে ওঠে।
২০২০ সালের শেষ নাগাদ চীনের সবচেয়ে বড় কোম্পানির রাজস্ব যেটি ফরচুন গ্লোবাল ৫০০ র্যাং কিং করেছে এবং সবচেয়ে মূল্যবান ১০০টি চীনা তালিকাভুক্ত কোম্পানির বাজারমূল্য প্রায় ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে।
বৃহৎ বেসরকারি-খাতের কোম্পানিগুলি এখন ই-কমার্স এবং হাই-টেক ম্যানুফ্যাকচারিংসহ পেট্রোকেমিক্যালস, যন্ত্রপাতি, টেক্সটাইল এবং অটোর মতো সেক্টরও বিস্তৃত পরিসরে বিদ্যমান রয়েছে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলির দিকে লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, শি জিন পিং ক্ষমতায় আসার পর থেকে এসব কোম্পানি উল্লেখযোগ্যভাবে ভালো অবস্থানে গিয়েছে। ২০১০ সালের শেষ থেকে ২০২১ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত শীর্ষ ১০০টি তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর মোট বাজার মূল্য ২০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে রাষ্ট্রীয় খাতের মোট মূল্য মাত্র ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
একই সময়ে, শীর্ষ ১০০ তালিকাভুক্ত চীনা কোম্পানির সামগ্রিক বেসরকারি খাতের শেয়ার বাজার মূল্য ৮ শতাংশ থেকে ৫৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা চীনের কর্পোরেট জগতের জন্য একটি বিস্ময়কর রূপান্তর।
কিন্তু ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে বেসরকারি-খাতের মূল্য আগের অবস্থার সম্পূর্ণ বিপরীতে চলে গেছে। তখন এবং সাম্প্রতিক ত্রৈমাসিক পর্যবেক্ষণে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে চীনের শীর্ষ ১০০টি বেসরকারি তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো তাদের বাজার মূল্যের অর্ধেকেরও বেশি হারিয়েছে। আর এর প্রধান কারণ হিসেবে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়াকে দায়ী করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় খাতেও সেই মূল্য হ্রাস পেয়েছে। তবে সেই পরিমাণটি অনেক কম। শীর্ষ ১০০ তালিকাভুক্ত চীনা কোম্পানির মধ্যে বেসরকারি খাতের বাজার-মূল্যের শেয়ারও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে ৫৫ শতাংশ থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে ৪১ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই হিসাবে চীনের শীর্ষস্থানীয় তালিকাভুক্ত কর্পোরেশনগুলোর মধ্যে বেসরকারি খাতের অবস্থান ২০১৯ সালের শেষের দিকে যেমন ছিল ঠিক তেমন অবস্থায় ফিরে গেছে।
ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্ম কোম্পানিগুলি সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত তালিকাভুক্ত বেসরকারি কোম্পানির মোট মূল্যের মাত্র ৪৪ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করেছে, যা ২০১৬ সালের শেষের দিকে ৭৩ শতাংশ ছিল।
সামগ্রিকভাবে ওপরের এই অনুসন্ধানগুলোতে ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে বেসরকারি খাতের বিপরীতমুখিতার বিষয় তুলে আনা হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক বেসরকারি-খাতের এ ধরণের পিছিয়ে পড়া অস্থায়ী বা স্থায়ী কিনা তা দেখার জন্য আরও অপেক্ষার প্রয়োজন।
নিবন্ধ লেখক: তিয়ানলেই হুয়াং পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক্স (পিআইআইই) এর গবেষণা ফেলো, নিকোলাস ভেরন (পিআইআইই এবং ব্রুগেলের সিনিয়র ফেলো।
তথ্যসূত্র: সাউথ চীনা মর্নিং পোস্ট